৫০০ কোটি টাকার চিনি গুদামে

অগ্রণী ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৫০০ কোটি টাকার চিনি আমদানি করেছিল চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন (বিএসএফআইসি)। প্রায় দুই বছর ধরে সে চিনি গুদামে পড়ে আছে। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে সরকারি প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি। কার স্বার্থে, কেন এই চিনি কেনা হয়েছে, সে প্রশ্ন তুলেছে সংসদীয় কমিটি।

গতকাল বুধবার জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত সভায় সংসদীয় কমিটি চিনি কেনার ঘটনা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি আ স ম ফিরোজ প্রথম আলোকে বলেন, ৫০০ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন কেন ও কার স্বার্থে এই চিনি আমদানি করেছিল, কমিটি সে ব্যাখ্যা চেয়েছে। তবে বৈঠকে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা এর কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারেননি। কমিটি এ ঘটনায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছে।

শিল্পসচিব আবদুল হালিম বৈঠকে তাৎক্ষণিকভাবে কিছু জানাতে পারেননি। খোঁজ নিয়ে কমিটিকে জানাবেন বলেছেন তিনি।

বিএসএফআইসির চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) আ শ ম ইমদাদুদ দস্তগীর গতকাল বুধবার এ বিষয়ে প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই চিনি আমদানি করা হয়েছিল আগের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সময়। তখন দেশে আখের চিনি কম উৎপাদিত হয়েছিল। সরকারের হাতে চিনি না থাকলে সিন্ডিকেট বাজার দর বাড়িয়ে দেবে, এই চিন্তায় আমদানি করা হয়েছিল।’ তিনি বলেন, ‘আগের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এ কে এম দেলোয়ার হোসেন এখনো পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁকে নিয়ে আমরা বৈঠক করব। তিনিই কারণ ভালো বলতে পারবেন।’ চেয়ারম্যান আরও জানান, মোট ১ লাখ ৫ হাজার টন চিনি আমদানি করা হয়েছিল। এর মধ্যে ৪৪ হাজার টনের মতো অবিক্রীত রয়েছে।

>সংসদীয় কমিটির ক্ষোভ
প্রায় দুই বছর ধরে গুদামে চিনি কেন পড়ে আছে তার সদুত্তর দিতে পারেনি চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন।

এদিকে বিএসএফআইসি সূত্রে জানা গেছে, মূলত পর্যাপ্ত উৎপাদন করতে না পারায় তারা ২০১৭ সালে এই চিনি আমদানি করেছিল। যদিও সংস্থাটির কাজ হলো দেশে উৎপাদিত আখ থেকে চিনি উৎপাদন করা। এমনিতে বিএসএফআইসিকে সুরক্ষা দিতেই সরকার চিনি আমদানিতে উচ্চ হারে শুল্ক আরোপ করে রেখেছে।

দেশে বছরে চিনির চাহিদা প্রায় ১৪ লাখ টন। দেশের বেসরকারি চিনি পরিশোধনকারী মিলগুলোর উৎপাদনক্ষমতা প্রায় ৩২ লাখ টন। আবার বিএসএফআইসির আওতায় থাকা চিনিকলগুলো অনেক পুরোনো হয়ে যাওয়ায় তাদের উৎপাদন খরচ অনেক বেশি। ফলে উৎপাদন করেই তাদের বিপুল পরিমাণ লোকসান দিতে হচ্ছিল। এ অবস্থায় চিনি আমদানি করে তাদের সংকট আরও বেড়ে গেছে।

লাভে মাত্র দুটি

গতকালের বৈঠকে জানানো হয় বিএসএফআইসি অধীনে থাকা ১৬টি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে লাভ করছে শুধু কেরু অ্যান্ড কোম্পানি ও রেনউইক যজ্ঞেশ্বর অ্যান্ড কোম্পানি। এর মধ্যে কেরু অ্যান্ড কোম্পানি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের ৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা এবং রেনউইক যজ্ঞেশ্বর ১ কোটি ৬ লাখ টাকা লাভ করেছে। অন্য ১৪টি প্রতিষ্ঠানই লোকসানে। অথচ ২০১২-১৩ অর্থবছরে কেরুর লাভ ছিল ২২ কোটি ৩২ লাখ টাকা।

বৈঠকে আরও জানানো হয়, চিনিকলগুলোতে আখচাষিদের বকেয়া পাওনা প্রায় ১৫০ কোটি টাকা। এর মধ্য আখচাষিরা পাবেন ১১৯ কোটি টাকা আর বীজ সরবরাহকারীরা পাবেন প্রায় ৩১ কোটি টাকা। কমিটি ঈদের আগেই আখচাষিদের পাওনা মিটিয়ে দিতে বলেছে।

বৈঠকে বেসরকারি চিনি কারখানা নিয়েও আলোচনা হয়। এ সময় বলা হয়, শর্ত অনুযায়ী তাদের ৫০ শতাংশ চিনি দেশের বাজারে এবং বাকি ৫০ শতাংশ দেশের বাইরে বিক্রি করার কথা। কিন্তু তা হচ্ছে না। তারা সব চিনি দেশের বাজারেই বিক্রি করছে। শর্ত ভঙ্গ করলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেছে সংসদীয় কমিটি।

আ স ম ফিরোজের সভাপতিত্বে কমিটির সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান, ইসমাত আরা সাদেক, নারায়ণ চন্দ্র চন্দ, মাহবুব উল আলম হানিফ, মির্জা আজম, মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম, মো. জিল্লুল হাকিম, মুহিবুর রহমান বৈঠকে অংশ নেন।