বগুড়ার বিএনপি অফিসে লাগানো তালা ভাঙল

জি এম সিরাজকে বগুড়া জেলা বিএনপির আহ্বায়ক করার প্রতিবাদে একাংশের নেতা–কর্মীরা দলীয় কার্যালয়ের সামনে আগুন ধরিয়ে প্রতিবাদ জানান। ছবি: সোয়েল রানা
জি এম সিরাজকে বগুড়া জেলা বিএনপির আহ্বায়ক করার প্রতিবাদে একাংশের নেতা–কর্মীরা দলীয় কার্যালয়ের সামনে আগুন ধরিয়ে প্রতিবাদ জানান। ছবি: সোয়েল রানা

বগুড়া জেলা বিএনপির নতুন আহ্বায়ক কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্ব কমছেই না। গোলাম মোহাম্মদ সিরাজকে (জি এম সিরাজ) আহ্বায়ক করে জেলা বিএনপির কমিটি ঘোষণার প্রতিবাদে একাংশের নেতা-কর্মীরা গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় দলীয় কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেন। এর তিন ঘণ্টা পর সিরাজপন্থী নেতারা তালা ভেঙে কার্যালয় দখলে নিয়েছেন।

গতকাল রাত ১১টার দিকে নতুন কমিটির দুই যুগ্ম আহ্বায়ক এ কে এম সাইফুল ইসলাম ও ফজলুল বারী তালুকদারের নেতৃত্বে সিরাজপন্থী নেতারা শহরের নওয়াববাড়ি সড়কের জেলা বিএনপির কার্যালয়ে সামনে সমবেত হন। পরে তাঁরা তালা ভেঙে কার্যালয় দখলে নেন।

এ সময় নতুন কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক এ কে এম সাইফুল ইসলাম বলেন, সামান্য কয়েকজন দুষ্কৃতকারী বিশাল জনসমর্থিত দল বিএনপির ঘাঁটি বগুড়ায় সাংগঠনিক কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। যাঁরা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক এবং আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যাঁরা এসব করছেন, তাঁরা কোনো পদধারী নেতা নন।

এ সময় আহ্বায়ক কমিটির অন্যতম সদস্য এবং জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি রেজাউল করিম বাদশা বলেন, ‘নতুন আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদনের মধ্য দিয়ে বগুড়াবাসীর দীর্ঘদিনের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটেছে। নেতা-কর্মীদের প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে। এ জন্য আমাদের প্রিয় নেতা তারেক রহমানকে বগুড়াবাসীর পক্ষ থেকে অভিনন্দন। এখন বগুড়া বিএনপির একটাই লক্ষ্য, খালেদা জিয়ার মুক্তি, তারেক রহমানকে দেশে ফেরানো, গণতন্ত্রের মুক্তি এবং রাজপথে সরকার পতনে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা।

জি এম সিরাজের বিরুদ্ধে সংস্কারপন্থীর অভিযোগ খণ্ডন করে নতুন কমিটির অন্যতম সদস্য আলী আজগর তালুকদার বলেন, সংস্কারপন্থী বলে কিছুই নেই। বিএনপির কান্ডারি, দলের সবচেয়ে ভবিষ্যৎ প্রিয় নেতা তারেক রহমান। তিনিই ভালো জানেন কোন নেতা কী করেন, কে কী করে খান। তারেক রহমান যেটা ভালো মনে করেছেন, সেভাবেই সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সেই সিদ্ধান্ত নেতা-কর্মীরা মেনে নিয়েছেন। যাঁরা তারেক রহমানের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছেন, তাঁরা দলের ভালো চান না। তাঁরা তারেক রহমানের নেতৃত্বের প্রতি অসম্মান প্রদর্শনের ধৃষ্টতা দেখাচ্ছেন, তাঁকে ছোট করছেন।

গতকাল বিকেলে বিএনপিতে একসময়ের সংস্কারপন্থী নেতা হিসেবে পরিচিত দলের সাবেক সাংসদ জি এম সিরাজকে আহ্বায়ক করে ৩১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির অনুমোদন দেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

এই কমিটি প্রত্যাখ্যান করে কাল রাত আটটার দিকে শহরের নওয়াববাড়ি সড়কে দলীয় কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন এবং নতুন কমিটির আহ্বায়ক জি এম সিরাজের কুশপুত্তলিকা দাহ করেন জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি সাইফুল ইসলাম-সমর্থিত নেতারা-কর্মীরা। পরে তাঁরা জি এম সিরাজকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে জেলা বিএনপি কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেন।

‘বিএনপির দুর্গ’খ্যাত বগুড়ায় গৃহদাহের ঘটনা নতুন নয়। ২০১২ সালের ২২ জানুয়ারি সাইফুল ইসলামকে সভাপতি এবং জয়নাল আবেদীনকে সম্পাদক করে জেলা বিএনপির কমিটি ঘোষণা দেওয়ার পর থেকেই দ্বিধাবিভক্ত নেতা-কর্মীরা। কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় ২৬ এপ্রিল কেন্দ্রীয় বিএনপি আহ্বায়ক কমিটি গঠনের নির্দেশ দেয়। কিন্তু ২৯ এপ্রিল বিবদমান দুই পক্ষ পাল্টাপাল্টি আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা দেয়। ওই দিন বগুড়া জেলা বিএনপির একাংশ তৎকালীন সভাপতি সাইফুল ইসলামকে আহ্বায়ক ও সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীনকে যুগ্ম আহ্বায়ক করে ৪৫ সদস্যের কমিটি এবং অন্য পক্ষ খালেদা জিয়াকে উপদেষ্টা ও বগুড়া পৌরসভার মেয়র এ কে এম মাহবুবর রহমানকে আহ্বায়ক এবং ফজলুল বারীসহ আরও চারজনকে যুগ্ম আহ্বায়ক করে ৩১ সদস্যের পাল্টা কমিটি ঘোষণা দেয়।

এ অবস্থায় ৪ মে বগুড়া জেলা বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

কমিটি নিয়ে এই বিতণ্ডার মধ্যে গতকাল বগুড়া জেলা বিএনপির ৩১ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়।

বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার
এদিকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বগুড়া জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মীর শাহে আলম এবং বগুড়া সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মাফতুন আহমেদ খানের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। বিগত উপজেলা নির্বাচনে দলীয় শৃঙ্খলাপরিপন্থী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল।

গতকাল মহাসচিব স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে জানানো হয়, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হলো।