ঢাকায় শিশু আবির অপহরণ মামলায় দুজনের মৃত্যুদণ্ড, আটজনের যাবজ্জীবন

চার বছর আগে ঢাকায় এক শিশুকে অপহরণের দায়ে দুজনের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই অভিযোগে আরও আট আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আর অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় খালাস পেয়েছেন দুই আসামি।

আজ বৃহস্পতিবার ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭–এর বিচারক খাদেম উল কায়েস এই রায় দেন। প্রথম আলোকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন ওই ট্রাইব্যুনালের পেশকার মতিউর রহমান।

মৃত্যুদণ্ড পাওয়া দুজন হলেন মশিউর রহমান মন্টু এবং মিজানুর রহমান ওরফে মিজান মাতুব্বর। এঁদের মধ্যে মিজানুর পলাতক।

যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আট আসামি হলেন সজীব আহম্মেদ, আলিম হোসেন চন্দন, রেজাউল করিম, নজরুল ইসলাম, আবদুল্লাহ আল মামুন, ইকবাল হোসেন শুভ, কাউছার মৃধা ও রেজা মৃধা।
খালাস পাওয়া দুই আসামি হলেন জহিরুদ্দিন বাবর ও শাহ অলিউল্লাহ। দণ্ডপ্রাপ্ত আটজনের মধ্যে কাউসার ও রেজা পলাতক।

মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণী থেকে জানা যায়, ২ কোটি টাকা মুক্তিপণ দিয়ে আট বছর বয়সী অপহৃত ছেলেকে ফিরে পান তৈরি পোশাক ব্যবসায়ী বাবা। ২০১৫ সালের ২ মে শিশুটি গাড়িতে করে মাদ্রাসা থেকে ফেরার পথে বনানী উড়ালসড়কের নিচে অপহরণকারীরা তিনটি গাড়ি নিয়ে ওই গাড়ির গতিরোধ করে। নিজেদের একটি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য পরিচয় দিয়ে শিশুটি, ওই গাড়ির চালক ও শিশুটির তত্ত্বাবধানকারীকে নিজেদের গাড়িতে তুলে নেয় অপহরণকারীরা।

প্রথমে শিশুটিকে তারা আশ্বস্ত করে যে তারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, অপরাধীদের হাত থেকে তাকে রক্ষা করতে এসেছে। এরপর শিশুটিকে নিয়ে তারা পল্লবীর ভাড়া বাসায় যায়। পরিস্থিতি বুঝতে পেরে শিশুটি কাঁদতে থাকে। অপহরণকারীরা শিশুটির বাবাকে ফোন করে তার কান্নার শব্দ শোনায়। শিশুটির মুক্তিপণ হিসেবে ১০ কোটি টাকা দাবি করে অপহরণকারীরা। শুরু হয় দর-কষাকষি। ওই রাতেই শিশুটিকে বহনকারী গাড়িটি ৩০০ ফুট (পূর্বাচল) সড়কে গাড়ির চালক ও তত্ত্বাবধানকারীসহ বিমানবন্দর এলাকায় ফেলে রেখে আসে অপহরণকারীরা।

অপহরণের ১২ দিন পর অভিযান চালিয়ে ওই অপহরণে জড়িত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছিল র‍্যাব। মুক্তিপণের টাকার মধ্যে ১ কোটি ৮০ লাখ ৬৫ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।

র‍্যাব সদর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলন করে তখন জানায়, টিএনজেড গ্রুপের মালিক শাহাদাত হোসেনের ছেলে আবিরকেই অপহরণ করেছিল অপহরণকারীরা।

র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান তখন বলেছিলেন, শিশু আবির উত্তরার একটি মাদ্রাসায় পড়ে। তাকে অপহরণের জন্য প্রায় চার মাস ধরে পরিকল্পনা, প্রস্তুতি ও তথ্য সংগ্রহ করেছিল অপহরণকারীরা। এ জন্য পল্লবীতে একটি বাসাও ভাড়া করা হয়। তারা নিয়মিত শিশুটির গতিপথ অনুসরণ করে। যে মাদ্রাসায় শিশুটি পড়ে সেই মাদ্রাসায় পরিচিত একজনের বাচ্চাকে ভর্তিও করে অপহরণকারীরা। এ ছাড়া অপহরণকারীদের সঙ্গে যুক্ত টিএনজেড গ্রুপের তিন কর্মী বিশেষ করে গাড়িচালক রেজাউল নিয়মিত তথ্য দিতেন।

র‍্যাব জানিয়েছিল, চার দিন দর-কষাকষির পর ২ কোটি টাকায় রফা হয়। ৬ মে তিনটি ব্যাংকের মাধ্যমে ১ কোটি ৭৩ লাখ টাকা অপহরণকারীদের ব্যাংক হিসেবে স্থানান্তর করেন শাহাদাত হোসেন। ওই দিন সন্ধ্যায় হোটেল র‌্যাডিসনের সামনে ২৭ লাখ নগদ টাকা নিয়ে নিজেই অপহরণকারীদের দেন তিনি। এরপর একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় আসা অপহরণকারীরা শিশু আবিরকে তার বাবার কাছে বুঝিয়ে দেয়। ব্যবসায়ী তাঁর সন্তানকে ফিরে পাওয়ার পর অপহরণকারীদের ধরতে তৎপরতা শুরু করে র‍্যাব। র‍্যাব বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে ব্যাংক হিসাব থেকে অপহরণকারীদের টাকা তোলার সুযোগ বন্ধ করে দেয়। তাদের আটকের পর মিজানুরকে নিয়ে ব্যাংক থেকে ওই টাকা তোলা হয়। প্রসঙ্গত, এই মিজানুর জালিয়াতির মাধ্যমে ছাড়া পান। এরপর থেকে তিনি পলাতক।

মুফতি মাহমুদ খান জানিয়েছিলেন, আটক হওয়া টিএনজেড গ্রুপের গাড়িচালক রেজাউল জানান, আটক মিজানুর তাঁদের নেতা। বিভিন্ন সময় রেজাউল তাঁর গাড়িতে করে টাকা আনা-নেওয়া করতেন। মিজানুর সেই টাকা ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করেন। পরে তাঁদের মনে হয় যে মালিকের ছেলেকে অপহরণ করলে আরও বেশি টাকা পাওয়া যাবে। সেই ধারণা থেকে তাঁরা পরিকল্পনা শুরু করেন।