পাবনায় শিক্ষককে মারধরের ঘটনায় ২ যুবক গ্রেপ্তার

শিক্ষকের ওপর কয়েকজন যুবকের হামলা। ছবি ভিডিও থেকে স্ক্রিনশট নেওয়া
শিক্ষকের ওপর কয়েকজন যুবকের হামলা। ছবি ভিডিও থেকে স্ক্রিনশট নেওয়া

পাবনায় পরীক্ষা চলাকালে খাতা দেখে লিখতে না দেওয়ায় কলেজশিক্ষক মাসুদুর রহমানকে মারধরের ঘটনায় করা মামলায় বৃহস্পতিবার দুই যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

গ্রেপ্তার দুই যুবক হলেন ঈশ্বরদী উপজেলার গকুলনগর গ্রামের সজল ইসলাম (২২) ও জেলা সদরের মালঞ্চি গ্রামের শাফিন শেখ (২১)। পুলিশ বলছে, গ্রেপ্তার এই দুই যুবক কলেজের কেউ নন, তাঁরা বহিরাগত বখাটে।

পাবনা সরকারি শহীদ বুলবুল কলেজের বাংলা বিভাগের প্রভাষক মাসুদুর রহমানের ওপর হামলা, মারধর ও লাঞ্ছনার ঘটনায় বুধবার রাতে মামলা করা হয়। কলেজটির অধ্যক্ষ এস এম আবদুল কুদ্দুস হয়ে বাদী মামলাটি করেন। মামলায় দুজনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরও তিন-চার জনকে আসামি করা হয়েছে।

এ দিকে বৃহস্পতিবার দুপুরে জেলা শহরের আবদুল হামিদ সড়কে মানববন্ধন করেছে বিসিএস শিক্ষক সমিতি পাবনা জেলা শাখা। মানববন্ধন থেকে শিক্ষকদের নিরাপত্তা ও ঘটনার মূল হোতাদের গ্রেপ্তার দাবি করা হয়েছে। এই ঘটনায় ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠায় জেলা ছাত্রলীগ সরকারি শহীদ বুলবুল কলেজ শাখা ছাত্রলীগের কমিটি স্থগিত করে পাঁচ সদস্যর তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।

এ বিষয়ে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শিবলী সাদিক প্রথম আলোকে বলেন, ‘ছাত্রলীগ সব সমালোচনার ঊর্ধ্বে থাকতে চায়। যেহেতু ঘটনায় ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, সেহেতু আমরা কমিটি স্থগিত করে তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

কলেজের একাধিক শিক্ষক জানান, তাঁদের সহকর্মীর ওপর হামলা, মারধর ও লাঞ্ছনার ঘটনার পর থেকে শিক্ষকেরা বিভিন্ন কারণে মুখ খুলতে পারছিলেন না। তাঁরা অসহায় বোধ করছিলেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে সিসিটিভির ভিডিও ফুটেজ ছড়িয়ে পড়লে দেশব্যাপী এক প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। এতে শিক্ষকেরা মনে শক্তি পান। পরে বুধবার সন্ধ্যায় বুলবুল কলেজের শিক্ষক সমিতি ও বিসিএস শিক্ষক সমিতি পাবনা জেলা শাখা পৃথক বৈঠক করে। বৈঠক থেকে মামলা করার ও প্রতিবাদ কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত হয়।

ওই ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে বিসিএস শিক্ষক সমিতি পাবনা জেলা শাখাসহ পাবনায় কর্মরত শিক্ষকেরা। বেলা দুইটায় শহরের আবদুল হামিদ সড়কে মানববন্ধন করেছেন তাঁরা। এতে বিসিএস শিক্ষক সিমিতি পাবনা জেলা শাখার সভাপতি শহিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন সমিতির সদস্য শিক্ষক মাহবুব আলম, নূরে আলম, শাহিনুর রহমান, রাজু আহম্মেদ ও হামলার শিকার শিক্ষক মাসুদুর রহমান।

শিক্ষক মাসুদুর রহমান বলেন, ‘আমার ওপর কেন হামলা হয়েছে, কীভাবে হামলা হয়েছে, কারা হামলা করেছে, এর সবই ভিডিও ফুটেজে পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে। কিন্তু বিভিন্ন ভয়ভীতির কারণে আমি কিছু বলতে পারছি না। আমাকে প্রতিনিয়ত নজরদারিতে রাখা হয়েছে। তাই একজন শিক্ষকের ওপর হামলা যদি রাষ্ট্রের কাছে অসম্মানের হয়, তবে আশা করি রাষ্ট্র এর বিচার করবে। ভিডিও ফুটেজ দেখে আসামিদের গ্রেপ্তার করবে।’

বিসিএস শিক্ষক সিমিতি পাবনা জেলা শাখার সদস্য মাহবুব আলম বলেন, ‘একজন শিক্ষকের শরীরে লাথি দেওয়া মানে পুরো জাতির শরীরে লাথি দেওয়া। এর যদি সঠিক বিচার না হয়, তবে এই কলঙ্ক জাতির ঘাড়েই পড়বে। অতএব আমরা অবিলম্বে ঘটনার মূল হোতাদের গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।’

সভাপতির বক্তব্যে শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। সেই সঙ্গে প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানাই, কোনো আড়াল নয়, যাঁরা ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তাঁদের গ্রেপ্তার করতে হবে। অন্যথায় আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।’

এ বিষয়ে পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গৌতম কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনায় কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না। আমরা ইতিমধ্যে দুজনকে গ্রেপ্তার করেছি। অন্য যারা জড়িত আছে, তাদের সবাইকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হবে।’

প্রসঙ্গত, প্রভাষক মাসুদুর রহমান গত ৬ মে এইচএসসি পরীক্ষায় পরিদর্শকের দায়িত্বে ছিলেন। পরীক্ষা চলাকালে দুই ছাত্রী একে অপরের খাতা দেখার চেষ্টা করলে তিনি বাধা দেন। বিষয়টি নিয়ে বাগ্‌বিতণ্ডার একপর্যায়ে দুই ছাত্রীর খাতা নিয়ে নেন তিনি। এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ হন দুই ছাত্রী। এর জের ধরে ১২ মে কলেজ ফটকে তাঁর ওপর হামলা চালানো হয়। ওই দিন মাসুদুর রহমান মোটরবাইকে করে কলেজ থেকে বের হওয়ার পথে কলেজের প্রধান ফটকে তাঁকে থামানো হয়। এর কিছুক্ষণের মধ্যে কয়েকজন যুবক তাঁর ওপর হামলে পড়ে এলোপাতাড়ি চড়-থাপ্পড় দিতে থাকেন। এরপর একজন পেছন থেকে এসে তাঁকে লাথি মারেন। আর এই ঘটনার ভিডিও ফুটেজ অনলাইনে ছড়িয়ে পড়লে বিভিন্ন মহল থেকে দোষীদের শাস্তির দাবি জোরালো হয়।