বিচারাধীন মামলার সংবাদ পরিবেশনে বিরত থাকতে হাইকোর্ট প্রশাসনের বিজ্ঞপ্তি, সাংবাদিকেরা মর্মাহত

সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের প্রশাসন ‘বিচারাধীন মামলা সংক্রান্ত বিষয়ে সংবাদ পরিবেশন হতে বিরত থাকার’ অনুরোধ জানিয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে হাইকোর্ট বিভাগের রেজিস্ট্রার মো. গোলাম রব্বানীর সই করা ওই বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়।

সন্ধ্যায় ওই বিজ্ঞপ্তি প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়ে উচ্চ আদালতে সাংবাদিকদের সংগঠন ল’রিপোর্টার্স ফোরাম (এলআরএফ) প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনকে চিঠি দিয়েছে। এতে হাইকোর্ট প্রশাসনের বিজ্ঞপ্তিতে ‘সাংবাদিকেরা ব্যথিত ও মর্মাহত’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার সকালে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চের ‘অস্বাভাবিক আদেশে’র বিষয়ে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের আপিল বিভাগে অভিযোগ করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। এ সময় অ্যাটর্নি জেনারেল সংশ্লিষ্ট হাইকোর্ট বেঞ্চের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে বিষয়টি রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের কাছে পাঠানোরও পরামর্শ দেন।

আজ বিকেলে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ প্রশাসন থেকে ওই বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। এতে বলা হয়, ‘ইদানীং লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, কোনো কোনো ইলেকট্রনিক মিডিয়া তাদের চ্যানেলে এবং কোনো কোনো প্রিন্ট মিডিয়া তাদের পত্রিকায় বিচারাধীন মামলা সংক্রান্ত বিষয়ে সংবাদ পরিবেশন/স্ক্রল করছে, যা একেবারেই অনভিপ্রেত। এমতাবস্থায়, বিচারাধীন কোনো বিষয়ে সংবাদ পরিবেশন/স্ক্রল করা হতে বিরত থাকার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।’ ওই বিজ্ঞপ্তি এলআরএফ-এর দপ্তরে পৌঁছালে কর্মরত সাংবাদিকদের মধ্যে সংবাদ প্রকাশে বিভ্রান্তি দেখা দেয়। এরপর সন্ধ্যায় প্রধান বিচারপতিকে চিঠি দেয় এলআরএফ।

এলআরএফ সভাপতি ওয়াকিল আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক নাজমুল আহসান স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়, কয়েক দশক ধরে সাংবাদিকেরা বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা, জেল হত্যা মামলা ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মামলার শুনানিতে উপস্থিত থেকে প্রতিবেদন লিখে আসছেন। এতে করে দেশের মানুষ মামলার খুঁটিনাটি বিষয় জেনে আসছিল। এর মাধ্যমে বিচার বিভাগের স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠায় সহায়ক ভূমিকা রেখে আসছে গণমাধ্যম। গত ৯ এপ্রিল প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন এলআরএফ নেতৃবৃন্দর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে বলেছিলেন, ‘আদালতে যা দেখবেন তাই লিখবেন।’

চিঠিতে আরও বলা হয়, আজকে দেওয়া হাইকোর্ট প্রশাসনের বিজ্ঞপ্তি প্রধান বিচারপতির ওই বক্তব্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক এবং স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিপন্থী। তা ছাড়া বিচারাধীন (সাব-জুডিশ) বিষয়ে খবর প্রকাশে সাংবাদিকেরা সব সময় রীতিনীতি অনুসরণ করেই রিপোর্টিং করে আসছেন।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী এবং বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ অর্থঋণ আদালত সংক্রান্ত এক রিট মামলায় ৩৭, দিলকুশার এম আর ট্রেডিং কোম্পানির (মিজানুর রহমানের মালিকানাধীন) অনুকূলে একটি আদেশ দেন। ওই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে যায় ন্যাশনাল ব্যাংক লি. । আপিল বিভাগ আজ সকালে হাইকোর্ট বিভাগের ওই আদেশ নাকচ করে বিষয়টি নিষ্পত্তি করেন।