উজাড় হচ্ছে রসুলপুরের শালবন

ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলার রসুলপুরের শালবন উজাড় হচ্ছে। বিস্তৃত বনভূমির বড় অংশের গাছ কেটে সাবাড় করার পর তাতে আবাদ হচ্ছে লেবু, কলা, আম আর আনারস। উঠছে বাড়িঘর।

দুর্বৃত্তরা শালবনের গাছ কেটে নিচ্ছে। জনবল-সংকটে তাদের দমন করা যাচ্ছে না বলে দাবি বন বিভাগের। তাই দুর্বৃত্তদের নামে মামলা করেই দায় সারছে বন বিভাগ।

বনের ১০ কিলোমিটার অংশের মধ্যে করাতকল স্থাপন করার নিয়ম না থাকলেও রসুলপুর এলাকার আশপাশে বেশ কিছু করাতকল গড়ে উঠেছে। গহিন বনের ভেতরেও একাধিক করাতকল রয়েছে বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের সূত্রে জানা গেছে। বন বিভাগের অসাধু কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশ করে এসব করাতকল গড়ে উঠছে বলে অভিযোগ। এসব কারণে গত দুই দশকের বেশি সময় ধরে উজাড় হচ্ছে বন।

টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার বিশাল শালবনের কিছু অংশ পড়েছে ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলার রসুলপুর এলাকায়। বন বিভাগের দেওয়া তথ্যমতে, জেলার মোট সংরক্ষিত বনভূমি ২২ হাজার ৬৮০ একর। এর মধ্যে প্রায় ১৬ হাজার একর হচ্ছে রসুলপুরের শালবন।

সম্প্রতি রসুলপুর এলাকার বিস্তীর্ণ শালবন এলাকায় দেখা যায়, গহিন বনের ভেতর একটু পরপর কলা, আম, লেবু ও আনারসের বাগান। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বনভূমি কেটে এসব বাগান করার শুরু কমপক্ষে ৫০ বছর আগের। এখনো এই প্রক্রিয়া চলছে। বনের ভেতর দিয়ে চলার সময় রাজাবাজার এলাকায় দা হাতে কয়েকজনকে দেখা যায়। গ্রামের কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এলাকার বেশির ভাগ পুরুষ সব সময় দা সঙ্গে নিয়ে চলাফেরা করেন। চলাফেরার ফাঁকে ফাঁকে সুযোগ পেলেই বনের গাছ কাটেন। পরে সেসব গাছ জড়ো করে আশপাশের করাতকলে নিয়ে বিক্রি করেন।

অভিযোগ, রসুলপুর এলাকায় সামাজিক বনায়নের নামেও উজাড় হচ্ছে শালবন। সামাজিক বনায়নের মাধ্যমে ১০ বছরের চুক্তিতে বনের জায়গায় গাছ লাগাচ্ছেন স্থানীয় লোকজন। পরে সামাজিক বনায়নের গাছ বিক্রির সময় কৌশলে বনের গাছও কাটা হয়। এভাবেই দিনের পর দিন গাছ কেটে নেওয়ায় উজাড় হচ্ছে বন।

মুক্তাগাছার কাঠবওলা বাজারে কথা হয় প্রবীণ ব্যক্তিত্ব আবুল কালামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আজ থেকে ৫০ বছর আগে বনের ঘনত্বের কারণে এলাকায় সন্ধ্যার পর মানুষ আসতে পারত না। এখন বাজারের আশপাশ এলাকায় কোনো গাছই নেই।’

>ময়মনসিংহ জেলার মোট সংরক্ষিত বনভূমি ২২ হাজার ৬৮০ একর
এর মধ্যে প্রায় ১৬ হাজার একর বনভূমি হচ্ছে শালবন
১৫ বছরে বনের জমি দখল ও গাছ কাটার অভিযোগে ১৫২১টি মামলা
বাগান করার শুরু কমপক্ষে ৫০ বছর আগে

বন বিভাগের সূত্র জানায়, বনের গাছ কাটা ও জমি দখলের অভিযোগে বন বিভাগ প্রতিনিয়ত মামলা করছে। তবে মামলায় গ্রেপ্তার হয় খুব কমসংখ্যক আসামি। গত ১৫ বছরে ময়মনসিংহে বনের জমি দখল ও গাছ কাটার অভিযোগে ১ হাজার ৫২১টি মামলা হয়েছে। রসুলপুর শালবনের আশপাশে বসবাস করা বেশির ভাগ পুরুষই বন বিভাগের মামলার আসামি।

বন বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, বন বিভাগের বিট কার্যালয়গুলো সাধারণত বনের ভেতরে। একজন কর্মকর্তা কোনো ধরনের নিরাপত্তাব্যবস্থা ছাড়াই চাকরি করেন। এ কারণেই দুর্বৃত্তদের সঙ্গে মিলেমিশে থাকতে হয়। দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে কোনো কঠোর ব্যবস্থা নিলে চাকরি করা অনিরাপদ হয়ে যায়। এ সুযোগে দুর্বৃত্তরাও নিজেদের ইচ্ছামতো বনের গাছ কেটে নিচ্ছে।

ময়মনসিংহ বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এ কে এম রুহুল আমিন বলেন, বন উজাড় হওয়ার বিষয়টি দীর্ঘদিনের অভিযোগ। তবে এ-সংক্রান্ত কোনো পরিসংখ্যান তাঁদের কাছে নেই। যারা বনের গাছ কেটে নিচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি বনের ভেতর বা আশপাশে যেসব করাতকল রয়েছে, সেগুলোর বিরুদ্ধেও মাঝেমধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। বনভূমি রক্ষায় বন বিভাগ কাজ করে যাচ্ছে।

দুর্বৃত্তদের সঙ্গে বন বিভাগের কর্মকর্তাদের যোগসাজশের অভিযোগের বিষয়ে রুহুল আমিন বলেন, এ ধরনের অভিযোগ পাওয়া গেলে তদন্ত সাপেক্ষে বন বিভাগ অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে।