ঢাকার যেসব এলাকার পানি বেশি ময়লা

গ্লাসে শরবত নয়, ওয়াসার পানি। রাজধানীর পূর্ব জুরাইনের পাটেরবাগ এলাকার পানিতে ময়লা। গতকাল দুপুরে।  ছবি: হাসান রাজা
গ্লাসে শরবত নয়, ওয়াসার পানি। রাজধানীর পূর্ব জুরাইনের পাটেরবাগ এলাকার পানিতে ময়লা। গতকাল দুপুরে। ছবি: হাসান রাজা

ঢাকা ওয়াসার ১০টি জোনের ৫৯ এলাকার পানিতে ময়লা পানির প্রবণতা বেশি। সরকারি এই সংস্থা গত তিন মাসে ময়লা পানির অভিযোগের তালিকা বিশ্লেষণ করে এমন তথ্য পেয়েছে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের পক্ষে গতকাল বৃহস্পতিবার হাইকোর্টে দাখিল করা প্রতিবেদনে এমন তথ্য রয়েছে।

বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে প্রতিবেদনটি দাখিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। শুনানিকালে আদালত বলেছেন, শতভাগ বিশুদ্ধ পানি গ্রাহকের বাসা পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়া ওয়াসার দায়িত্ব।

ঢাকা ওয়াসার সরবরাহ করা বাসাবাড়ির ট্যাপের পানি পরীক্ষা করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল-সংক্রান্ত কমিটির আহ্বায়ক ও স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (পাস) জহিরুল ইসলাম বরাবর ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খান ১৩ মে প্রতিবেদনটি পাঠান।

অভিযোগের তালিকা বিশ্লেষণ করে যেসব এলাকায় ময়লা পানি পাওয়ার প্রবণতা বেশি লক্ষ করা যায় সেসব এলাকা হচ্ছে: যাত্রাবাড়ী, বাসাবো, মুগদা, রাজারবাগ, কুসুমবাগ, জুরাইন, মানিকনগর, মান্ডা, দোলাইরপাড় ও মাতুয়াইল, ভাগলপুর, লালবাগ, বকশীবাজার, শহীদনগর, জিগাতলা, ধানমন্ডি, শুক্রাবাদ, কলাবাগান, ভূতের গলি, মোহাম্মদপুর, শেওড়াপাড়া, পীরেরবাগ, মণিপুর, পাইকপাড়া, কাজীপাড়া, মিরপুর, মহাখালী, তেজগাঁও, সিদ্ধেশ্বরী, শাহজাহানপুর, খিলগাঁও, মগবাজার, নয়াটোলা, রামপুরা, মালিবাগ, পরিবাগ, কদমতলী, দনিয়া, শ্যামপুর, রসুলবাগ, মেরাজনগর, পাটেরবাগ, শনিরআখড়া, কোনাপাড়া, মুসলিম নগর, বাড্ডা, আফতাবনগর, বসুন্ধরা, ভাটারা, উত্তরা, খিলক্ষেত, ফায়েদাবাদ, মোল্লারটেক, রানাভোলা, কাফরুল, কচুক্ষেত, পল্লবী। অভিযোগ পাওয়ার পর পাইপলাইনের লিকেজ মেরামত করে ময়লা পানির অভিযোগ নিরসন করা হয় বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

‘অনিরাপদ পানি পান করছে সাড়ে সাত কোটি মানুষ’ শিরোনামে গত বছরের ১২ অক্টোবর প্রথম আলোতে একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়। এ নিয়ে গণমাধ্যমে আসা প্রতিবেদন যুক্ত করে নিরাপদ পানি সরবরাহ নিশ্চিতে সংশ্লিষ্টদের নিষ্ক্রিয়তা চ্যালেঞ্জ করে ওই বছরের ১৪ অক্টোবর রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তানভীর আহমেদ। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত বছরের ৬ নভেম্বর রুলসহ অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ দেন আদালত। রাজধানী ঢাকায় পাইপের মাধ্যমে সরবরাহ করা ওয়াসার পানির মান পরীক্ষায় চার সদস্যের কমিটি গঠন করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। কমিটিতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, আইসিডিডিআরবি, বুয়েট ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগের একজন করে প্রতিনিধি রাখতে বলা হয়। কমিটিকে দুই মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। এর ধারাবাহিকতায় গতকাল বিষয়টি শুনানির জন্য ওঠে।

আদালতে স্থানীয় সরকারের পক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন। রিটের পক্ষে আবেদনকারী আইনজীবী তানভীর আহমেদ নিজে শুনানি করেন। ওয়াসার পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী এ এম মাছুম।

গতকাল শুনানিতে গঠিত কমিটির কার্যক্রম নিয়ে প্রতিবেদন তুলে ধরেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন। এতে বলা হয়, ১৪ মে কমিটির তৃতীয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বুয়েটের ব্যুরো অব রিসার্চ টেস্টিং অ্যান্ড কনসালটেশন (বিআরটিসি), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও আইসিডিডিআরবির ল্যাবে পানির বিভিন্ন প্যারামিটারে মূল্যহার একীভূত করে মোট বাজেট সংযুক্ত করা হয়েছে।

শুনানিতে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, সারা ঢাকা শহরের ১১টি জোনের মধ্য থেকে ১০টি জোন থেকে পাওয়া অভিযোগের ভিত্তিতে মোট ১ হাজার ৬৫টি নমুনা সংগ্রহ করা হবে। তিনটি ল্যাবরেটরির প্রতিটিতে ৩৫৫টি নমুনা রোগজীবাণু ও ভৌত রাসায়নিক-সংক্রান্ত পরীক্ষা করতে মোট ৭৫ লাখ ৬১ হাজার ৫০০ টাকা খরচ হবে। প্রতিবেদন উপস্থাপনের পর আদালত এ বিষয়ে মতামত দিতে কমিটির সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান সাবিতা রিজওয়ানা রহমানকে ২১ মে আদালত আসতে বলেছেন। ব্যয় সংকোচন করে স্বল্প সময়ে অল্প নমুনা পরীক্ষা করে কীভাবে ফলপ্রসূ ফল পাওয়া যেতে পারে, সে বিষয়ে মতামত দিতে সাবিতা রিজওয়ানা রহমানকে সেদিন আসতে বলা হয়েছে বলে জানান ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল।