ঐতিহ্যের মেজবানের মাংস

ইফতারের জন্য বিক্রি হচ্ছে মেজবানের মাংস। গতকাল বেলা সাড়ে তিনটায় চট্টগ্রামের  চৌমুহনী এলাকায়।  ছবি: প্রথম আলো
ইফতারের জন্য বিক্রি হচ্ছে মেজবানের মাংস। গতকাল বেলা সাড়ে তিনটায় চট্টগ্রামের চৌমুহনী এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো

ইফতারে প্রতিদিন একই খাবার খেতে চান না অনেকেই। মাঝেমধ্যে স্বাদের ভিন্নতা আনতে চান। এ ক্ষেত্রে পছন্দনীয় হতে পারে চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী মেজবানের মাংস।

গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে তিনটায় নগরের চৌমুহনীর পীরবাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, অস্থায়ী দোকানগুলোর টেবিলে সাজানো ছোট-বড় প্লাস্টিকের বাটি। টেবিলের পাশে চুলায় বড় ও মাঝারি আকারের দুটি হাঁড়ি। বড়টিতে মেজবানের মাংস। অন্যটিতে চনার ডাল। বিশেষ কায়দায় রান্না করা এই মাংসের রয়েছে আলাদা সৌরভ।

কথা বলে জানা গেছে, তাঁরা কেউ পেশাদার বিক্রেতা নন। রমজান এলেই পারিবারিক ঐতিহ্য ধরে রাখতে মেজবানের মাংস বিক্রি করেন। প্রায় ২০ বছর আগে পীরবাড়ির মানুষেরা রোজাদারদের তৃপ্তির জন্য এই আয়োজন শুরু করেছিলেন। এখন এর সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে নগরের নানা প্রান্তে।

পীরবাড়ির দোকানের মেজবানের মাংস বিক্রি তদারক করছিলেন আলিফ মাহমুদ। তিনি বলেন, ১৯৯৮ সালে তাঁদের বাবা-চাচারা মিলে রমজানে মেজবানের মাংস বিক্রি শুরু করেন। এই ঐতিহ্য এখনো ধরে রেখেছেন তাঁরা। চাকরি, ব্যবসা আর পড়াশোনার পাশাপাশি রমজান এলে এই কাজ করেন।

সাধারণভাবে রান্না করা গরুর মাংসের সঙ্গে মেজবানের মাংসের স্বাদের পার্থক্যের রহস্য পুরোটা ভাঙতে চাইলেন না বাবুর্চি আবদুল খালেকের সহকারী সাইদুর রহমান। তবে এটুকু জানালেন, খাঁটি সরিষার তেলে রান্না করা এই মাংসে অন্যান্য মসলার সঙ্গে নারকেল, সরিষা, বাদামবাটা ব্যবহার করা হয়।

গতকাল বিকেলে মাংস নিতে আসেন নগরের মিস্ত্রিপাড়ার আইনজীবী সাজ্জাদ হোসেন। তিনি বলেন, ইফতারে স্বাদের পরিবর্তন আনতে প্রায়ই মেজবানের মাংস নেন তিনি। পরিবারের সবাই পছন্দ করে।

চৌমুহনীর একেকটি দোকানে প্রতিদিন ৭০ থেকে ৮০ কেজি মেজবানের মাংস এবং ৪০ কেজি চনার ডাল বিক্রি হয়। প্রতি কেজি মাংসের দাম ৬৮০ টাকা ও চনার ডাল ১৮০ টাকা। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে মাংস রান্নার প্রস্তুতি শুরু হয়। রান্না শেষ হয় দেড়টা থেকে দুইটার মধ্যে। এর মধ্যেই ক্রেতারা দাঁড়িয়ে যান মাংস কেনার জন্য। বৃহস্পতি ও শুক্রবার বেড়ে যায় বেচাবিক্রির পরিমাণ।

কেবল চৌমুহনী নয়, নগরের প্রায় সব এলাকায় ছোট-বড়, নামীদামি সব দামি রেস্তোরাঁয় পাওয়া যায় মেজবানের মাংস। নগরজুড়ে
অস্থায়ী দোকান খুলেও বিক্রি করা হয় ঐতিহ্যের এই মাংস।