আলুটিলা গুহায় 'এত্তা জঞ্জাল'

আলুটিলা গুহার ভেতর পড়ে আছে মশাল। ছবি: জয়ন্তী দেওয়ান
আলুটিলা গুহার ভেতর পড়ে আছে মশাল। ছবি: জয়ন্তী দেওয়ান

আলুটিলা গুহায় ঢুকতেই চোখ আটকে যায় পরিত্যক্ত কয়েকটি মশালের দিকে। সেগুলোতে তখনো জ্বলছে আগুন। গুহা অন্ধকার। তাই পর্যটকেরা সেখানে মশাল নিয়ে ঢোকেন। গুহার ভেতরে ঢুকেও চোখে পড়ল মশালের স্তূপ। মশালে ব্যবহৃত কেরোসিনের গন্ধে ভার হয়ে আছে চারদিক। গুহার ভেতরে নানা জায়গায় ধোঁয়ার কালো আবরণ।

খাগড়াছড়ির আলুটিলা পর্যটনকেন্দ্রের অন্যতম আকর্ষণ প্রাকৃতিক গুহা। এটি দেখতে আসেন প্রতিদিন কয়েক শ পর্যটক। তবে এ গুহা দেখতে আসা পর্যটকদের ব্যবহৃত মশালসহ নানা আবর্জনায় সৌন্দর্য হারাচ্ছে স্থানটি।

পর্যটনকেন্দ্রের সূত্রে জানা যায়, প্রায় ৩৫০ ফুট দৈর্ঘ্যের ঘুটঘুটে অন্ধকার পাথরের গুহার এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে যেতে সময় লাগে ১০ থেকে ১৫ মিনিট। এ সময় পর্যটকেরা কেরোসিনের মশাল ব্যবহার করে থাকেন।

খাগড়াছড়ি সদর থেকে ৭ কিলোমিটার দূরে খাগড়াছড়ি-চট্টগ্রাম সড়কের পাশে আলুটিলা গুহা। সম্প্রতি সেই গুহায় গিয়ে চোখে পড়ল নোংরা আর আবর্জনা। এসব আবর্জনা সৌন্দর্য নষ্ট করছে প্রাকৃতিক এই গুহার।

গুহার ভেতর দিয়ে বয়ে গেছে একটি ঝিরি। ঝিরির পানির সঙ্গে মিশে যাচ্ছে মশালের কেরোসিন। পাথরের গায়ে পর্যটকেরা খোদাই করেছেন নানা রকম আঁকাআঁকি। পর্যটকেরা গুহা পরিদর্শনের সময় বিভিন্ন জায়গায় ফেলে রেখে গেছেন চিপসের প্যাকেট, প্লাস্টিকের বোতলসহ নানা আবর্জনা।

গুহার ভেতরের পাথর খোদাই করা হয়েছে। ছবি: জয়ন্তী দেওয়ান
গুহার ভেতরের পাথর খোদাই করা হয়েছে। ছবি: জয়ন্তী দেওয়ান

আলুটিলা পর্যটনকেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ক কোকনাট ত্রিপুরা বলছিলেন, দুই দিন পরপর গুহার ভেতরে পরিষ্কার করা হয়। কিন্তু পর্যটকেরা সচেতন না হওয়ার কারণে প্রতিদিন ময়লা–আবর্জনা জমে যাচ্ছে।

এসব আবর্জনা পর্যটকদের জন্য নানা ঝুঁকিও তৈরি করছে।

ঢাকা থেকে ঘুরতে আসা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ফজলুল হক বলেন, অনেক পরিকল্পনা করে দল বেঁধে এসেছেন গুহা দেখতে। কিন্তু গুহা থেকে বের হওয়ার সময় ভাঙা মশালে এক সহকর্মীর পা কেটে যাওয়ায় আনন্দটাই মাটি হয়ে গেল।

ফজলুল হক বলছিলেন, বাংলাদেশের এমন একটি প্রাকৃতিক গুহার প্রতি সবার যত্নবান হওয়া উচিত।

গুহার ভেতর পর্যটকদের ফেলে দেওয়া মশালে আগুন জ্বলছে। ছবি: জয়ন্তী দেওয়ান
গুহার ভেতর পর্যটকদের ফেলে দেওয়া মশালে আগুন জ্বলছে। ছবি: জয়ন্তী দেওয়ান

খাগড়াছড়ির পরিবেশবাদীদের সংগঠন বেলা নেটওয়ার্কের সদস্য মুহাম্মদ আবু দাউদ বলেন, এখানকার প্রকৃতি ও পরিবেশকে ধরে রাখার জন্য পর্যটনের পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতার দরকার। গুহায় প্রবেশের আগে কিংবা মশাল বিক্রির সময় যদি দর্শনার্থীদের সচেতন করে মশাল নির্দিষ্ট স্থানে ফেলার বাধ্যবাধকতা করা হয়, তাহলে গুহার সৌন্দর্য ধরে রাখা যেত। এ ছাড়া পর্যটক ও কর্তৃপক্ষের সচেতন হওয়া প্রয়োজন। সচেতন না হলে মশালের আগুনে যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে শিগগিরই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।