তিউনিসিয়ায় নৌকাডুবির ঘটনায় পাচারে জড়িত ৩ জন গ্রেপ্তার

নৌকাডুবির ঘটনায় বেঁচে যাওয়া কয়েকজন। তিউনিসিয়ার একটি আশ্রয়শিবিরে। ১১ মে, তিউনিসিয়া। ছবি: এএফপি
নৌকাডুবির ঘটনায় বেঁচে যাওয়া কয়েকজন। তিউনিসিয়ার একটি আশ্রয়শিবিরে। ১১ মে, তিউনিসিয়া। ছবি: এএফপি

তিউনিসিয়ার উপকূলে নৌকাডুবিতে যেসব বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন, তাঁদের পাচারে জড়িত থাকার দায়ে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। আজ শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‍্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন র‍্যাবের পরিচালক (গণমাধ্যম) মুফতি মাহমুদ খান।

৯ মে ভূমধ্যসাগরে অভিবাসীবাহী একটি নৌকা ডুবে ৮৫ থেকে ৯০ জন নিখোঁজ হন। এর মধ্যে ৩৯ জনই ছিল বাংলাদেশি। লিবিয়া থেকে ইতালি যাওয়ার পথে তিউনিসিয়ার উপকূলের কাছে নৌকাটি ডুবে যায়।

র‍্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এ ঘটনার পর র‍্যাব ছায়া তদন্ত শুরু করে এবং গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ায়। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত তিনটা থেকে আজ শুক্রবার সকাল ছয়টা পর্যন্ত র‍্যাব অভিযান চালায়। অভিযানে রাজধানীর আবদুল্লাহপুর, খিলক্ষেত ও বিমানবন্দর এলাকা থেকে তিনজনকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। এই তিনজন হলেন শরীয়তপুরের বাসিন্দা মো. আক্কাস মাতুব্বর (৩৯), সিলেটের বাসিন্দা এনামুল হক তালুকদার (৪৬) ও মো. আবদুর রাজ্জাক ভূইয়া। তাঁর বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায়।

র‍্যাব জানায়, গ্রেপ্তার এনামুল ও আবদুর রাজ্জাক একটি সিন্ডিকেটের সদস্য। সিলেটের জিন্দাবাজারে এনামুল হকের ‘ইয়াহিয়া ওভারসিজ’ নামে একটি এজেন্সি আছে। তিনি ১০ থেকে ১২ বছর এভাবে মানব পাচার করে আসছেন। তাঁর প্রতিষ্ঠানের দালাল হিসেবে কাজ করেন আবদুর রাজ্জাক। আর আক্কাস মাতুব্বর ঢাকার একটি চক্রের হয়ে কাজ করেন। তিনিও মানব পাচারের দালাল।

র‍্যাব জানায়, ভূমধ্যসাগরের সর্বশেষ নৌকাডুবির ঘটনায় নিখোঁজ ও নিহত ব্যক্তিদের বেশির ভাগ বৃহত্তর সিলেট, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, কিশোরগঞ্জ, নোয়াখালীর বাসিন্দা। তাঁরা কয়েকটি চক্রের মাধ্যমে অবৈধ পথে ইউরোপে যাওয়ার জন্য প্রতারণার শিকার হয়েছেন। গোয়েন্দা সূত্রে বেশ কয়েকটি সিন্ডিকেট সম্পর্কে তথ্য পাওয়া গেছে।

র‍্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়, সম্প্রতি অবৈধভাবে ইউরোপে যাওয়ার পথে ভূমধ্যসাগরের নৌপথ ব্যবহৃত হচ্ছে। বিভিন্ন সিন্ডিকেট এই অবৈধ কাজের সঙ্গে যুক্ত আছে। এই ঝুঁকিপূর্ণ পথে মাঝেমধ্যেই দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটে। সর্বশেষ তিউনিসিয়া যাওয়ার পথে বাংলাদেশিদের দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির ঘটনায় দেশি ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। এ ঘটনার পর ভুক্তভোগীদের পরিবারের লোকজন শরীয়তপুরের নড়িয়া ও সিলেটের বিশ্বনাথ থানায় দুটি মামলা করেছেন।

র‍্যাব জানায়, এ ধরনের অপরাধের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনা এবং তাঁদের মূলোৎপাটনের জন্য র‍্যাব সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এযাবৎ র‍্যাব এসব চক্রের বিরুদ্ধে ২০৯টি অভিযান পরিচালনা করে। গ্রেপ্তার করে ৬০৯ জনকে। আর র‍্যাবের অভিযানে এ পর্যন্ত মানব পাচারের শিকার ৭০৪ জন পুরুষ ও ১১০ জন নারীকে উদ্ধার করা হয়েছে।