সেবা বাড়াতে ওয়াসা-তিতাসসহ সেবা সংস্থাগুলোর দুই ভাগ চান মেয়র সাঈদ খোকন

সংবাদ সম্মেলনে কথা বলছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। ঢাকা, ১৭ মে। ছবি: মুসা আহমেদ
সংবাদ সম্মেলনে কথা বলছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। ঢাকা, ১৭ মে। ছবি: মুসা আহমেদ

রাজধানীতে নাগরিক সেবা বাড়াতে ওয়াসা, তিতাসসহ অন্যান্য সেবা সংস্থাকে দুই ভাগ করার আহ্বান জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এই আহ্বান জানান।

ডিএসসিসির মেয়র হিসেবে সাঈদ খোকন দায়িত্ব নেওয়ার চতুর্থ বর্ষপূর্তি উপলক্ষে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে তিনি গত চার বছরে তাঁর বিভিন্ন উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরেন।

সংবাদ সম্মেলনের প্রশ্নোত্তর পর্বে ঢাকা শহরে সেবা সংস্থাগুলোর সেবার মান নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন করেন সাংবাদিকেরা। এর উত্তরে ডিএসসিসি মেয়র বলেন, নাগরিক সেবা নিশ্চিত করতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে ডিএসসিসি। কিন্তু অন্যান্য সেবা সংস্থা যথাযথভাবে নাগরিক সেবা দিতে পারছে না। এতে মানুষের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশার সৃষ্টি হচ্ছে। তাই ঢাকা ওয়াসা, তিতাসসহ অন্যান্য সেবা সংস্থাকে দুই ভাগে ভাগ করতে হবে। এই সংস্থাগুলো সমন্বয়ের মাধ্যমে পরিচালনা করবে ডিএসসিসি ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)।

মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, নগর ব্যবস্থাপনার জন্য দুই বছর আগে সব সংস্থাকে সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করার নির্দেশনা দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সে অনুযায়ী সংস্থাগুলোকে নিয়ে নিয়মিত বৈঠক করছি। কিন্তু সন্তোষজনক ফল পাচ্ছি না। অধিকাংশ সেবা সংস্থা ‘সমন্বয় সভার’ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করছে না। এখনো যে যার মতো রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি করছে। ওয়াসার বিশুদ্ধ পানি, গ্যাস–সংকটসহ হাজারো সমস্যা রয়েই গেছে। এই প্রতিবন্ধকতা দূর করতে পারলে নাগরিক সেবা নিশ্চিত করা যাবে।

মাত্র ৪০ ভাগ জনবল নিয়ে ডিএসসিসি খুঁড়িয়ে চলছে বলে জানিয়েছেন মেয়র সাঈদ খোকন। তিনি বলেন, আগের বছর সিটি করপোরেশনকে ডিএসসিসি ও ডিএনসিসিতে ভাগ করা হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত জনবল নিয়োগের বিধিমালা তৈরি করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। ফলে অল্প জনবল নিয়ে সংস্থা দুটি পরিচালনা করা অনেক কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে নতুন আটটি ওয়ার্ড ডিএসসিসিতে যুক্ত হওয়ায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওপর কাজের চাপ আরও বেড়েছে। বিষয়টি সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে গুরুত্ব দিতে হবে। এর পাশাপাশি ডিএসসিসির রাজস্ব আয় বাড়াতে উপকর–ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করতে হবে।

ডিএসসিসির মেয়র বলেন, ‘অনেক চেষ্টার পর ডিএসসিসিতে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছি। প্রায় ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নগরীর ১৯টি পার্ক ও ১২টি খেলার মাঠ সংস্কার করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে বংশালের একটি পার্ক উদ্বোধন করা হয়েছে। বাকিগুলো আগামী কয়েক মাসের মধ্যে নাগরিকদের জন্য খুলে দেওয়া হবে।’

এর আগে এক লিখিত বক্তব্যে নিজের চার বছরের দায়িত্বকালে নেওয়া বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরেন ডিএসসিসি মেয়র। এর মধ্যে সড়কে এলইডি বাতি স্থাপন, জলাবদ্ধতা নিরসন, সড়ক ও ফুটপাত সংস্কার, পদচারী–সেতু নির্মাণ, পাবলিক টয়লেট, বিলবোর্ড অপসারণ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়ন, আধুনিক জবাইখানা নির্মাণসহ বেশ কিছু কাজের সফলতা তুলে ধরেন।

পরে দোয়া মাহফিল ও ইফতার অনুষ্ঠানে জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ, প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান, লেখক ও গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।