বরেন্দ্র অঞ্চলের মাটিতে নতুন ফল 'মেলন'

খেত থেকে ‘মেলন’ তুলছেন আদিবাসী শ্রমিক চন্দনা রানী। বরেন্দ্র এলাকায় নতুন এই ফলের চাষ করছেন কৃষক মনিরুজ্জামান। গতকাল রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার চৈতান্নপুরে।  প্রথম আলো
খেত থেকে ‘মেলন’ তুলছেন আদিবাসী শ্রমিক চন্দনা রানী। বরেন্দ্র এলাকায় নতুন এই ফলের চাষ করছেন কৃষক মনিরুজ্জামান। গতকাল রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার চৈতান্নপুরে। প্রথম আলো

চেনা রং, অচেনা ফল। রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার চৈতন্যপুর মাঠে এই ফলের চাষ হয়েছে। এই ফলের নামও এলাকাবাসী জানেন না। শুধু জানেন, এগুলো তরমুজজাতীয় ফল। দুই ধরনের নতুন ফল এবার চৈতন্যপুরের মাঠে হয়েছে। একধরনের ফল পাকলে হলুদ রঙের হচ্ছে। আরেক ফল সাদা রঙের।

এই ফলের চাষ করেছেন রাজশাহী নগরের মহিষবাথান এলাকার শৌখিন চাষি মনিরুজ্জামান। তাঁর ভাষায়, যে ফলটা পেকে হলুদ রং ধারণ করেছে, তাকে সৌদি আরবে ‘শাম্মাম’ বলা হয়। দেশে এর আলাদা নাম আছে কি না, তা তিনি জানেন না। সাদা রঙের ফলটাকে ‘রক মেলন’ বলা হয়। ঢাকার সুপারমার্কেটগুলোতে এর চাহিদা রয়েছে। মনিরুজ্জামান তাঁর সব ফল ঢাকায় বিক্রি করেছেন। পাকা ফল কাটলে ভেতর গোলাপি রঙের। খেতে মিষ্টি ও সুন্দর ঘ্রাণ আছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের রাজশাহী কার্যালয়ের উপপরিচালক শামছুল হক বলেন, এ দুই ধরনের ফলই মেলন। হলুদ রঙের ফলটাকে ইংরেজিতে শুধু ‘মেলন’ বলা হয়। আর সাদা রঙেরটাকে নেটেড মেলন বা কেন্টালোপ বলা হয়। বাংলায় এর কোনো নাম নেই। তিনি বলেন, রাজশাহীতে মনিরুজ্জামান নতুন ধরনের ফসল ও ফলের চাষ করে থাকেন। এবার তিনি মেলন চাষ করেছেন। এতে তাঁর বেশ মুনাফা হয়েছে।

মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে ঢাকার ব্যবসায়ী উজ্জ্বল মুনির বলেন, দেশে এই ফল নতুন। আগে আমদানি করা এই ফল সুপারমার্কেটগুলোতে রাখা হতো। চার–পাঁচ বছর ধরে দেশেই এই ফলের চাষ হচ্ছে। এবার রাজশাহী থেকে মনিরুজ্জামান তাঁর আড়তে এই ফল পাঠাচ্ছেন। এগুলো আসলে তরমুজ। হলুদ রঙেরটাকে তাঁরা ‘হানিডু’ বলছেন। সাদা রঙেরটা ‘রক মেলন’ নামে পরিচিত।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের গোদাগাড়ী কার্যালয় থেকে জানা গেছে, বরেন্দ্র অঞ্চলের মধ্যে ‘হাই বারিন্ড’ অর্থাৎ উঁচু বরেন্দ্র নামে পরিচিত রাজশাহীর গোদাগাড়ী এলাকা। প্রচণ্ড খরাপ্রবণ এই এলাকায় চাষিরা শুধু বৃষ্টিনির্ভর আমন ধানের চাষ করতেন। শস্য বহুমুখীকরণ প্রকল্পের আওতায় গোদাগাড়ীর কৃষকেরা এখন ধানের পাশাপাশি অন্যান্য ফল ও ফসলের আবাদ করছেন। এ এলাকায় এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত জমি খালি পড়ে থাকে। রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার চৈতন্যপুর এলাকায় মনিরুজ্জামান জমি ইজারা নিয়ে এই অসময়ে নানা রকম নতুন জাতের ফসল ও ফলের চাষ করে থাকেন।

মনিরুজ্জামানের নিজের কোনো জমি নেই। ‘আনকমন’ ফসল চাষের বিষয়ে তাঁর খুব আগ্রহ। তিনি রাজশাহীতে টিস্যু কালচারের মাধ্যমে বীজ আলু চাষ করেছেন। স্ট্রবেরি চাষ করেছেন। বর্ষাকালীন তরমুজ চাষ করেছেন। প্রাকৃতিকভাবে গাছে পাকানো পদ্ধতিতে টমেটো চাষ করছেন। দুই বছর ধরে তিনি ‘মেলন’ চাষ করেছেন। দুই বছর পর এবার তিনি সফল হয়েছেন।

গত বৃহস্পতিবার চৈতন্যপুরে মাঠে গিয়ে দেখা গেছে, আদিবাসী দিনমজুর চন্দনা রানী খেতের পরিচর্যা করছেন। তরমুজের গাছের মতোই লতানো গাছ বাঁশের কাঠি বেয়ে উঠে গেছে। ফল ধরে আছে মাটিতে। মনিরুজ্জামান বলেন, গত দুই বছর পরীক্ষামূলকভাবে চাষ করতে গিয়ে তিনি ব্যর্থ হন। এবার সফল হয়েছেন। তাঁর ১২ কাঠা জমিতে প্রায় এক হাজার মেলন হয়েছে। প্রতিটি প্রায় দুই কেজি ওজনের হয়েছে। এবার তাঁর ভালো মুনাফা হয়েছে। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি তিনি বীজতলায় এর চারা রোপণ করেছিলেন। ৭৫ দিনের মাথায় ফল উঠতে শুরু করেছে। এটি একটি লাভজনক ফসল হবে।