কেন দুই সিদ্ধান্ত, প্রশ্ন তৃণমূলে

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও সাংসদ জাহিদুর রহমান।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও সাংসদ জাহিদুর রহমান।

ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার সিনেমা হল রোড। শুক্রবার (৩ মে) জুমার নামাজ শেষে একটি চায়ের দোকানে বসে ছিলেন স্থানীয় সাংসদ জাহিদুর রহমান। তাঁকে ঘিরে লোকজনের জটলা। ‘শপথ নিয়ে সংসদে গিয়ে ভালো করসেন’—উপস্থিত লোকজন সামনাসামনি তাঁকে জানিয়ে দিল নিজেদের মতামত।

অন্যদিকে ঠাকুরগাঁওয়ের ছেলে হিসেবে পরিচিত বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বগুড়া-৬ আসন থেকে নির্বাচিত হয়েও শপথ না নেওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেন এলাকার লোকজন। তাঁরা বিএনপির এমন দ্বৈত সিদ্ধান্ত মানতে পারছেন না। একটি দলের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সবার ক্ষেত্রে একই সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত বলে স্থানীয় মানুষের মত।

পীরগঞ্জ উপজেলার পূর্ব চৌরাস্তা এলাকার ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘মির্জা ফখরুলকে ছাড়া বিএনপির বাকিরা সংসদে গেলেন। যাওয়ার সিদ্ধান্তই যখন নিল, দলের মহাসচিবকে বাইরে রেখে কেন গেল বুঝলাম না।’

গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রথমবারের মতো জয়ী হয়ে চমক সৃষ্টি করেন জাহিদুর রহমান। এর আগে তিনবার নির্বাচন করলেও জয় পাননি। এবার তিন সাবেক সাংসদকে (প্রতিদ্বন্দ্বীরা) হারিয়ে তিনি নির্বাচিত হন। রংপুর বিভাগের মধ্যে তিনিই একমাত্র বিএনপির প্রার্থী, যিনি জয়ী হতে পেরেছেন।

গত ২৫ এপ্রিল সাংসদ হিসেবে শপথ নেন ঠাকুরগাঁও-৩ (পীরগঞ্জ-রানীশংকৈল) আসন থেকে নির্বাচিত বিএনপির প্রার্থী জাহিদুর রহমান। এরপর ২ মে প্রথমবার এলাকায় এলে তাঁকে গণসংবর্ধনা দেওয়া হয়। পীরগঞ্জ ও রানীশংকৈল উপজেলার সাধারণ মানুষ জাহিদের সংসদে যাওয়াকে সাধুবাদ জানান।

গত নির্বাচনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে বিএনপির ছয়জন ও গণফোরামের দুজন নির্বাচিত হন। গণফোরাম থেকে নির্বাচিত দুজন আগেই শপথ নেন। দলীয় সিদ্ধান্ত না মেনে শপথ নেওয়ায় জাহিদকে দল থেকে বহিষ্কার করে বিএনপি। কিন্তু এর তিন দিন পর দলীয় সিদ্ধান্তে মির্জা ফখরুল বাদে বাকি চারজন শপথ নেন।

বিএনপির দলীয় সূত্রে জানা গেছে, দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে শপথ নেওয়ায় দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন জাহিদ। তাঁর বহিষ্কারের আদেশ প্রত্যাহারের বিষয়ে আলোচনা চলছে। দলের স্থায়ী কমিটি এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।

>


গত সংসদ নির্বাচনে প্রথমবারের মতো জয়ী হয়ে চমক সৃষ্টি করেন জাহিদুর রহমান
এর আগে তিনি তিনবার নির্বাচনে জয় পাননি
রংপুর বিভাগে তিনিই একমাত্র বিএনপির প্রার্থী, যিনি জয়ী হয়েছেন

১৯৯১, ২০০১ ও ২০০৮ সালের নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করে পরাজিত হন জাহিদ। স্থানীয় মুদিদোকানি খাইরুল ইসলাম বলেন, ‘কয়েকবার নির্বাচন করায় দুই উপজেলায় সব জায়গার মানুষের সঙ্গে মিশেছেন তিনি। এবার মানুষ তাঁকে নির্বাচিত করেছেন। এত সাধনার পরে জিতে সংসদে না গেলে খারাপ হতো।’

জাহিদের সংসদে যাওয়া নিয়ে এলাকায় বিপরীত মতও রয়েছে। স্থানীয় একটি কলেজের শিক্ষক এবায়দুর রহমান বলেন, ‘জাহিদুর রহমান নিজেই বারবার বলছেন, ভোট ডাকাতি হয়েছে। আবার সেই ভোট মেনে নিয়ে সংসদে গেলেন। সংসদে না যাওয়ার সিদ্ধান্তে অটল থাকলে ভালো হতো।’

সাংসদ জাহিদ প্রথম আলোকে বলেন, ঢাকায় প্রেসক্লাব, নয়াপল্টনে দাঁড়িয়ে একটা দাবি জানানোর চাইতে সংসদে তা তুলে ধরলে বেশি গুরুত্ব পাবে। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি জানাতে শপথ নিয়েছেন তিনি। আর পীরগঞ্জ-রানীশংকৈলের বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে শত শত মামলা। তাঁদের পক্ষ থেকেও শপথ নেওয়ার চাপ ছিল।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বগুড়া থেকে জয়লাভ করলেও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুলের রাজনীতি ঠাকুরগাঁওকেন্দ্রিক। পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ হিসেবে এলাকায় তাঁর জনপ্রিয়তা রয়েছে। ফখরুলের সংসদে না যাওয়ার সিদ্ধান্তে হতাশ হয়েছেন বিএনপির স্থানীয় নেতা-কর্মী থেকে শুরু করে সাধারণ জনগণ।

মির্জা ফখরুল যে এলাকার বাসিন্দা, সেখানকার ব্যবসায়ী আনিসুর রহমান বলেন, ফখরুলের নেতৃত্বে বিএনপি সংসদে গেলে ভালো হতো। সংসদে দাঁড়িয়ে দলের মহাসচিবের তুলে ধরা দাবিদাওয়ার গুরুত্ব বেশি থাকত।

ঠাকুরগাঁও পৌরসভার মেয়র ও মির্জা ফখরুলের ছোট ভাই মির্জা ফয়সল আমীন প্রথম আলোকে বলেন, সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ না নিয়ে বিএনপি মহাসচিব উদাহরণ তৈরি করেছেন। দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে মির্জা ফখরুলের সিদ্ধান্ত যৌক্তিক। তবে তিনি সংসদে না যাওয়ায় সাধারণ মানুষের ক্ষোভ থাকাটা অস্বাভাবিক নয়।