গরুর বিড়ম্বনায় শহরবাসী

অবাধে রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে গবাদিপশু। গতকাল সকালে শহরের লম্বাগাছ এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো
অবাধে রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে গবাদিপশু। গতকাল সকালে শহরের লম্বাগাছ এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো

জামালপুর পৌর শহরের বেশির ভাগ সড়কে যত্রতত্র বিচরণ করছে গবাদিপশু। এতে স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীসহ শহরে চলাচলকারী লোকজনকে প্রতিনিয়ত বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। শহরজুড়ে অবাধে গরুর পাল চরে বেড়ালেও এসব নিয়ন্ত্রণে মাথাব্যথা নেই কারোর।

গতকাল শনিবার সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, শহরের জিলা স্কুলের সামনে একটি গরুর পাল ঘোরাঘুরি করছে। গরুগুলো জিলা স্কুলের সামনে একটি আস্তাকুঁড়ের ময়লা খাচ্ছে। কয়েকজন শিক্ষার্থী গরু দেখে ভয়ে অনেক দূর দিয়ে হেঁটে যায়। শহরের ব্যস্ততম দয়াময়ী এলাকায় একটি গুরুর পাল প্রধান সড়ক পার হচ্ছে। কয়েকটি গরু যাচ্ছিল দয়াময়ী এলাকায় অবস্থিত সাংস্কৃতিক পল্লির দিকে। বশাকপাড়া মোড় এলাকায় কয়েকটি গরু যানবাহন চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে সড়ক পার হচ্ছিল। পরে গরুগুলো দয়াময়ী এলাকার দিকে চলে যায়। শহরের লম্বাগাছ এলাকার ফায়ার সার্ভিসের সামনে প্রধান সড়কের মাঝখান দিয়ে একটি গরু হেঁটে যাচ্ছিল। এ সময় যানবাহনগুলো গরুটিকে পাশ কাটিয়ে চলাচল করছিল। ব্যস্ততম এলাকা পাঁচ রাস্তা মোড়েও গরু ঘোরাঘুরি করছিল। শহরের শফি মিয়ার বাজার এলাকাতেও একই অবস্থা। রাস্তায় হরহামেশা মলমূত্র ত্যাগ করে গরুগুলো। ফলে পরিবেশ নষ্টের পাশাপাশি দুর্গন্ধে পথচারীদের চলা দায়।

শহরের কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গেটপাড়, রেলওয়ে স্টেশন, লম্বাগাছ, দয়াময়ী মোড়, তমালতলা, সকাল বাজার, বকুলতলা, দেওয়ানপাড়া মোড়, ফয়েজদারি মোড়, আদালতপাড়া, হাসপাতাল ও পাঁচ রাস্তা মোড় এলাকায় সব সময় গরু চরে বেড়ায়। কখনো কখনো ব্যস্ত সড়কে গবাদিপশু শুয়ে আয়েশ করে। পথচারী ও যানবাহন চলাচল করে গরুগুলোকে পাশ কাটিয়ে।

>

প্রতিদিন একপাল গরু প্রধান সড়কে ও মার্কেটে ঘোরাঘুরি করে
প্রায়ই মার্কেটের ভেতর ঢুকে মলমূত্র ত্যাগ করে

এসব গরুর মালিক কারা ও কীভাবে শহরময় ছেড়ে দেন এ নিয়ে মুখ খোলেন না কেউ। যেন বেওয়ারিশ গরুর দল চরে বেড়ায় শহরের এ–প্রান্ত থেকে ও–প্রান্তে।

পৌরসভার জনস্বাস্থ্য ২০০৯-এর আইনের (৫০ ধারায়) স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে, পৌরসভা কর্তৃপক্ষ বেওয়ারিশ গবাদিপশু আবদ্ধ ও খোঁয়াড়ের ব্যবস্থা করতে পারবে। আবদ্ধকৃত পশুর জন্য জরিমানা ও ফি আদায়ের বিধানও রয়েছে। কিন্তু জামালপুর পৌরসভাকে জনস্বাস্থ্য রক্ষায় কখনো এই আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি।

গেটপার এলাকার দিপ্ত মোবাইল বিক্রয়কেন্দ্রের মালিক মিজানুর রহমান বলেন, প্রতিদিন একপাল গরু প্রধান সড়ক ও মার্কেটে ঘোরাঘুরি করে। প্রায়ই গরু মার্কেটের ভেতর ঢুকে মলমূত্র ত্যাগ করে যায়। বিশেষ করে রাতে মার্কেট বন্ধ থাকার সুযোগে গরুর পাল মার্কেটের ভেতরে চলে আসে। এতে দুর্ভোগের শেষ নেই।

দয়াময়ী এলাকার ফল দোকানি গোলাম রব্বানী বলেন, মাঝেমধ্যে গরু তাঁর দোকানের ফলও খেয়ে ফেলে। যানজটের কারণে অনেক সময় গরু দোকানের সামনের ক্রেতাদের গুঁতো দেয়। সারা শহর ঘুরে বেড়ায় এসব গরু। এগুলোর শরীরে কোনো রশি নেই। পৌরসভার পক্ষ থেকেও এসব গরুর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না।

জামালপুর পৌরসভার মেয়র মির্জা সাখাওয়াতুল আলম খান জানান, গরুর বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এসব গরুর মালিককে খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি গরুর পাল ধরতে অভিযান চলানো হয়েছিল। কিন্তু আমার লোকজন কাছে যেতেই গরু রাস্তায় শুয়ে পড়ে। তারপর গরু আর ওঠানো যায় না। তবে গরুর মালিকদের বের করতে শহরে মাইকিংয়ের ব্যবস্থা করা হবে। যাতে মালিকেরা গরুগুলোকে ছেড়ে না দেন।’