মনোনয়ন নিয়ে বিএনপিতে ধোঁয়াশা, আ.লীগের ৮ জন

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শপথ না নেওয়ায় শূন্য ঘোষিত বগুড়া-৬ (পৌরসভা-সদর উপজেলা) আসনের উপনির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী কে হচ্ছেন, তা গতকাল শনিবার পর্যন্ত স্পষ্ট হয়নি। অন্যদিকে, আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দৌড়ে আছেন আটজন।

তফসিল অনুযায়ী, এই আসনে উপনির্বাচনে আগামী ২৪ জুন ভোট হবে। মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ২৩ মে।

বিএনপির দুর্গখ্যাত বগুড়ার এই শূন্য আসনে উপনির্বাচনে বিএনপি অংশ নিচ্ছে বলে দলটির কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা দিয়েছে। জানা গেছে, উপনির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে আলোচনায় রয়েছেন দলটির সাবেক সাংসদ জি এম সিরাজ। গত নির্বাচনে তিনি বগুড়া-৫ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী ছিলেন। তবে গতকাল বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্রে জানা যায়, এখানে দলটির প্রার্থী হতে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নাকে বিএনপিকে যোগ দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তবে তিনি এ প্রস্তাবে রাজি হননি বলে জানা যায়।

জি এম সিরাজ বলেন, বগুড়া-৬ জিয়া পরিবারের আসন। এখানে চেয়ারপারসন নিজেই নির্বাচন করেন। তাঁকে ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় সাজা দিয়ে অন্যায়ভাবে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে। এ কারণে ৩০ ডিসেম্বরের প্রহসনের নির্বাচনে দলের মহাসচিব প্রার্থী হয়েও বিপুল ভোটে বিজয়ী হন। কিন্তু বিশেষ কারণে তিনি শপথ নেননি। এই আসনে ধানের শীষের প্রার্থী কে হবেন, সেটা খালেদা জিয়া আর তারেক রহমান ছাড়া কেউ জানেন না।

গত শুক্রবার শহরের নওয়াববাড়ি সড়কে দলীয় কার্যালয়ে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সভা শেষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে উপনির্বাচনে দলীয় প্রার্থিতার বিষয়টি সামনে আসে। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে জি এম সিরাজ বলেন, ‘কমিটি হওয়ার আগে নিজেও জানতাম না কমিটিতে আহ্বায়ক থাকব। কিন্তু উপনির্বাচনে ‌“জিয়া পরিবারের” আসনে আমাকে প্রার্থী করা হচ্ছে কি না, এটা দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিষয়। বিষয়টি এখনো জানি না। তবে আমাকে মনোনয়ন দেওয়া হলে “না” করব না।’

পরে জানতে চাইলে জি এম সিরাজ প্রথম আলোকে বলেন, বগুড়ায় দলীয় মহাসচিবের ছেড়ে দেওয়া ‘জিয়া পরিবারের’ আসনে উপনির্বাচনে বিএনপি অংশ নিচ্ছে, এটা নিশ্চিত। তবে দলীয় প্রার্থিতার বিষয়টি চূড়ান্ত হবে ২২ মে। তবে এটুকু বলা যায়, জিয়া পরিবারের আসনে বিএনপির প্রার্থিতা নিয়ে চমক থাকবে।

আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দৌড়ে আটজন

গতকাল ছিল আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, শেষ দিন পর্যন্ত মোট আটজন কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ডে আবেদন জমা দিয়েছেন। তাঁরা হলেন জেলা আওয়ামী লীগের প্রয়াত সভাপতি মমতাজ উদ্দিনের ছোট ছেলে এবং বগুড়া জেলা শিল্প ও বণিক সমিতির সভাপতি মাসুদুর রহমান, বগুড়া পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি রেজাউল করিম, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক রাগেবুল আহসান ও টি জামান নিকেতা, চিকিৎসকদের সংগঠন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) বগুড়া জেলা কমিটির সভাপতি মোস্তফা আলম, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান, জার্মান আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা আসাদুর রহমান এবং শেরপুর শহর মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী তাহমিনা জামান।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে এই আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সাংসদ হন জেলা জাপার সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম। এবারও সমঝোতার ভিত্তিতে তাঁকে এই আসন ছেড়ে দেয় মহাজোট। তবে নির্বাচনে হেরে যান তিনি। আসনটি শূন্য হওয়ায় উপনির্বাচনেও নূরুল ইসলাম প্রার্থী হবেন বলে জানিয়েছেন তাঁর ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত জাপার কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আবদুল সালাম। তিনি বলেন, গত পাঁচ বছরে নূরুল ইসলাম নির্বাচনী এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। এর ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে তাঁকে মনোনয়ন দেওয়া দরকার।

এ ছাড়া সিপিবির বগুড়া জেলা কমিটির সম্পাদক আমিনুল ফরিদও এই উপনির্বাচনে অংশ নেওয়ার কথা জানিয়েছেন।

চার স্বতন্ত্র প্রার্থীর মনোনয়ন দাখিল

বগুড়া সদর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা এস এম জাকির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, বগুড়া-৬ আসনের উপনির্বাচনে শনিবার পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনে চারজন স্বতন্ত্র প্রার্থী মনোনয়ন দাখিল করেছেন। তাঁরা হলেন সাইফুর রহমান রাজভান্ডারী, সৈয়দ কবির আহমেদ, আবুল হাসান ও জাফর আলী।