কিশোরগঞ্জে ধানে আগুন ধরিয়ে কৃষকদের প্রতিবাদ

ধানের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় সড়কে ধান পুড়িয়ে প্রতিবাদ করেছেন কৃষকেরা। কিশোরগঞ্জ, ১৯ মে। ছবি: প্রথম আলো
ধানের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় সড়কে ধান পুড়িয়ে প্রতিবাদ করেছেন কৃষকেরা। কিশোরগঞ্জ, ১৯ মে। ছবি: প্রথম আলো

কিশোরগঞ্জে ধানের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় ধানে আগুন ধরিয়ে প্রতিবাদ করেছেন কৃষকেরা। আজ রোববার দুপুরে কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলার গোবিন্দপুর চৌরাস্তা মোড়ে শত শত কৃষক এ প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশ নেন। সড়কের ওপর ধানে আগুন ধরিয়ে প্রতিবাদ সমাবেশ ছাড়াও ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন ও সড়ক অবরোধ করে রাখেন তাঁরা।

গোবিন্দপুর কৃষক অধিকার রক্ষা সংগ্রাম কমিটির আহ্বানে আয়োজিত এই প্রতিবাদ সমাবেশে কমিটির আহ্বায়ক আলাল মিয়ার সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন কৃষকেরা। বক্তারা বলেন, এবার কৃষকের প্রতি মণ ধানের উৎপাদন খরচ পড়েছে প্রায় ৮৫০ টাকা। অথচ বাজারে কৃষককে ২০০-৩০০ টাকা লোকসান দিয়ে ধান বিক্রি করতে হচ্ছে। তাই সরকার নির্ধারিত ১০৪০ টাকা মণ ধরে হাটে হাটে গিয়ে সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ধান কেনার দাবি জানান তাঁরা।

এদিকে ন্যায্যমূল্য না পেয়ে কিশোরগঞ্জের হাওরের একমাত্র ফসল ধান চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন কৃষকেরা। বারবার প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে এমনিতেই ক্ষতিগ্রস্ত হন তাঁরা। এ বছর ফসল ভালো হলেও ধানের ন্যায্য দাম না পেয়ে তাই হতাশ হয়ে পড়েছেন তাঁরা।

এ ছাড়া কোনো কোনো এলাকায় শিলাবৃষ্টি আর ধানের ‘নেক ব্লাস্ট’ রোগের কারণেও লোকসানের মুখে পড়তে হচ্ছে কৃষকদের। সম্প্রতি কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ, হোসেনপুর, পাকুন্দিয়া ও নিকলী উপজেলার কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, অনেক জায়গায় ধানের শিষের গোড়ায় ছত্রাকজনিত রোগে পচন ধরেছে। গাছের শিষ শুকিয়ে যাওয়ায় শিষে ধান দেখা গেলেও তাতে চালের দেখা নেই। অনেক কৃষক জমি থেকে অর্ধেক ধানও আনতে পারেননি। তাই অনেক কৃষকই শ্রমিকের খরচ শোধ করতে পারেননি।

মিঠামইন উপজেলার গোপদীঘি এলাকার কৃষক সাদেক হোসেন বলেন, তিনি এবার ৮ একর জমিতে ৭০০ মণ ধান পাওয়ার আশা করেছিলেন। কিন্তু নেক ব্লাস্টের কারণে জমি থেকে পেয়েছেন মাত্র ৯০ মণ। এমনিতেই ধানের ফলন কম, তার ওপর ধানের ন্যায্যমূল্য না পেয়ে আক্ষেপ করে বলেছেন, আর কখনো তিনি ধান চাষ করবেন না।

তবে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর কিশোরগঞ্জের ১৩ উপজেলায় ১ লাখ ৬৩ হাজার ৩১৭ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। তবে লক্ষ্যমাত্রা ছাপিয়ে ধান উৎপাদিত হয়েছে ১ লাখ ৬৭ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে উচ্চ ফলনশীল (উফশী) বোরো আবাদ হয়েছে ১ লাখ ৪৪ হাজার ২১৫ হেক্টর জমিতে, হাইব্রিড বোরোর আবাদ হয়েছে ২২ হাজার ৯৪৫ হেক্টর জমিতে ও স্থানীয় জাতের বোরো আবাদ হয়েছে ৩৪০ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে শুধু হাওরাঞ্চলেই চাষ হয়েছে ১ লাখ ৬ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে। আর হাওরবহির্ভূত উজান এলাকায় ধান চাষ হয়েছে ৬১ হাজার হেক্টর জমিতে।

জানতে চাইলে কিশোরগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক মো. অশোক পারভেজ বলেন, এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ফলনের লক্ষ্যমাত্রাও ছাড়িয়ে গেছে। তবে কৃষকেরা শিলাবৃষ্টি আর চিটার কারণে কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও মোট ফসলের তুলনায় এটা খুব কম। শুরুর তুলনায় এখন কৃষকেরা ধানের দামও কিছুটা বেশি পাচ্ছেন বলে দাবি করেন তিনি।