'অভিমান' থেকে পদত্যাগের কথা বলেছিলেন রাব্বানী

গোলাম রাব্বানী
গোলাম রাব্বানী

‘অভিমান’ থেকে গতকাল শনিবার ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে পদত্যাগের কথা বলেছিলেন বলে জানিয়েছেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী। আজ রোববার বিকেলে গোলাম রাব্বানী প্রথম আলোকে এ কথা বলেন।

দ্বিতীয় দফা হামলার অভিযোগ তুলে গতকাল রাত থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে অবস্থান ধর্মঘট করছেন ছাত্রলীগের পদবঞ্চিতরা। গতকাল রাতে তাঁদের বুঝিয়ে আন্দোলন থেকে নিবৃত্ত করতে গিয়ে গোলাম রাব্বানী ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছিলেন।

পদত্যাগের সেই ঘোষণার বিষয়ে আজ বিকেলে গোলাম রাব্বানী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার তখন খুব খারাপ লাগছিল, ছাত্রলীগকে ওরা একটা হাস্যকর ব্যাপার করে ফেলছিল। তারা ওখানে বসে থাকলে ছাত্রলীগের...হচ্ছে, সবাই ছাত্রলীগ নিয়ে...। তাই আমি তাদের বলেছি, আমি পদত্যাগ করলে যদি তোমরা খুশি হও, আমি পদত্যাগ করতে রাজি আছি। কথাটা অভিমান থেকে বলেছিলাম।’

ছাত্রলীগের আংশিক কমিটি প্রকাশের প্রায় ১০ মাস পর গত সোমবার সংগঠনের ৩০১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। ওই দিন সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যানটিনে পদবঞ্চিত ও প্রত্যাশিত পদ না পাওয়া ছাত্রলীগের বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা সংবাদ সম্মেলন করতে গেলে সংগঠনের বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অনুসারীরা তাঁদের ওপর হামলা চালান। এতে কয়েকজন নারী নেত্রীসহ ১০-১২ জন আহত হন। মধুর ক্যানটিনের সেই ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি করে ছাত্রলীগ। কমিটিকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। সেই কমিটি গতকাল রাতে প্রতিবেদন দিয়েছে।

বুধবার ছাত্রলীগের কমিটি থেকে ‘বিতর্কিতদের’ বাদ দিতে সংগঠনের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীকে নির্দেশ দেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেদিন রাতেই ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে ‘বিতর্কিতদের’ বহিষ্কারে ২৪ ঘণ্টা সময় নেন তাঁরা। তবে সেই সময়সীমা পেরিয়ে গেলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

এর মধ্যে গতকাল রাতে জটিলতা নিরসনে সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র–শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) আলোচনায় বসে ছাত্রলীগের পদবঞ্চিত ও প্রত্যাশিত পদ না পাওয়াদের ১২ জনের প্রতিনিধিদল। পদবঞ্চিতদের অভিযোগ, সেখানে সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী প্রত্যাশিত পদ না পাওয়া নতুন কমিটির সংস্কৃতিবিষয়ক উপসম্পাদক লিপি আক্তারকে আপত্তিকর কথাবার্তা বললে তিনি প্রতিবাদ জানান। এর জেরে সেখানে উপস্থিত গোলাম রাব্বানীর কর্মীরা লিপিসহ পদবঞ্চিত কয়েকজনকে মারধর করেন।

তবে টিএসসিতে মারধরের ঘটনা অস্বীকার করেছেন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী। পদবঞ্চিতদের মারধরের শিকার হওয়ার দাবিকে ‘মিথ্যাচার’ আখ্যা দিয়ে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি নিজে সেখানে ছিলাম। আমার কাছে ক্লিয়ার যে কোনো হামলার ঘটনা ঘটেনি। হামলার কোনো প্রমাণ থাকলে তাঁরা দিক। তাঁরা যে অভিযোগ করছেন, এটা একটা স্ট্যান্ড। কারও শরীরে কোনো স্পট ছিল না, দাগ ছিল না। ওরা বরং আপা ও আপার ছাত্রলীগ নিয়ে আজেবাজে মন্তব্য করেছেন। ব্যবস্থা নিলে তো সেটা ওদের বিরুদ্ধে, ওরা যাঁরা আপত্তিকর কথা বলেছেন।’

কী সমাধান দেখছে ছাত্রলীগ?

দুটি পদক্ষেপ পূর্ণাঙ্গ কমিটি নিয়ে তৈরি হওয়া জটিলতা নিরসন করতে পারে বলে মনে করেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী। একটি হলো, তাঁরা যে ১৬ জন ‘বিতর্কিত’ নেতার তালিকা দিয়েছেন, তাঁদের পদ শূন্য ঘোষণা করা। আরেকটি হলো, মধুর ক্যানটিনের সোমবারের ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া।

এ বিষয়ে গোলাম রাব্বানী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা আমাদের জায়গা থেকে সর্বোচ্চ ছাড় দেওয়ার মানসিকতা রাখছি। মধুর ক্যানটিনের ঘটনায় হওয়া তদন্ত কমিটি ইতিমধ্যে প্রতিবেদন দিয়েছে। শিগগিরই আমরা তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি, যেটি পদবঞ্চিতদের দাবি ছিল। এ ছাড়া আমরা যে ১৬ জন বিতর্কিত নেতার নাম বলেছিলাম, তাঁদের মধ্যে সাতজন নিরপরাধ হওয়ার তথ্যপ্রমাণ দিয়েছেন। অন্য যাঁরা আছেন, তাঁদের কাছ থেকে আমরা রেসপন্স পাচ্ছি না। আগামীকাল আমরা তাঁদের পদ শূন্য ঘোষণা করব। এই দুটি জিনিস হলেই আমার মনে হয় আর অসন্তোষ থাকবে না।’