চোখ কেবল 'ট্রিপে', যাত্রীদের দুর্ভোগে নয়

বাসে চড়ার যুদ্ধ। ছবি: দীপু মালাকার
বাসে চড়ার যুদ্ধ। ছবি: দীপু মালাকার

মায়মুনা বেগম মিরপুর রোডের ধানমন্ডি ৪ নম্বরে রাস্তার ওপরে দাঁড়িয়ে ছিলেন। কতক্ষণ আছেন? প্রশ্ন শুনেই মোবাইলে সময় দেখে বললেন, ‘ঠিক ২০ মিনিট।’ তিনি যাবেন বনানী। দুটি বাস পেয়েও উঠতে পারেননি। কখন বাসায় পৌঁছাবেন, সেই চিন্তায় অস্থির মায়মুনা। রমজানে রাস্তায় বেরিয়েই সময়মতো বাড়ি ফেরার চিন্তা সবার। সঙ্গে আছে গণপরিবহনের চড়ার যুদ্ধ।

প্রথম রোজা শুরু হওয়ার আগের দিন থেকেই রাজধানীবাসী টের পেয়েছিলেন, তাঁদের জন্য কী অপেক্ষা করছে। মাথার ওপর সূর্যের চোখরাঙানি আর রাস্তার অসহনীয় যানজটকে সঙ্গী করে দিন কাটছে এখন। আর গণপরিবহনের চড়ার দুর্ভোগ বেড়েছে।

গত শনিবার বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির এক প্রতিবেদন জানিয়েছে, রমজান মাসে ঢাকায় গণপরিবহনের ৯৫ শতাংশ যাত্রী প্রতিদিন যাতায়াতে দুর্ভোগের শিকার হন। গণপরিবহনব্যবস্থার ওপর তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেন ৯০ শতাংশ যাত্রী। আর অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্যের শিকার হন ৯৮ শতাংশ যাত্রী।

পরিবহনের অপেক্ষায় ঢাকার রাস্তায় মানুষের ভিড়। ছবি: দীপু মালাকার
পরিবহনের অপেক্ষায় ঢাকার রাস্তায় মানুষের ভিড়। ছবি: দীপু মালাকার

রাজধানীর কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা যায় যানজট ও যাত্রীদের দুর্ভোগের চিত্র। নিউমার্কেট যেতে মিরপুর রোড পুরোটাই স্থবির থাকে। প্রায় সময়েই দেখা যায়, ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে না থাকতে পেরে যাত্রীরা হেঁটেই রওনা হন, খালি বাস ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে। আবুল কাশেম মিরপুর থেকে আজিমপুরের জন্য বেলা ১১টায় বাসে চড়েছেন। বেলা একটার সময় তিনি ধানমন্ডি ৪ নম্বর পর্যন্ত আসতে পারেন। সামনে সড়কের পরিস্থিতি দেখে নেমে হাঁটা শুরু করেছেন। তিনি বলেন, ‘এভাবে চলতে থাকলে মানুষের কাজকর্ম করে খেতে হবে না। শহরের এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যেতেই দিন পার হয়।’

ঝুলতে ঝুলতে এভাবেই চলে আসা–যাওয়া। ছবি: দীপু মালাকার
ঝুলতে ঝুলতে এভাবেই চলে আসা–যাওয়া। ছবি: দীপু মালাকার

মিরপুর রোডেরই রাসেল স্কয়ারমুখী সড়কটিতে তুলনামূলক ফাঁকা। কিন্তু বাসগুলো ঠিক মতো থামছে না। কলাবাগানে ট্রান্সসিলভা নামের এক বাসকে হাত দিয়ে থামতে ইশারা করেন এক নারী যাত্রী। ফাঁকা রাস্তা পেয়ে দ্রুতগতিতে চলছিল বাসটি। পুরোপুরি না থামায় চলন্ত অবস্থায়ই ওই নারী বাসে দৌড়ে বাসে ওঠেন।

ঠিকমতো না থেমে চলন্ত বাসে যাত্রী তোলাই এখন নিত্যদৃশ্য। আর বাসগুলো এখন গেটলক করে সিটিং সার্ভিস হিসেবে চলে। এতে সরকারের বেঁধে দেওয়া ভাড়ার চেয়ে বেশি ভাড়া আদায় করা হয়। মিরপুর থেকে গুলিস্তানগামী বাস বিকল্প পরিবহনের এক চালক বলেন, ‘রোজায় ট্রিপ কমছে। জ্যাম ঠেইলা বাস চালাইতে অয়। বেশি ট্রিপ না পাইলে তো খরচও ওঠে না। যত আগে যাওয়া যায়, ততই লাভ।’

কে উঠবে কার আগে। ছবি: দীপু মালাকার
কে উঠবে কার আগে। ছবি: দীপু মালাকার

কারওয়ান বাজারে কাজী নজরুল ইসলাম অ্যাভিনিউয়ে চলছে মেট্টোরেলের কাজ। রাস্তা এখানে সরু। গাড়ি চলে ধীরগতিতে। আর যানজট এখানে ‘চিরস্থায়ী’ ব্যাপার হয়ে গেছে। মো. সারোয়ার নামের এক ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন, ‘ইফতারের আগে রাস্তার কথা চিন্তা করলেই ঘাম ছুটে যায়। এবার রোজার মধ্যে চার দিন মাগরিবের আজান দিয়েছে রাস্তায়। আর ওই সময়ে বাসগুলোও সহজে যাত্রী তুলতে চায় না। অফিস ছুটির সময়ে সব বাস গেটলক হয়ে যায়। দাঁড়িয়ে থেকেও লাভ হয় না।’

পরিবহনের জন্য অপেক্ষা। ছবি: দীপু মালাকার
পরিবহনের জন্য অপেক্ষা। ছবি: দীপু মালাকার

ফার্মগেটে সিএনজিচালিত এক অটোরিকশাকে অনুরোধ করছিলেন পিয়াল হাসান। তিনি যাবেন খিলক্ষেত। সিএনজিচালক যাবেন না। পিয়াল বলেন, ‘রোজার সময়ে বাসে ওঠার সাহস করি না। কিন্তু সিএনজিগুলোও ইচ্ছেমতো চলে। মিটারে তো যাবেই না, ভাড়াও বেশি। কারণ, শহরের সব পরিবহনের লোকই জানে, এখানে যাত্রী অসহায়। তাই যত খুশি আদায় করা যায়।’

আরও কয়েকজন যাত্রী অভিযোগ করে বলেন, গণপরিবহনের নৈরাজ্য তো আছেই; সঙ্গে রাইড শেয়ারিং সেবাগুলোও সময় বুঝে ভাড়া বাড়িয়ে দেয়। যখন চাপ থাকে বা পরিবহনসংকট থাকে, তখন স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ভাড়া দেখায়।