তরমুজের ফলন কম, দাম চড়া

শিলাবৃষ্টিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তরমুজের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ কারণে বাজারে এখন চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে রসাল এই ফল। সম্প্রতি শহরের বড় বাজারে।
শিলাবৃষ্টিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তরমুজের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ কারণে বাজারে এখন চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে রসাল এই ফল। সম্প্রতি শহরের বড় বাজারে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার সুহিলপুর গ্রামের বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম। কেনাকাটা করতে জেলা শহরে আসেন। ঘুরতে ঘুরতে যান ফলপট্টি। সেখানে স্তূপ করে রাখা হয়েছে আনারস ও তরমুজ। মাঝারি আকারের একটি তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকায়। দাম শুনে তিনি বিস্মিত।

শফিকুল বলেন, ধান কাটা শেষ হয়েছে। কিন্তু ধানের দাম খুবই কম। প্রতি মণ ধান বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকায়। সেখানে একটি মাঝারি আকারের তরমুজের দাম কিনা ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা। আর বড় আকারের তরমুজের দাম ৭০০ টাকা। এক মণ ধান বিক্রির টাকায়ও বড় তরমুজ কেনা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, ‘তরমুজের বাজারে আগুন। এগুলো আমাদের পক্ষে কেনা সম্ভব নয়। যাঁরা ধনী লোক, কেবল তাঁদের পক্ষেই তরমুজ কিনে খাওয়া সম্ভব।’

সম্প্রতি জেলা শহরের জগতবাজার, বড় বাজার ও সিটি সেন্টার-সংলগ্ন দোকানগুলোতে বেশি দামে তরমুজ বিক্রি করতে দেখা গেছে। আর খালপাড়ের বড় বড় তরমুজের আড়তে গিয়ে তরমুজ পাওয়া যায়নি। কোনো দোকানে তরমুজ প্রতি কেজি ১০০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে। অথচ অন্য বছর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রধান সড়ক বাদেও বিভিন্ন পাড়া, মহল্লা ও অলিগলিতে প্রচুর তরমুজ পাওয়া যেত। এ বছর জেলায় হাতে গোনা কয়েকটি দোকানে তরমুজ বিক্রি হচ্ছে। দাম অনেক বেশি।

বড় বাজারের মসজিদ-সংলগ্ন একটি দোকানে দেখা গেছে, ছোট তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ২৫০ টাকায়। আর মাঝারি আকৃতির একটি তরমুজ ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকায় বিক্রি হয়। বড় আকারের তরমুজ ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তরমুজ কিনতে দোকানে ক্রেতাদের ভিড়। তবে অনেকে দাম শুনে তরমুজ কেনার সাহস করেন না।

দোকানি সুহেল মিয়া বলেন, এখন বাজারে তরমুজের সরবরাহ কম। এবার খুলনা থেকে পাইকারি দরে এনে তরমুজ বিক্রি করতে হচ্ছে। খরচও বেশি পড়ছে। তাই বেশি দামে তরমুজ বিক্রি করতে হচ্ছে।

জেলা শহরের পৌর আধুনিক সুপার মার্কেটের পূর্ব পাশে একটি দোকানে ছোট আকারের তরমুজ ২৫০ টাকা করে বিক্রি করতে দেখা গেছে। দাম বেশি বলে ছোট আকারের তরমুজই বেশি বিক্রি হয়।

নিউ মৌড়াইল এলাকার বাসিন্দা আরেফিন শোভন বলেন, তরমুজের দাম অত্যধিক। বেশি দামে কিনেও তরমুজ খেয়ে কোনো তৃপ্তি পাওয়া যায় না। তরমুজ কাটলে লাল দেখা গেলেও পানসে লাগে।

পাওয়ার হাউস রোড এলাকার বাসিন্দা বাহারুল হক বলেন, আগে জেলা শহরের খালপাড় এলাকায় তরমুজের আড়তগুলোতে ট্রাকের পর ট্রাক তরমুজ আসত। আর এখন কোনো আড়তেই তরমুজ নেই। আড়ত ব্যবসায়ীরা লোকসানের ভয়ে তরমুজ আনছেন না। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, প্রথমত, এবার তরমুজের ফলন ভালো হয়নি। দ্বিতীয়ত, তরমুজ আনা কিছুটা বিপজ্জনক। কারণ ট্রাকভর্তি তরমুজ আনার পর সেই তরমুজ নির্ধারিত দামে বিক্রি করা নিয়ে রয়েছে সংশয়। বিক্রি করতে না পারলে অত্যধিক গরমে তরমুজ পচে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

জেলা শহরের নয়নপুর এলাকার বাসিন্দা স্বপন মিয়া বলেন, ‘বাচ্চাকাচ্চারা কইছে তরমুজ খাইব। বাজারে আইসা দেখি আগুনের লাহান দাম। গরিব মানুষ কি অত দামে তরমুজ খাইত পারব!’

পৌর শহরের বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘খুব শখ করে ছেলেমেয়েদের জন্য বড় একটি তরমুজ ৬০০ টাকায় কিনেছি। কিন্তু কেটে তরমুজের ভেতরের অংশ লাল পেলেও খেতে মিষ্টি লাগেনি।’

খালপাড়ের তরমুজের আড়ত বাঁধন এন্টারপ্রাইজের ব্যবস্থাপক ফারুকুল ইসলাম বলেন, এ বছর তরমুজের ফলন ভালো হয়নি। শিলাবৃষ্টি তরমুজের ফলন নষ্ট করে দিয়েছে। তরমুজের ভেতরের অংশও শিলাবৃষ্টিতে নষ্ট হয়ে গেছে। বাজারে তরমুজের সংকট। ফলন কম এবং বেশি দামের কারণে এবার তিনি তরমুজ আনেননি।