দিব্যি চলছে অবৈধ অটোরিকশা

সিলেট নগরের বিভিন্ন এলাকায় দিব্যি চলছে ব্যাটারিচালিত অবৈধ অটোরিকশা। গতকাল সকালে সিলেট নগরের কিনব্রিজ এলাকায়।   ছবি: প্রথম আলো
সিলেট নগরের বিভিন্ন এলাকায় দিব্যি চলছে ব্যাটারিচালিত অবৈধ অটোরিকশা। গতকাল সকালে সিলেট নগরের কিনব্রিজ এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো

যাত্রী পরিবহনের জন্য সিটি করপোরেশনের কোনো নিবন্ধন নেই। এরপরও প্রকাশ্যে ট্রাফিক পুলিশের চোখের সামনে সিলেট নগরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক থেকে শুরু করে পাড়া-মহল্লা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে কয়েক হাজার ব্যাটারিচালিত রিকশা। অনেকটা ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করছে নগরবাসী। প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনাও।

নগরবাসীর ভাষ্য, নগরে প্রচুর নিবন্ধনহীন ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল করছে। এর আধিক্য সবচেয়ে বেশি নগরের ২৭টি ওয়ার্ডের কমবেশি সব পড়া-মহল্লাতেই। এর বাইরে গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতেও এসব যান চলতে দেখা যায়। অথচ অবৈধ রিকশা উচ্ছেদে সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ কিংবা
ট্রাফিক পুলিশ কোনো ভূমিকাই নিচ্ছে না। দ্রুতগতিসম্পন্ন হওয়ায় এসব যানের চালক সহজে ব্রেক কষতে পারেন না। এতে প্রায়ই সড়কে রিকশা উল্টে ঘটছে দুর্ঘটনা।

গতকাল রোববার সরেজমিনে দেখা গেছে, নগরের অতি গুরুত্বপূর্ণ এলাকা বন্দরবাজার, জিন্দাবাজার, চৌহাট্টা, আম্বরখানা, নাইওরপুল, শিবগঞ্জ, সোবহানীঘাট, উপশহর, পাঠানটুলা, সুবিদবাজার, চৌকিদেখী, শাহি ঈদগাহ, কদমতলী, ভার্থখলা, হুমায়ুন রশীদ চত্বর, সুরমা মার্কেট, তালতলা, কিনব্রিজ এলাকা, তোপখানা, কাজীরবাজার, শেখঘাট, লামাবাজার, রিকাবীবাজার, কাজলশাহ, বাগবাড়ি, টিলাগড়, লোহারপাড়, কুমারপাড়া, নয়াসড়ক এলাকায় অবাধে ব্যাটারিচালিত অবৈধ রিকশা চলাচল করছে।

নগরের মদিনা মার্কেট থেকে কালীবাড়িগামী সড়কে গতকাল দুপুর ১২টার দিকে আধা ঘণ্টার ব্যবধানে ৪০টি ব্যাটারিচালিত রিকশাকে চলাচল করতে দেখা গেছে। সাড়ে ১২টা থেকে পৌনে একটা পর্যন্ত মদিনা মার্কেট-পাঠানটুলা সড়কে ১৬টি রিকশাকে যাত্রী পরিবহন করতে দেখা গেছে। মদিনা মার্কেট ও পাঠানটুলা এলাকার দুজন ব্যবসায়ী জানান, এসব অবৈধ রিকশার কারণে অতিরিক্ত চাপে নগরে যানজট বাড়ছে। প্যাডেলে চালিত রিকশায় সময় বেশি লাগায় অনেকে ব্যাটারিচালিত রিকশায় ওঠেন এবং প্রায়ই দুর্ঘটনার মুখোমুখি হন।

পাঠানটুলা এলাকার বাসিন্দা রবিউল ইসলাম বলেন, গতি বেশি হওয়ায় উল্টে যাওয়ার আশঙ্কায় ব্যাটারিচালিত রিকশায় চড়তে ভয় হয়। তবে নগরে এখন এত বেশি ব্যাটারিচালিত রিকশা, যে কারণে সবাই এতে উঠছেন। অনেকে সময় বাঁচানোর জন্যই এসব যানে চড়ছেন।

সিটি করপোরেশনের লাইসেন্স শাখা জানিয়েছে, নগরে প্রায় ১৩ হাজার বৈধ রিকশা রয়েছে। এর বাইরে আরও অন্তত ১৫ থেকে ২০ হাজার অবৈধ রিকশা রয়েছে। এসব অবৈধ রিকশার মধ্যে অন্তত ৩ হাজার ব্যাটারিচালিত রিকশা রয়েছে। এসব ব্যাটারিচালিত রিকশা উচ্চ আদালতের নির্দেশে নিষিদ্ধ রয়েছে। তবে নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে এসব রিকশা ঠিকই অবাধে চলাচল করছে।

নগরবাসী জানিয়েছেন, ব্যাটারিচালিত রিকশার পাশাপাশি প্যাডেলে চালিত নিবন্ধনহীন অবৈধ রিকশাও নগরে দেদার চলাচল করছে। এ ছাড়া শহরতলির বিভিন্ন ইউনিয়নের নিবন্ধিত রিকশা নীতিমালা লঙ্ঘন করে নগরে চলে আসায় যানজট বেড়েছে।

সিটি করপোরেশনের লাইসেন্স কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর বলেন, অবৈধ রিকশা কিংবা ব্যাটারিচালিত রিকশা পুলিশের জব্দ করার কথা। এরপরও সর্বোচ্চ নাগরিক সুবিধা নিশ্চিতের স্বার্থে সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষও মাঝেমধ্যে অবৈধ রিকশার বিরুদ্ধে উচ্ছেদ অভিযান চালায়। তবে খবর পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে অনেক রিকশাচালকই সটকে পড়েন। অভিযান শেষ হলেই এসব রিকশা পুনরায় নগরের রাস্তায় চলাচল শুরু করে দেয়। ঈদের পরপরই অবৈধ রিকশার বিরুদ্ধে সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ উচ্ছেদ অভিযান চালাবে।

সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (ট্রাফিক) জ্যোতির্ময় সরকার প্রথম আলোকে বলেন, ব্যাটারিচালিত রিকশাগুলোর চলাচল নিষিদ্ধ। অবৈধ এসব যান চোখের সামনে পড়লেই ট্রাফিক পুলিশ আটক করে আইনি ব্যবস্থা নেয়। এ কারণেই নগরে এসব যানের চলাচল এখন সীমিত হয়ে পড়েছে। গুরুত্বপূর্ণ কোনো সড়কেই এসব যান চলাচল করে না। এরপরও বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হবে, নগরে যেন অবৈধ এসব যান চলাচল করতে না পারে, সে জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হবে।