মালিবাগে খোঁড়াখুঁড়িতে হাঁটার জায়গাটুকুও নেই

মালিবাগে আবুজর গিফারি কলেজের সামনের গলির রাস্তা কেটে পয়োনিষ্কাশনের লাইন বসাচ্ছে ডিএসসিসি। রাস্তা কাটা থাকায় চলাচলে ভোগান্তি হচ্ছে বলেন বাসিন্দারা।  ছবি: প্রথম আলো
মালিবাগে আবুজর গিফারি কলেজের সামনের গলির রাস্তা কেটে পয়োনিষ্কাশনের লাইন বসাচ্ছে ডিএসসিসি। রাস্তা কাটা থাকায় চলাচলে ভোগান্তি হচ্ছে বলেন বাসিন্দারা। ছবি: প্রথম আলো

সড়কের মাঝখানে কয়েক ফুট চওড়া করে কাটা হয়েছে। খুঁড়ে তোলা মাটি রাখা হয়েছে পাশেই। এতে সরু সড়কটিতে হাঁটার কোনো জায়গা নেই। কাদা, পানি, মাটি ও পয়োবর্জ্যে রাস্তা দখল হয়ে গেছে। খুঁড়ে রাখা মাটির ভেতর দিয়েই চলতে হয় আশপাশের বাসিন্দা ও পথচারীদের।

মালিবাগ কাঁচাবাজার গলি থেকে শাহি মসজিদ পর্যন্ত গলিটি মালিবাগ বাজার রোড নামে পরিচিত। এই গলিতে বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের পাইপলাইন বসানোর কাজ করছে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। গলিটি এমনিতেই সরু। ১০ থেকে ১২ ফুট চওড়া। দুটি যানবাহন পাশাপাশি চলে না। এখন রাস্তা কাটার পর চলাচলের বিকল্প পথ না থাকায় এলাকাবাসীকে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।

এই গলির বাসিন্দা ফজলে কবির বলেন, ‘রাস্তার মাঝখানে কাটা। এর পাশেই আবার মাটির স্তূপ ও সিমেন্টের পাইপগুলো রাখা। বৃষ্টি হলেই পানি জমে। একসঙ্গে সব জায়গায় কাজ ধরেছে। মানুষ এ অবস্থায় হাঁটবে কীভাবে?’

গত শনিবার মালিবাগ বাজার এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, মালিবাগ রেললাইনের দক্ষিণে এই গলিতে কোনো অংশে নালা তৈরি কাজ করছেন শ্রমিকেরা। কোথাও আবার পাইপ বসানো শেষে নালায় ইট বসিয়ে সিমেন্ট দিয়ে তা পাকা করছেন। গলির উত্তর প্রান্তে রাস্তা কাটার কাজ চলছে।

এ গলিতেই আবু জর গিফারী কলেজ। শনিবার সকালে কলেজের প্রধান ফটকের সামনের রাস্তা এক্সকাভেটর দিয়ে কাটতে দেখা যায়। যে অংশে এখনো কাটা হয়নি, সেখানে বড় সিমেন্টের পাইপগুলো সারি করে রাখা আছে।

এখানেই একটি সাইনবোর্ডে ডিএসসিসির কাজের বিষয়ে বলা আছে। তবে রাস্তার শুরুতে সাইনবোর্ড না থাকায় এই গলিতে ঢুকে আবার ফিরে যেতে হচ্ছে রিকশা, মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহনকে।

রাস্তার ওপর রাখা মাটির স্তূপের কারণে স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় পাঁচ ফুট উঁচু হয়ে গেছে সড়ক। আবার কোথাও তা নিচু। এই উঁচু-নিচু পথে হাঁটতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে সব মানুষ। তবে শিশু ও প্রবীণেরা বেশি ভোগান্তিতে পড়ছে। শিশুদের মা বা বাবা তাদের চলাচলে সহযোগিতা করছেন। তবে প্রবীণদের জন্য এই সড়কে চলাচলে সমস্যা বেশি।

অবসরপ্রাপ্ত এক ব্যাংক কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম ভূঁইয়া মালিবাগ বাজারে যাবেন বলে বের হয়ে কাদামাটি মাড়িয়ে হাঁটতে পারছিলেন না। তাঁর শরীর কাঁপছিল। উঁচু-নিচু পথ পার হতে গিয়ে আরেকজনের সাহায্য নেন। তিনি বলেন, ‘শরীর কাঁপছে, পা ফেলতে পারছি না। রাস্তা ভালো থাকতে হাঁটতে পারতাম। এখন ভয় লাগে কখন পড়ে যাই।’

এ এলাকাটি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১২ নম্বর ওয়ার্ডের অধীনে। স্থানীয় কাউন্সিলর গোলাম আশরাফ তালুকদার বলেন, সারা রাত বৃষ্টি হলেই এ এলাকায় জলাবদ্ধতা হয়। ডিএসসিসির পরিকল্পনামতোই এখানে কাজ করা হচ্ছে। সাড়ে তিন ফুট নালা বসানোর জন্য চার ফুট রাস্তা কাটা হচ্ছে। আবার মাটিগুলো রাস্তার ওপর রাখা হয়। এতে মানুষের হাঁটাচলার রাস্তাও কমে যায়। তবে উন্নয়নকাজ না করা হলে দুর্ভোগও কমবে না বলে মত তাঁর।

পানিনিষ্কাশনের নালা বসানোর কাজ করছে ভূঁইয়া অ্যান্ড ভূঁইয়া ডেভেলপমেন্ট নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

এলাকায় গিয়ে এ প্রতিষ্ঠানের সুপারভাইজার ওবায়দুল হককে কাজে তদারক করতে দেখা যায়। তিনি মালিবাগের কাজটা ১৫ দিন আগে শুরু করার কথা জানান। তবে কবে নাগাদ শেষ হবে তা তিনি বলতে পারেননি।

ডিএসসিসির নির্বাহী প্রকৌশলী (অঞ্চল ২) হারুন অর রশীদ প্রথম আলোকে বলেন, বর্ষায় অতিবৃষ্টির কারণে রাস্তা ও মাঠে জমে থাকা পানি দ্রুত
সরানোর জন্য এখানে পানিনিষ্কাশনের নালা তৈরি করা হচ্ছে। রাস্তা কাটার পর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে মাটি সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দেওয়া থাকে। রোদ ওঠার পর মাটি শুকিয়ে গেলে তা সরিয়ে নেওয়া হবে। আর তাতে মানুষের হাঁটাচলার সমস্যা দূর হবে। তিনি জানান, ডিএসসিসির ১১ ও ১২ নম্বর ওয়ার্ডের মালিবাগ ও শাহজাহানপুরে পানিনিষ্কাশনের এই কাজ করা হচ্ছে। এ কাজের মেয়াদ এক বছর আছে। তবে দুই মাসের মধ্যে দুই এলাকার পাইপ বসানোর কাজ শেষ হবে। আর ঈদের দু-তিন দিন আগে কাজ বন্ধ রাখা হবে। মানুষের হাঁটাচলায় সুবিধার জন্য সে সময় রাস্তার ওপর থাকা মাটি বা নির্মাণসামগ্রী সরিয়ে রাখা হবে।