বিপদ আরও বাড়াল অনলাইন

সূত্র: জামালপুর রেলওয়ে স্টেশন
সূত্র: জামালপুর রেলওয়ে স্টেশন

জামালপুর স্টেশন থেকে ঢাকাগামী চারটি আন্তনগর ট্রেন চলাচল করে। চাহিদার তুলনায় এখানে আসন বরাদ্দ কম। তাই টিকিট নিয়ে হাহাকার। অনেকে টিকিট না পেয়ে দীর্ঘ পথ ট্রেনে দাঁড়িয়ে থেকেই যাতায়াত করেন। সম্প্রতি এই চারটি ট্রেনের অর্ধেক টিকিট অনলাইনে কাটার ব্যবস্থা চালু করায় এই দুর্ভোগ আরও বেড়েছে।

অভিযোগ, একটি চক্র অনলাইন থেকে টিকিট কেটে কালোবাজারে সেগুলো কয়েক গুণ দামে বিক্রি করছে। আবার যাত্রীদের অনেকে অনলাইনে টিকিট কাটার পদ্ধতি সম্পর্কে অভ্যস্ত নন। ফলে তাঁদের দুর্ভোগ আরও বেড়েছে।

খানাখন্দে ভরা রাস্তা ও সড়কপথে জামালপুর থেকে ঢাকায় যাতায়াতের জন্য ভালো মানের বাস সার্ভিস নেই। তাই পুরো জেলার মানুষ ট্রেনের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু বরাদ্দকৃত আসনের চেয়ে প্রায় তিন গুণ বেশি যাত্রী এ পথে যাতায়াত করেন। আসনসংকটের কারণে প্রতিদিন কয়েক হাজার যাত্রী চরম দুর্ভোগের মধ্যে রয়েছেন। এর মধ্যে চারটি ট্রেনের বরাদ্দকৃত অর্ধেক আসন অনলাইনে কাটার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে বেশির ভাগ যাত্রীই অনলাইন সিস্টেম সম্পর্কে অবগত নন এবং এই পদ্ধতিতে টিকিট কাটতে পারেন না। ফলে সংকট আরও তীব্র আকার ধারণ করেছে।

জামালপুর রেলস্টেশন সূত্র জানায়, ঢাকা-জামালপুর রেলপথে ২৪ ঘণ্টায় জামালপুর রেলস্টেশন দিয়ে চারটি আন্তনগর ট্রেন চলাচল করে। ট্রেনগুলো হচ্ছে—আন্তনগর তিস্তা এক্সপ্রেস, ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেস, যমুনা এক্সপ্রেস ও অগ্নিবীণা এক্সপ্রেস। এর মধ্যে আন্তনগর তিস্তা এক্সপ্রেসের শীতাতপনিয়ন্ত্রিত (এসি) ৪৫টি আসন, শীতাতপনিয়ন্ত্রিত কেবিন ১২, সাধারণ কেবিন ১৫ ও শোভন চেয়ার ১২০, ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেসের প্রথম শ্রেণি ২৩টি, শোভন চেয়ার ৫০ ও শোভন সাধারণ ৮৫, যমুনা এক্সপ্রেসের প্রথম শ্রেণি ২৩টি, কেবিন ১৫, শোভন চেয়ার ৫০ ও শোভন সাধারণ ২৫, অগ্নিবীণা এক্সপ্রেসের প্রথম শ্রেণি ২৩টি, কেবিন ১৫, শোভন চেয়ার ৫০ ও শোভন সাধারণ ৬০টি আসন জামালপুর স্টেশনের জন্য বরাদ্দ। চারটি ট্রেনে মোট আসন বরাদ্দ ছিল ৫৯৬টি। গত সপ্তাহ থেকে বরাদ্দকৃত ২৯৮টি আসন অনলাইনে কেটে নেওয়ার জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে। এখন থেকে প্রতিটি ট্রেনের বরাদ্দকৃত আসনের অর্ধেক টিকিট অনলাইনে কাটা হবে।

পৌর শহরের বশাকপাড়ার ময়না আকন্দ বলেন, যুগ যুগ ধরে এই জেলার মানুষ ট্রেনে চলাচল করে। সড়কপথে যাতায়াত সাধারণ মানুষের জন্য ব্যাপক কষ্টসাধ্য। একমাত্র ট্রেনযাত্রাই আরামদায়ক। কিন্তু এত সংখ্যক যাত্রীর জন্য অল্প টিকিট। তিনি বলেন, আন্তনগর তিস্তা এক্সপ্রেস ট্রেনের তিনটি টিকিটের জন্য তিনি তিন দিন ধরে স্টেশনে ঘুরেছেন। কিন্তু আরও কদিন আগেই নাকি টিকিট শেষ হয়ে গেছে। কারণ, সব ট্রেনের অর্ধেক টিকিট অনলাইনের জন্য কেটে নেওয়া হয়েছে। তাই টিকিটসংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। এ জেলায় আরও কয়েকটি আন্তনগর ট্রেন বরাদ্দ দিলে মানুষের দুর্ভোগ হয়তো লাঘব সম্ভব।

শহরের গেটপাড় এলাকার বাসিন্দা রাসেল মিয়া। তিনি বলেন, জামালপুর স্টেশন থেকে শেরপুর জেলা সদর কাছাকাছি হওয়ায় সেখান থেকে প্রচুরসংখ্যক যাত্রী ট্রেনে যাতায়াত করেন। তা ছাড়া পুরো জেলার প্রশাসনিক কর্মকর্তারা ট্রেনে যাতায়াত করেন। বেশির ভাগ টিকিট ভিআইপিরা নিয়ে যান। অল্পসংখ্যক টিকিট সাধারণ মানুষ পান। টিকিট নিয়ে মাঝেমধ্যে টিকিট মাস্টারদের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডায় জড়াতে হয়। তা ছাড়া স্থানীয় কিছু লোক টিকিট কালোবাজারিও করছে। তাই অনেক সময় তিন গুণ বেশি দামেও টিকিট পাওয়া যায়।

জামালপুর স্টেশনমাস্টার মো. শাহবুদ্দিন জানান, প্রতিদিন জামালপুর স্টেশন থেকে ১০–১২ হাজার যাত্রী যাতায়াত করেন। ঢাকাগামী ট্রেনগুলোয় চাহিদার চেয়ে অনেক কম আসন বরাদ্দ থাকায় টিকিট বিক্রি করতে হিমশিম খেতে হয়।

স্টেশনমাস্টার বলেন, আসনসংকট নিরসনের একমাত্র উপায় এই পথে আরও কয়েকটি নতুন ট্রেন চালু করা। ২ মে থেকে অনলাইনে টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে। অনলাইনে যে কেউ যেকোনো স্থান থেকে টিকিট কিনতে পারেন। সেখানে কিনে যদি কেউ কালোবাজারে বিক্রি করেন, সেটা রোধ করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়।