অভিবাসনে সমস্যা অনেক, ব্যয় নিয়ন্ত্রণ সবচেয়ে বড়

ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার নির্মাণশ্রমিক নাসির মুন্সী গত অক্টোবরে মালয়েশিয়া গিয়েছিলেন। কুয়ালালামপুর বিমানবন্দর থেকে বেরোতে পারেননি। তিন দিন পর তাঁকে দেশে ফিরে আসতে হয়।
নাসির জানেন না কোন জনশক্তি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান তাঁর চাকরির ব্যবস্থা করেছিল। তিনি পরিচিত দালালকে ৩ লাখ ৬৫ হাজার টাকা দিয়েছিলেন। একইভাবে ফিরে এসেছেন তাঁর যাত্রাসঙ্গী ৬৩ জন।

প্রত্যেকেরই একই রকম খরচ পড়েছে। অথচ সরকার ২০১৭ সাল থেকে বেসরকারি খাতে মালয়েশিয়া যাওয়ার খরচ ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে। খরচ নির্ধারিত আছে ১৪টি দেশের জন্য।

এখন বছরে গড়ে ছয়-সাত লাখ লোক ১৬৮টি দেশে যান। তাঁদের একটি নগণ্য অংশকে সরকার নির্দিষ্ট কিছু বাজারে পাঠায়। প্রায় সবাই আসলে যান বেসরকারি রপ্তানিকারক তথা রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে। মধ্যে আবার দালালেরা আছেন। এজেন্সি-দালাল মিলে নির্ধারিত ব্যয়ের অনেক বেশি টাকা আদায় করে নিচ্ছে। সরকার কোনোভাবেই এই জুলুমবাজি থামাতে পারছে না।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, দালাল ও এজেন্সিগুলোর ‘দুষ্টচক্র’ না ভাঙলে অভিবাসন ব্যয় কমানো যাবে না। তাঁর মতে, এজেন্সিগুলোর মতো মধ্যস্বত্বভোগীদেরও নিবন্ধিত করা যেতে পারে। তারপর নজরদারি চাই যেন নিবন্ধিত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ছাড়া কেউ এ কাজে যুক্ত হতে না পারে।

এ খাতের প্রধান চ্যালেঞ্জ হচ্ছে দালাল-এজেন্টদের দৌরাত্ম্য আর অতিরিক্ত খরচ। এমন কথা বলেছেন একাধিক আন্তর্জাতিক সংস্থার কর্মকর্তা, সরকারি কর্মকর্তা, এমনকি খোদ অভিবাসন খাতের একাধিক ব্যবসায়ী। এর উল্টো পিঠেই আছে বেআইনি অভিবাসনের চাপ।
জায়গাজমি বেচে সর্বস্বান্ত হয়ে যে কর্মজীবীরা বিদেশে যান, তাঁদের দক্ষতা কম, ভাষা জানেন না। আর্থিক বা সামাজিক সুরক্ষা থাকে না। নারীর থাকে নির্যাতনের ঝুঁকি। ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসা ব্যক্তিদের পুনর্বাসন একটি বড় চ্যালেঞ্জ।

সরকারের আরেক মাথাব্যথা শ্রমবাজারের অনিশ্চয়তার মোকাবিলা করা। মনোযোগ দরকার নতুন বাজার খোঁজার উদ্যোগে।

বেসরকারি খাতের এজেন্সিগুলোর সংগঠন বায়রার মহাসচিব শামীম আহমেদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, অভিবাসন বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের দ্বিতীয় খাত। সরকার এতে তেমন গুরুত্ব দিচ্ছে না। কিন্তু সুশাসন ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করলে এটি তৈরি পোশাক খাতকে ছাড়িয়ে যাবে।

খরচ বেশি, দক্ষতা কম
মার্কিন ডলারপ্রতি ৮৪ টাকা ধরে বেসরকারি খাতে দেশ-নির্বিশেষে বাংলাদেশের গড় অভিবাসন ব্যয় ৩ লাখ টাকার ওপরে। এ খরচ ভারত, ফিলিপাইন ও ইন্দোনেশিয়ার চেয়ে চার-পাঁচ গুণ এবং পূর্ব ও পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলোর তুলনায় সাত গুণ বেশি।
বিভিন্ন গবেষণা প্রতিবেদনের সূত্র ধরে খরচের এ হিসাব দিয়েছে জাতিসংঘের অংশী প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) বাংলাদেশ কার্যালয়। তাদের হিসাবে, কুয়েত যেতে শ্রীলঙ্কায় একজন অভিবাসী ব্যক্তির গড়ে ২৭ হাজার টাকার মতো লাগে। ভারতে লাগে লাখ খানেক টাকা। আর বাংলাদেশে লাগে আড়াই লাখ টাকার বেশি। যদিও সরকার-নির্ধারিত খরচ ১ লাখ টাকার সামান্য বেশি।

১৫ মে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সামনে এক এজেন্সি মালিক প্রথম আলোকে বলেন, সৌদি আরবে সাড়ে ৪ লাখ টাকায় কর্মী পাঠাচ্ছেন। সরকারের বেঁধে দেওয়া অঙ্কটি দেড় লাখের কিছু বেশি।

এদিকে বাংলাদেশি অভিবাসীরা গড়ে মাসে ১৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা আয় করেন। তাতে খরচ একেবারেই পোষায় না। জাতিসংঘ-ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অনুসারে, কর্মীর অভিবাসন ব্যয় তাঁর বার্ষিক মোট আয়ের ১০ শতাংশের বেশি হবে না। অর্থাৎ কেউ যদি মাসে ২৫ হাজার টাকা হিসাবে বছরে ৩ লাখ টাকা আয় করেন, তাঁর অভিবাসন ব্যয় ৩০ হাজার টাকার মধ্যে থাকতে হবে। কুয়েতে যেতে সরকার-নির্ধারিত খরচই এর পাঁচ গুণ। আদতে খরচ হয় ১০ গুণের বেশি।

মন্ত্রণালয়ের সচিব রৌনক জাহানের মতে, অভিবাসন ব্যয় কমানোর কোনো গাণিতিক সূত্র নেই। পুরো খাতকে সুশাসনের আওতায় আনতে একটি সমন্বিত ব্যবস্থা গড়ে তোলার পাশাপাশি জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধিতে জোর দেওয়া হচ্ছে।
সচিবসহ মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেছেন, ব্যয় কমানোর জন্য অনলাইনভিত্তিক একটি সমন্বিত কাঠামো গড়ে তোলা হচ্ছে। কানাডার একটি কোম্পানি সফটওয়্যার তৈরি করছে। এ সফটওয়্যারে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিটি ধাপের আর্থিক লেনদেনসহ সব ধরনের তথ্য থাকবে।

কর্মকর্তারা বলছেন, বেআইনি পথে বিদেশ যাওয়া ঠেকাতে মন্ত্রণালয় জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা কর্মশালা চালাচ্ছে। বিশেষ টাস্কফোর্স এজেন্সিগুলোর কার্যক্রম তদারকি করছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের সংখ্যাও বাড়ানো হচ্ছে। সম্প্রতি দালাল ঠেকাতে বেসরকারি রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোকে জেলা পর্যায়ে কার্যালয় খুলতে বলা হয়েছে।

বায়রার একাধিক শীর্ষ নেতা প্রথম আলোকে বলেছেন, জেলায় কয়েকটি করে প্রতিষ্ঠান একত্রে অফিস নিতে যাচ্ছে। ব্যবসায়ীরা মনে করেন, সরকার অভিবাসন খরচের জন্য ব্যাংক থেকে স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা করতে পারে। অভিবাসীরা বেতন থেকে কিস্তিতে ঋণ শোধ করবেন।

দক্ষতা না থাকায় বাংলাদেশের কর্মীদের আয় কম। গত ৪২ বছরে সর্বমোট অভিবাসী কর্মীর প্রায় অর্ধেকই অদক্ষ কর্মী। এক-তৃতীয়াংশ দক্ষ কর্মী। বাদবাকিদের বড় অংশ আধা দক্ষ। ছোট্ট একটি অংশ পেশাজীবী।
তবে গত কয়েক বছর দক্ষ কর্মীর হার বেড়েছে। গত বছর যেমন তাঁরা ছিলেন ৪৩ শতাংশ। এখন দেশজুড়ে সরকারের ৭০টি প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান আছে। মন্ত্রণালয়ের হিসাবে ২০১৮ সালে প্রায় ৭ লাখ লোক প্রশিক্ষণ নিয়েছেন।
তবে খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করেন, এলোপাতাড়ি নয়, বিভিন্ন দেশের চাহিদা অনুযায়ী কাজের প্রশিক্ষণ দরকার। ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন ও শ্রীলঙ্কা তেমনটাই করছে।

বেআইনি অভিবাসন অপ্রতিহত
বেআইনি পথে সাগর-মরু-জঙ্গল পাড়ি দিয়ে ভাগ্যের খোঁজে যাঁরা দেশ ছাড়ছেন, তাঁদেরও কিন্তু কয়েক লাখ টাকা করে খরচ হয়। থাকে জীবনের ঝুঁকি। সর্বশেষ ৯ মে লিবিয়া থেকে তিউনিসিয়ার উপকূল হয়ে ইতালি যেতে গিয়ে মারা যান ৩৯ বাংলাদেশি।
প্রায়ই মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ, মালয়েশিয়া ও ইউরোপের কিছু দেশে অবৈধ অভিবাসীদের আটক হওয়ার খবর জানা যায়। ইউরোপীয় কমিশনের পরিসংখ্যান অধিদপ্তর ইউরোস্ট্যাটের তথ্য অনুযায়ী, গত আট বছরে বেআইনিভাবে ইউরোপে গেছেন ১ লাখ ৩০ হাজারের বেশি বাংলাদেশি।

মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, গত ১০ বছরে সরকার বিভিন্ন দূতাবাসে ১৭টি শ্রম শাখা খুলেছে। আগে এর সংখ্যা ছিল ১৩। সরকার চেষ্টা করছে এই ভাগান্বেষীদের দুর্ভোগ কমাতে। কিন্তু বেআইনি অভিবাসন-প্রক্রিয়ায় বিদেশি চক্রও জড়িত থাকে। সরকার পেরে ওঠে না।
এদিকে ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিভিন্ন দেশের দূতাবাসে স্থানীয় ভাষায় দক্ষ জনবল বাড়ালে সুবিধা হবে। এ ছাড়া দূতাবাসগুলোতে আইন শাখা করা হলে প্রবাসীদের সহায়তা করা যাবে।

ব্যর্থ ও বিপন্ন যাঁরা
মন্ত্রণালয় ফিরে আসা অভিবাসী কর্মীদের কোনো হিসাব দেয় না। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের অভিবাসন বিভাগের হিসাবে প্রতি তিনজনে একজন অভিবাসী ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসেন। তাঁরা আর্থিক ও সামাজিকভাবে বেকায়দায় পড়ে যান। সরকার এখন আইওএমের সহযোগিতায় ব্র্যাকের মাধ্যমে এভাবে প্রত্যাগত কর্মীদের দেখভাল করছে।

সবচেয়ে আতান্তরে পড়েন নারী কর্মীরা। সৌদি আরব নারী গৃহকর্মী নেওয়ার জন্য ২০১৫ সালে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করেছিল। একজন নারীর বিপরীতে দুজন পুরুষ কর্মী নেওয়ার শর্ত ছিল। বাংলাদেশ থেকে অভিবাসী ৮০ ভাগ নারী এ দেশেই যাচ্ছেন।

কিন্তু প্রতি মাসেই নারী গৃহকর্মীরা বিভিন্ন অভিযোগ ও নির্যাতনের চিহ্ন নিয়ে ফিরে আসছেন। সৌদি আরবের বাংলাদেশ দূতাবাস বলছে, গত বছরের জানুয়ারি থেকে এ বছরের মার্চ পর্যন্ত দেশে ফিরেছেন ২ হাজারের বেশি নারী। নারীর অভিবাসন কমেছে প্রায় ১৭ শতাংশ।
অভিবাসী নারী শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করে বাংলাদেশ নারী শ্রমিক কেন্দ্র। সংগঠনটির নির্বাহী পরিচালক সুমাইয়া ইসলাম বলেন, অধিকাংশ সৌদি গৃহকর্তা যৌন নির্যাতন করে থাকেন। যেকোনো নির্যাতনের জন্য নিয়োগকারীকে শাস্তি দিতে হবে। সরকার নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারছে না।

পুরোনো ও নতুন বাজার
১৯৭৬ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত চিত্র বলছে, বাংলাদেশের শ্রমবাজারের ৮০ শতাংশের বেশি মধ্যপ্রাচ্যকেন্দ্রিক। মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুর মিলিয়ে ১৫ শতাংশের মতো। অবশিষ্ট বাজার নানা দেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। একক দেশ হিসেবে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও মালয়েশিয়া বড় বাজার। তিনটিই কমবেশি অস্থিতিশীল।

ইদানীং মালয়েশিয়া দ্বিতীয় বৃহত্তম শ্রমবাজার হয়ে উঠেছিল। কিন্তু দেশটি আট মাসের বেশি হলো লোক নিচ্ছে না। সরকার দফায় দফায় বৈঠক করেও সুরাহা করতে পারছে না। সৌদি আরবে বেকারত্ব বেড়েছে। ফলে শ্রমবাজার সংকুচিত হয়েছে। আরব আমিরাতের বাজার খুলেছে, তবে শুধু গৃহশ্রমিক খাতে।

জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) হিসাবে, সব মিলিয়ে গত বছর জনশক্তি রপ্তানি কমেছে ২৭ শতাংশ। ২০১৮ সালে বৈধভাবে ৭ লাখের বেশি লোক বিদেশে কাজ করতে যান। ২০১৭ সালে গিয়েছিলেন ১০ লাখের মতো। এ বছরের প্রথম চার মাসেও ধারা নিম্নগামী।

বিএমইটি গত বছর ৫৩টি দেশে জনশক্তি রপ্তানির সম্ভাবনা নিয়ে একটি গবেষণা করেছিল। গত এক দশকে ৯৭টি দেশ থেকে বেড়ে শ্রমবাজার ১৬৮টি দেশে ছড়িয়েছে। তবে অধিকাংশ দেশেই কর্মী যাচ্ছে হাতে গোনা। সত্যিকার অর্থে নতুন শ্রমবাজার তৈরি হচ্ছে না।
দীর্ঘদিন ধরে আন্তর্জাতিক একাধিক সংস্থায় অভিবাসন বিষয়ে কাজ করছেন আসিফ মুনীর। তিনি বলেন, দালালদের হয় বৈধ করতে হবে, নয়তো থামাতে হবে। নতুন বাজারের চাহিদা বিচার করে দক্ষ কর্মী গড়তে হবে। দূতাবাসগুলোতে অভিবাসনে অভিজ্ঞ জনবল দিতে হবে। অভিবাসীর সংখ্যা নয়, আসিফ গুরুত্ব দিচ্ছেন গুণগত মান বাড়ানোকে। (শেষ)

তাসনিম সিদ্দিকী
তাসনিম সিদ্দিকী

অভিমত
সরকারকে বাস্তবতা বুঝে ঠিক কাজটি করতে হবে
তাসনিম সিদ্দিকী
প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, রামরু
জীবনের পরোয়া না করেই ঝুঁকি নিচ্ছেন অভিবাসীরা। পরিবারের ভবিষ্যৎ সুরক্ষার জন্য নৌকায় চেপে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপের পথে ছুটছেন তাঁরা। অভিবাসনবিষয়ক গবেষণা সংস্থা রামরু দেখেছে, ঝুঁকির কথা জেনে-বুঝেই এভাবে যেতে আগ্রহী হচ্ছেন ৯১ শতাংশ বাংলাদেশি।

এ মনস্তত্ত্ব বুঝতে হবে। অবৈধ অভিবাসন পুরোপুরি বন্ধ করা সম্ভব নয়। গন্তব্য দেশটিতে চাহিদা আছে বলেই অভিবাসীরা যাচ্ছেন। যেসব দেশে কাজের চাহিদা আছে, সেগুলোর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে কর্মী পাঠানো যেতে পারে।
যাঁরা অভিবাসনে আগ্রহী, তাঁরা ঝুঁকি বা ব্যয়ের তোয়াক্কা করছেন না। তাঁদের আটকানো যাবে না। বরং তাঁদের কাজের নিশ্চয়তা এবং জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

মালয়েশিয়া যেতে সরকার-নির্ধারিত অভিবাসন ব্যয় সর্বোচ্চ ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা। অথচ বেসরকারি খাতে একজন অভিবাসীর ব্যয় হচ্ছে সাড়ে তিন থেকে চার লাখ টাকা। মাত্র ১০টি এজেন্সির মাধ্যমে কর্মীরা মালয়েশিয়া গিয়েছেন। এত অল্প এজেন্সি থাকার পরও ব্যয় নিয়ন্ত্রণে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি। কাউকে শাস্তিও দেওয়া হয়নি।

মধ্যস্বত্বভোগীর কারণেই অভিবাসন ব্যয় ক্রমাগত বাড়ছে। শুধু এ দেশে নয়, গন্তব্য দেশটিতেও একটি মধ্যস্বত্বভোগী চক্র গড়ে উঠেছে। তাদের বিরুদ্ধেও সরকারি পর্যায়ে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা করে ব্যবস্থা নিতে হবে।

এ ছাড়া ভিসা কেনাবেচা বন্ধ করতে না পারলে অভিবাসন ব্যয় কমানো কঠিন হবে। দক্ষ কর্মী বাড়লে এটা সবচেয়ে কার্যকরভাবে বন্ধ করা যাবে। সাধারণত দক্ষ কর্মীর ভিসা টাকা দিয়ে কেনা যায় না।

নারীর কাজ করার অধিকার সাংবিধানিক। তাই নারী কর্মীর অভিবাসন বন্ধ করার কথা বলার সুযোগ নেই। নারীর নিরাপদ অভিবাসনে সরকারের উদ্যোগী হওয়া উচিত। ফিলিপাইন একটি চমৎকার উদাহরণ হতে পারে। সৌদি আরব দিয়ে নারী কর্মী পাঠানো শুরু করেছিল দেশটি। পরে দক্ষতা বাড়িয়ে এখন ইউরোপের শ্রমবাজারে যাচ্ছেন তাদের নারী কর্মীরা।

গত কয়েক বছরে বাংলাদেশ থেকে কয়েক লাখ নারী অভিবাসী মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে গিয়েছেন। অধিকাংশ গিয়েছেন সৌদি আরবে। জর্ডান বা লেবাননে নারীরা মোটামুটি ভালো আছেন। কিন্তু সৌদি আরবে তাঁদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়নি।

দ্বিপক্ষীয়ভাবে এটির সমাধান হবে না। জাতিসংঘের সহায়তায় বহুপক্ষীয় ফোরাম এ ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারে। আপাতত সৌদি আরবের শহর এলাকার বাইরে নারী পাঠানো বন্ধ করতে পারে সরকার। কেননা প্রত্যন্ত এলাকায় নির্যাতনের হার বেশি।

রামরুর গবেষণা বলছে, ১৯ শতাংশ লোক টাকা দিয়েও বিদেশে যেতে পারছে না। এতে তাঁদের গড়ে আর্থিক ক্ষতি হয় প্রায় ২ লাখ টাকা। ৩২ শতাংশ অভিবাসী বিদেশে গিয়ে চাকরি না পাওয়াসহ নানা হয়রানির মুখে পড়ছেন। আর বাকি ৪৯ শতাংশ চাকরি পাচ্ছেন।
এসব হয়রানি ঠেকাতে দালাল বন্ধ করতে চায় সরকার। দালাল দূর করা সম্ভব নয়। অভিবাসনের প্রতিটি ধাপে দালালের সহায়তা লাগে। তাই তাঁদের নিবন্ধনের ব্যবস্থা করে প্রতিটি কাজের জন্য দালালদের ফি নির্ধারণ করে দেওয়া যেতে পারে।

যাঁরা অভিবাসনে আগ্রহী, তাঁরা পরিচিত দালালে আস্থা পান। জেলায় জেলায় আলাদা করে এজেন্সির কার্যালয় নেওয়ার সরকারি নির্দেশনাও বাস্তবসম্মত নয়। বরং এজেন্সিগুলোর সংগঠন বায়রা সব জেলায় কার্যালয় খুলতে পারে। সেখানে সব এজেন্সির কর্মীরা বসে কাজ করতে পারবেন।