ভেজাল জৈব সারের বিপদে কৃষক

এসআরডিআই
এসআরডিআই

ধানের দাম নিয়ে সারা দেশের কৃষকেরা চিন্তিত, সরকারও এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছে। এরই মধ্যে কৃষকের জন্য দুঃসংবাদ হচ্ছে, তাঁদের ফসলে ব্যবহৃত জৈব সারের বেশির ভাগই ভেজাল ও নিম্নমানের। দেশে বেশি ব্যবহৃত হয় এমন ৪৫টি জৈব সারের নমুনা পরীক্ষা করে ৩৯ টিতে ভেজাল পেয়েছে সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট (এসআরডিআই)।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাসায়নিক সারের অতি ব্যবহারের কারণে ফসল ও মাটির ক্ষতি হয়। এই যুক্তি দিয়ে কৃষি মন্ত্রণালয় ও পরিবেশবাদীরা জৈব সার ব্যবহারে কৃষকদের উৎসাহিত করে আসছেন। এ ধরনের সার ব্যবহারে মাটির স্বাস্থ্য ভালো থাকে এবং ফসলের মান ও উৎপাদন ভালো হয় বলে পরামর্শ দেওয়া হয়। কিন্তু ভেজাল সার ব্যবহারে উল্টো ফসলে নানা ক্ষতিকারক উপাদান যুক্ত হচ্ছে। এতে ফসলে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান থাকছে না, ফলনও ভালো হচ্ছে না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে এসআরডিআইর পরিচালক বিধান কুমার ভান্ডার প্রথম আলোকে বলেন, ‘কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে আমাদের ৪৫টি জৈব সারের নমুনা দেওয়া হয়। এগুলো পরীক্ষা করে ৩৯ টিতে ভেজাল ও নিম্নমান পেয়েছি। পরীক্ষার প্রতিবেদন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কাছে দিয়ে দিয়েছি। তারা সারের নিবন্ধন দেওয়া ও মান নিয়ন্ত্রণের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষ।’

গত বছরের বিভিন্ন সময় সারা দেশ থেকে জৈব সারের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। মূলত দৈবচয়নের ভিত্তিতে সারের নমুনা সংগ্রহ করে এসআরডিআইয়ের কাছে পাঠায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। তবে শুধু এই বছর না, এর আগেও এসআরডিআই থেকে জৈব সারের যেসব নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে, তার বেশির ভাগই নিম্নমানের ও ভেজাল পাওয়া গেছে। এর মধ্যে তিনটি কোম্পানির জৈব সারের নিবন্ধন বাতিল করে কৃষি মন্ত্রণালয়।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাঠসেবা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সারা দেশে বছরে ৬ লাখ টন জৈব সার কৃষকেরা ব্যবহার করে থাকেন। এর মধ্যে সাড়ে ৫ লাখ টন সার কৃষক নিজে ও স্থানীয় পর্যায়ের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা তৈরি করেন। বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদিত হয় ৫০ হাজার টন সার। কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে নিবন্ধন পাওয়া ২০০টি প্রতিষ্ঠান এসব সার উৎপাদন করে। আরও ৮০০ প্রতিষ্ঠান জৈব সার আমদানি ও বাজারজাতকরণের অনুমতি পেয়েছে। পরীক্ষায় ভেজাল ও নিম্নমান পাওয়া জৈব সারের বেশির ভাগই বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করা জৈব সার। এসব সারের বেশির ভাগই কৃষক বেশি ব্যবহার করেন।

>

দেশে ব্যবহৃত এমন ৪৫টি জৈব সারের নমুনা পরীক্ষা
৩৯ টিতে ভেজাল পেয়েছে মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট
ভেজাল সার ব্যবহারে ফসলে ক্ষতিকারক উপাদান যুক্ত হচ্ছে
ফসলে পুষ্টি উপাদান থাকছে না, ফলনও ভালো হচ্ছে না

কৃষি মন্ত্রণালয়ের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা সূত্রে জানা গেছে, ভেজাল ও নিম্নমানের সারের ব্যাপারে চলতি মাসের মধ্যে কৃষি মন্ত্রণালয়ে একটি বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। সেখানে এসব সার কোম্পানির বিষয়ে চূড়ান্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সরকারের সার ব্যবস্থাপনা আইন-২০০৬ অনুযায়ী, জৈব সারে প্রয়োজনীয় উপাদান না থাকলে নিবন্ধন বাতিলের নিয়ম রয়েছে। একই সঙ্গে উৎপাদিত সার জব্দ করা এবং ইতিমধ্যে বিক্রি হওয়া সার ক্রেতাদের কাছ থেকে মূল্য ফেরত দিয়ে সংগ্রহ করতে হবে। ওই সার নিজ খরচে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে নষ্ট করতে হবে। ভেজাল সার ব্যবহারে কোনো কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হলে উৎপাদনকারী ও বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলাও করা যাবে। অপরাধের ধরন অনুযায়ী সার ব্যবস্থাপনা আইনে শাস্তির বিধানও রয়েছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক হামিদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ভেজাল সারের মধ্যে ভারী বস্তুকণাসহ নানা ধরনের ক্ষতিকারক উপাদান রয়েছে। এগুলো মাটি ও ফসলের মধ্যে গেলে তা মানুষের জন্য ক্ষতিকারক। এ ছাড়া যেসব কৃষক টাকা খরচ করে এসব সার কিনেছেন, তাঁরাও প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। ভেজাল সার উৎপাদনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।