ভাড়া দিয়ে বিপাকে মালিক

এক বছরের জন্য দোকানঘর ভাড়া দিয়ে বিপাকে পড়েছেন নেত্রকোনার কলমাকান্দা বাজারের সুকুমার সাহা রায়। চুক্তির নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে গেলেও ভাড়াটে ঘরটি ছাড়েননি। উল্টো মালিককে হয়রানি করতে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠিয়েছেন।
ওই ভাড়াটের নাম জহিরুল ইসলাম ওরফে মোস্তফা। তিনি কলমাকান্দা বাজারের ধনাঢ্য ব্যবসায়ী ও উপজেলা ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সভাপতি।

স্থানীয় বাসিন্দা ও বাজারের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কলমাকান্দা সদরের মধ্যবাজার এলাকায় প্রধান সড়কের পাশে সুকুমার সাহার একটি দোকানঘর রয়েছে। ঘরটির আয়তন প্রায় আট শতক জায়গায়। ঘরটি দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসায়ী জহিরুল ইসলাম ভাড়া নিয়ে তাঁর মনিহারি ব্যবসা পরিচালনা করে আসছিলেন। ১৪২৪ বঙ্গাব্দের ৩০ চৈত্র ভাড়ার মেয়াদকাল শেষ হলে সুকুমার সাহা আর জহিরুলের কাছে ভাড়া দিতে চাননি। তিনি নিজে ঘরটিতে ব্যবসা করতে চান। কিন্তু জহিরুল ঘরটি ছাড়তে চাননি। তিনি মালিকসহ বিভিন্নজনকে অনুরোধ করে আরও এক বছরের জন্য ভাড়া নিতে চান। শেষে ১৪২৫ বঙ্গাব্দের ১ বৈশাখ থেকে ওই বছরের ৩০ চৈত্র পর্যন্ত এলাকার তৎকালীন সাংসদ ছবি বিশ্বাসের মধ্যস্থতায় ঘরটি পুনরায় এক বছরের জন্য ভাড়া দেওয়া হয়। চুক্তি অনুযায়ী ওই বছরের জন্য জামানতহীন ভাড়া নির্ধারণ করা হয় প্রতি মাসে ১৬ হাজার টাকা। সে হিসাবে বছরে ১ লাখ ৯২ হাজার টাকা দাঁড়ায়। এতে ১০০ টাকা মূল্যের তিনটি স্টাম্পে মালিক ও ভাড়াটে ছাড়াও সাক্ষী হিসেবে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা চন্দন বিশ্বাস, সাধারণ সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন, জেলা পরিষদের সদস্য মো. ইদ্রিস আলী তালুকদার, নাজিরপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা ইসলাম উদ্দিনসহ ছয়জনের সই রয়েছে।

গত ৩০ চৈত্র ঘরটির চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়। কিন্তু মেয়াদ শেষ হলেও ভাড়াটে জহিরুল ঘরটি ছাড়েননি। উল্টো তিনি মালিকের বিরুদ্ধে গত ১০ এপ্রিল যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ আদালত থেকে একটি কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠান। ওই নোটিশে জহিরুল উল্লেখ করেন, তিনি গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর ঘরটি পুনরায় সুকুমার সাহার কাছ থেকে মৌখিকভাবে ১০ বছরের জন্য ভাড়া নিয়েছেন। এতে ৪০ লাখ টাকা জামানত ও প্রতি মাসে ২০ হাজার টাকা করে ভাড়া দেবেন। এ ছাড়া জামানতের ৪০ লাখ টাকা থেকে ৫ লাখ টাকা মালিককে সরল বিশ্বাসে ওই দিনই দিয়ে দিয়েছেন। এ সময় সাক্ষী হিসেবে পাঁচজন উপস্থিত ছিলেন। সাক্ষীদের মধ্যে একজন জহিরুলের বড় ভাইয়ের ছেলে, একজন ভাইয়ের মেয়ের জামাতা, একজন তাঁর ছেলের গৃহশিক্ষক ও অপর দুজন ব্যবসায়ী অংশীদার।

বিষয়টি নিয়ে ১৮ এপ্রিল বিকেলে কলমাকান্দা সরকারি পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ে সাবেক সাংসদ ছবি বিশ্বাসের সভাপতিত্বে সালিস বৈঠক হয়। এতে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার সুলতান গিয়াস উদ্দিন, উপজেলা কৃষক লীগের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল আলী বিশ্বাস, বণিক সমিতির সভাপতি মোসাদ্দেক হোসেন, সাধারণ সম্পাদক কাজল দেসহ নানা শ্রেণি–পেশার অন্তত সহস্রাধিক মানুষ উপস্থিত ছিলেন। তবে জহিরুল ওই সালিসে উপস্থিত ছিলেন না।

ঘরের মালিক সুকুমার সাহা জানান, জহিরুল তাঁকে হয়রানি করার লক্ষ্যে মিথ্যাভাবে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠিয়েছেন। তিনিও আইনজীবীর মাধ্যমে জহিরুলের নোটিশের জবাব দিয়েছেন।

সাবেক সাংসদ ছবি বিশ্বাস প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার মধ্যস্থতায় জহিরুলকে ওই দোকানঘরটি ভাড়া দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু মেয়াদ শেষ হলেও তিনি এখনো ঘরটি না ছেড়ে মিথ্যাভাবে আদালত থেকে একটি কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠিয়েছেন। এটা ঠিক নয়।’
কলমাকান্দা উপজেলা চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা মো. আবদুল খালেক তালুকদার এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বলেন, জহিরুল ইসলাম প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছেন। তিনি কাজটি ভালো করেননি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জহিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি যা বলার তা কারণ দর্শানোর নোটিশেই উল্লেখ করেছি।’