পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে স্কুলছাত্রীকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ

মাদারীপুর সদর উপজেলায় এক পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে দশম শ্রেণির এক স্কুলছাত্রীকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। নির্যাতনের শিকার ওই স্কুলছাত্রী আহত অবস্থায় গতকাল রোববার রাতে মাদারীপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, অভিযুক্ত পুলিশ সদস্য মোক্তার দীর্ঘদিন থেকে শহরে একটি বাসায় ভাড়া থাকেন। গতকাল রোববার রাতে তাঁর খালি বাসায় প্রতিবেশী এক স্কুলছাত্রীকে ডেকে নেন। এ সময় দরজা বন্ধ করে মোক্তার ওই স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টা ও মারধর করেন। পাশের বাড়ির এক যুবক বিষয়টি বুঝতে পেরে বাইরে থেকে মোক্তারের ঘরের দরজা বন্ধ করে দেন এবং স্থানীয়দের খবর দেন। মোক্তার এটা টের পেয়ে ওই স্কুলছাত্রীকে ঘরের পেছনের ভেন্টিলেটর দিয়ে নিচে ফেলে দেন। এতে ওই স্কুলছাত্রীর আহত হয়। পরে স্থানীয়রা ওই ছাত্রীকে উদ্ধার করে মাদারীপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করে।

মাদারীপুর সদর হাসপাতালের চিকিৎসা কর্মকর্তা অখিল সরকার প্রথম আলোকে বলেন, ‘যৌন নির্যাতনের কথা বলে এক কিশোরীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তার ডান পায়ের হাড় ভাঙা থাকায় সেখানে প্লাস্টার করা হয়েছে। এ ছাড়া তার শরীরে বিভিন্ন স্থানে ব্যথা রয়েছে।’

আজ সোমবার দুপুরে হাসপাতালের তৃতীয় তলায় গিয়ে দেখা যায় ওই স্কুলছাত্রীর ডান পায়ের অর্ধেকটা ব্যান্ডেজে মোড়া। চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি প্রথম আলোকে বলে, ‘জরুরি কাজ আছে বলে পুলিশ সদস্য আমাকে বাসায় ডাকেন। আমি বাসায় গেলে তিনি দরজা বন্ধ করে নির্যাতনের চেষ্টা করেন। ভয়ে আমি চিৎকার করলে তিনি আমাকে মারধর করেন। স্থানীয়রা টের পেয়ে বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে দিলে আমাকে তিনি ভেন্টিলেটর দিয়ে নিচে ফেলে দেন। পরে আমি উঠে দাঁড়াতে পারছিলাম না, তখন স্থানীরা আমাকে হাসপাতালে ভর্তি করে।’

নির্যাতনের শিকার ওই স্কুলছাত্রীর নানি বলেন, ওই স্কুলছাত্রীকে দেখার মতো কোনো অভিভাবক নেই। ওই ছাত্রীর বাবা আগেই মারা গেছেন এবং মায়ের মানসিক সমস্যা রয়েছে। তিনি দাবি করেন, অভিভাবক না থাকায় এ ঘটনায় বিচার পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

জানতে চাইলে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্য মোক্তার বলেন, তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। ষড়যন্ত্র করেই স্থানীয়রা তাঁর ঘরের দরজা বাইরের থেকে বন্ধ করে দেয়।

মাদারীপুর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. বদরুল আলম মোল্লা ঘটনার বিষয়ে প্রথম আলোকে বলেন, খবর শুনেই তিনি আজ দুপুরে মেয়েটির সঙ্গে দেখা করেছেন। মেয়েটি তাঁকে জানিয়েছে, পুলিশ সদস্য মেয়েটির ওপর শারীরিক নির্যাতন চালিয়েছেন। তিনি ওই স্কুলছাত্রীর পরিবারকে সকল আইনি সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বদরুল আলম আরও বলেন, ‘যেহেতু পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মৌখিকভাবে অভিযোগ করা হয়েছে আমরা বিষয়টা গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি। অভ্যন্তরীণ ভাবে দুই সদস্যের একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে। যদি তদন্তে দোষ প্রমাণিত হয় তবে অবশ্যই অভিযুক্ত ওই পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’