সাঙ্গু-মাতামুহুরী নদীর বিপন্নতা খুঁজতে প্রকল্প

বান্দরবানের আলীকদমের বাবুপাড়া এলাকা দিয়ে বয়ে যাওয়া মাতামুহুরী নদী। ছবি: সংগৃহীত
বান্দরবানের আলীকদমের বাবুপাড়া এলাকা দিয়ে বয়ে যাওয়া মাতামুহুরী নদী। ছবি: সংগৃহীত

বিপন্ন অবস্থা থেকে বান্দরবানের দুই প্রধান নদী শঙ্খ ও মাতামুহুরীর পুনরুদ্ধারের উপায় খুঁজতে একটি সমীক্ষা প্রকল্প হাতে নেওয়া হচ্ছে। সমীক্ষায় নদী দুইটির পানি কাঠামো বিশ্লেষণ, অববাহিকার জলধারা (ঝিরি, ঝরনা, ছড়া ও খাল) জরিপ, বিপন্নতার কারণ ও স্থল-জলজ প্রাণবৈচিত্র্যের বাস্তুসংস্থানসংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য-উপাত্ত তুলে আনা হবে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন, এ সমীক্ষা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে পরবর্তী সময়ে দুই নদী ও অববাহিকার জলধারাগুলোর বিপন্নতা থেকে পুনরুদ্ধারের জন্য টেকসই উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেওয়া হবে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, নানা কারণে বিপন্ন হয়ে পড়া শঙ্খ ও মাতামুহুরী দিন দিন আরও বেশি বিপন্নতার দিক ধাবিত হচ্ছে। আরাকান পাহাড় থেকে উৎপত্তি শঙ্খ নদের দৈর্ঘ্য ১৯৩ কিলোমিটার ও মাতামুহুরীর ১৭০ কিলোমিটার। অবস্থার পরিবর্তন না হলে আগামী কয়েক দশকে নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে পুরোপুরি নাব্যতা হারিয়ে ফেলবে। একই সঙ্গে পাহাড় থেকে নদীতে নেমে আসা জলধারাগুলো মরে গেলে আরও বেশি সংকটাপন্ন অবস্থা দেখা দেবে। এ জন্য ‘শঙ্খ ও মাতামুহুরী অববাহিকা পুনরুদ্ধার সমীক্ষা’ নামে একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হচ্ছে। একমাত্র এ দুটি পাহাড়ি নদীই দেশের অভ্যন্তরে উৎপত্তি ও সাগরে পতিত হয়েছে বলে প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন।

প্রকল্পের ধারণাপত্রে বলা হয়েছে, উজান থেকে ঢলের সঙ্গে নেমে আসা মাটি ও বালুতে তলদেশ ভরাট হয়ে নদীর পানি ধারণক্ষমতা কমে গেছে। প্রভাবশালীরা নদীর তীর দখল করেছে। বনভূমি উজাড় এবং জলধারার পাথর তুলে পাচার করা হচ্ছে। এর ফলে কোথাও কোথাও নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে ব্যাপক ভাঙনের কবলে পড়ছে। আবার বর্ষায় সামান্য বৃষ্টিতে বন্যা হচ্ছে এবং শুকনো মৌসুমে পানির সংকট দেখা দিচ্ছে।

সমীক্ষায় নদী দুইটির বিপন্নতার থেকে পুনরুদ্ধারের উপায় খুঁজে বের করা হবে। এতে নদীর পানি কাঠামো ও অববাহিকার জলধারাগুলোর পানিপ্রবাহ বিশ্লেষণ, হাইড্রোলজিক্যাল স্টেশন স্থাপন, ভূ-উপরিস্থিত ও ভূগর্ভস্থ পানির গুণাগুণ পরীক্ষা, পলি ও মাটির ধরনের বৈশিষ্ট্যের মূল্যায়ন করা হবে। একই সঙ্গে প্রতিবেশগত শৃঙ্খলা (ইকোসিস্টেম) শনাক্তকরণ এবং সেগুলো সংরক্ষণের উপায় নিরূপণও করা হবে। নদী ও নদীতে এসে মিশে যাওয়া জলধারার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রাণবৈচিত্র্যের বাস্তুসংস্থানকে চিহ্নিত করার বিষয়টিও সমীক্ষার আওতায় থাকবে।

প্রায় পাঁচ কোটি টাকা ব্যয়ে দুই বছর মেয়াদের সমীক্ষা প্রকল্প আগামী অর্থবছরে (জুলাই) শুরু হওয়ার কথা। এ সমীক্ষার সুপারিশ অনুযায়ী বহুমুখী টেকসই উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেওয়া হবে। এতে শঙ্খ ও মাতামুহুরী উভয় নদীর পানি ধারণক্ষমতা বেড়ে যাবে, শাখা-উপশাখাসহ নদীর ভাঙন কমবে, পাহাড় থেকে নেমে আসা জলাধারাগুলো রক্ষা করা সম্ভব হবে। একই সঙ্গে মরে যাওয়া জলধারাগুলো পুনরুজ্জীবিত করা সম্ভব হলে নদীর গতিপ্রবাহও আগের মতো ফিরে পাবে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের বান্দরবানের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান বলেছেন, দুই নদীর অববাহিকা পুনরুদ্ধার সমীক্ষা প্রকল্পের প্রতিবেদন পাওয়ার পর নদী ও অববাহিকার জলধারা উন্নয়নের কাজ শুরু করা হবে। নদী ও নদীর পানি কাঠামো উন্নয়ন হলে ধীরে ধীরে বাস্তুতন্ত্রে আবারও প্রাণ প্রতিবেশের বৈচিত্র্য ফিরে আসবে।