ভরাট হচ্ছে নদ-নদী, জলাবদ্ধতার শঙ্কা

যশোরের ভবদহ অঞ্চলে বৃষ্টির পানি মুক্তেশ্বরী, টেকা, শ্রী ও হরি নদ-নদী দিয়ে সাগরে নেমে যায়। এদিকে বঙ্গোপসাগর থেকে জোয়ারের সঙ্গে এসব নদ-নদী দিয়ে পলি উঠে আসে। বর্তমানে ভবদহ অঞ্চলের কোনো বিলে পলি ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি—জোয়ারাধার (টিআরএম) কার্যকর নেই। এ কারণে পলিতে ভরাট হচ্ছে নদ-নদী। ইতিমধ্যে চারটি নদ-নদীর প্রায় ৫০ কিলোমিটার ভরাট হয়ে গেছে।

এলাকার বাসিন্দারা আশঙ্কা করছেন, বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির পানি জমে যশোরের অভয়নগর, মনিরামপুর ও কেশবপুর উপজেলা এবং যশোর সদর উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা দেখা দেবে।

ভবদহ পানিনিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির উপদেষ্টা ইকবাল কবির জাহিদ বলেন, নদীর ভেতরে সরু নালার মতো কেটে নদী বাঁচানো যায় না, নদীর প্রবাহ নিশ্চিত করেই কেবল নদী বাঁচানো সম্ভব। নদী বাঁচাতে সাগর থেকে উঠে আসা পলি বিলে বিলে ধারণ এবং উজানের পানিপ্রবাহের নিশ্চয়তা বিধান করতে হবে। প্রায় ৫০ কিলোমিটার নদী পলিতে ভরাট হয়ে গেছে। সমস্যা সমাধানে টিআরএমের কোনোই বিকল্প নেই। এক গভীর ষড়যন্ত্রের কারণে গৃহীত বিল কপালিয়ার টিআরএম প্রকল্পটি বাতিল করা হয়েছে। আর অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় বিনা দরপত্রে পরপর থোক বরাদ্দ দিয়ে নদী খননের নামে পাইলট চ্যানেলের কাজ করা হচ্ছে, যা কোনো স্থায়ী বা টেকসই সমাধান নয়।

যশোরের চৌগাছা উপজেলার পাশে মজ্জাতের বাঁওড়ের বিপরীত দিকে ভৈরব নদ থেকে থেকে উৎপত্তি হয়ে মুক্তেশ্বরী নদী যশোর সদর ও মনিরামপুর উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এরপর অভয়নগর উপজেলার গোঘাটা স্থানে টেকা নাম ধারণ করেছে। টেকা উপজেলার ভবানীপুর এলাকায় শ্রী নদীতে পড়েছে। শ্রী নদী কিছুদূর এগিয়ে মনিরামপুর উপজেলার কপালিয়ায় হরি নদের সঙ্গে মিশেছে। হরি খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে গ্যাংরাইল নদে পতিত হয়েছে। যশোর শহরসহ ভবদহ অঞ্চলের পানি নিষ্কাশিত হয় মুক্তেশ্বরী, টেকা, শ্রী ও হরি নদ-নদীর ভেতর দিয়ে। সাগর থেকে আসা জোয়ারের পানি প্রতিদিন দুইবার এই চারটি নদ-নদীগুলো দিয়ে ভবদহ অঞ্চলে ঢোকে। জোয়ারের সময় পলি এসে মুক্তেশ্বরী, টেকা, শ্রী ও হরি নদ-নদী নাব্যতা হারিয়েছে। পানি নিষ্কাশিত হচ্ছে না। এ অবস্থায় কয়েক বছর ধরে বর্ষা মৌসুমে ভবদহ অঞ্চলের অসংখ্য বাড়িঘর, রাস্তাঘাট, মাছের ঘের, শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান পানিতে তলিয়ে যায়। অবর্ণনীয় দুর্ভোগের শিকার হয় এলাকার প্রায় চার লাখ মানুষ।

ভবদহ স্লুইসগেটের পাশেই বাড়ি অভয়নগর উপজেলার ভবানীপুর গ্রামের কৃষক প্রহ্লাদ সরকারের। তিনি বলেন, ‘স্লুইসগেটের সামনে চার-পাঁচ দিন এক্সকাভেটর দিয়ে গাঙ কাটা হয়েছে। এরপর থেকে এক্সকাভেটর গাঙের পাড়ে ফেলে রাখা হয়েছে। গাঙ কেটে জনগণের লাভ হচ্ছে না, লাভ হচ্ছে ঠিকাদারের। ভাটিতে কাটলে জোয়ারের পলিতে তা ভরে যাচ্ছে। টিআরএম থাকলে গাঙ খোলাসা থাকত। কাটা লাগত না। টিআরএম ছাড়া বাঁচার কোনো পথ নেই।’

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) যশোর কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী প্রবীর কুমার গোস্বামী বলেন, জলাবদ্ধতা যাতে না হয়, সে জন্য বয়ারঘাটা থেকে থেকে খর্ণিয়া ব্রিজ পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার নদীর পাইলট চ্যানেল কাটা হচ্ছে।