দেড় শ বছরের পুরোনো ভবন নিলামে বিক্রির উদ্যোগ

রাজবাড়ী সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের পুরোনো লাল ভবন।  ছবি: প্রথম আলো
রাজবাড়ী সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের পুরোনো লাল ভবন। ছবি: প্রথম আলো

রাজবাড়ী সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের ১৫০ বছর পুরোনো লাল ভবনটি নিলামে বিক্রির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর থেকে এ–সংক্রান্ত চিঠি প্রধান শিক্ষকের কাছে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু স্থানীয় লোকজন ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের দাবি, ঐতিহ্যবাহী এ ভবনটি প্রত্নতত্ত্ব নিদর্শন হিসেবে সংরক্ষণ করা হোক।

বিদ্যালয়ে বর্তমানে ১ হাজার ৩০০ শিক্ষার্থী আছে। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানায়, ১৮৭১ সালে বানিবহের জমিদার গিরীজা শংকর মজুমদার ও তাঁর ভাই শিক্ষানুরাগী অভয় শংকর মজুমদার গোয়ালন্দ মহকুমায় বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। ১৮৮৭ সালে পদ্মার ভাঙনের ফলে বিদ্যালয়টি ভেঙে যায়। এ সময় তৎকালীন স্কুল ইন্সপেক্টর সি এ মার্টিন বিদ্যালয়টি রাজবাড়ীতে সরিয়ে নিতে পরামর্শ দেন। পরে তা রাজবাড়ীর বিনোদপুর এলাকায় স্থাপন করা হয়। লাল ভবনটি বানিবহের জমিদার বিশ্রামাগার হিসেবে ব্যবহার করতেন। প্রথমে শুধু লাল ভবনে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা হতো। পরে ভবনটির দ্বিতীয় তলায় সামনের দিকে দুটি কক্ষ তৈরি করা হয়।

গতকাল সোমবার সরেজমিনে দেখা যায়, সাবেকি কায়দায় এ ভবনটি নির্মাণ করা হয়েছে। লাল ইট দিয়ে তৈরি বলে এ ভবনকে লাল ভবন বলা হয়। ভবনের সামনে একটি বকুলগাছ। ভবনের প্রধান ফটক দিয়ে ঢুকলে একটি বড় কক্ষ। কক্ষটিকে ঘিরে তুলনামূলকভাবে ছোট আরও ৯টি কক্ষ। বড় কক্ষটির উত্তর পাশের কক্ষটি দিয়ে ওপরে ওঠার সিঁড়ি ছিল। পূর্ব দিকের ওপরে ওঠার লোহার সিঁড়িও ভেঙে গেছে। এর পাশে আরেকটি ভবন।

বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানায়, ৯ একর জমির ওপর স্থাপিত এ বিদ্যালয়ে বর্তমানে মোট ভবনের সংখ্যা পাঁচটি। রয়েছে ৪০০ আসনের একটি বড় মিলনায়তন। ১৯৮৪ সালের পর থেকে লাল ভবনে শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়। এর আগেও ভবনটিকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কর্তৃপক্ষ। বিষয়টি জানার পর বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্ররা এটিকে রক্ষার দাবিতে আন্দোলন করেন। ২০১৩ সালের জুন মাসে তাঁরা রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেন। একই বছর জেলা প্রশাসকের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ভবনটি পরিদর্শন করে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের ঢাকা বিভাগের আঞ্চলিক পরিদর্শক আতাউর রহমান।

আতাউর তখন বলেন, রাজবাড়ী উচ্চবিদ্যালয়ের এ ভবন একটি অসাধারণ স্থাপনা। এর সঙ্গে অনেক ইতিহাস-ঐতিহ্য জড়িয়ে আছে। তিনি বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেবেন।

বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানায়, ৯ মে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (মাধ্যমিক-২) মো. আমিনুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে লাল ভবন ও আরেকটি একাডেমিক ভবন অকেজো ঘোষণা করে তা নিলামে বিক্রি করার নির্দেশ দেন প্রধান শিক্ষককে। পরিত্যক্ত ভবন নিলামে বিক্রয় করে ওই টাকা ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দিতে হবে।

সহকারী শিক্ষক রেজাউল করিম বলেন, লাল ভবনের সঙ্গে তাঁদের আবেগ জড়িয়ে আছে। ভবন সহজেই ভেঙে ফেলা যায় কিন্তু সৃষ্টি করা যায় না। এ কারণে লাল ভবনটি সংস্কার করা হোক।

প্রাক্তন শিক্ষার্থী মহিতুজ্জামান বেলাল বলেন, এটি রাজবাড়ীর ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে আছে। এটিকে জাদুঘরে রূপান্তর করা যেতে পারে। ভবনটি রক্ষার জন্য ঐতিহ্য সংরক্ষণ আন্দোলন রাজবাড়ী নামে একটি মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। লাল ভবনটি রক্ষা ও সংস্কারের দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হবে।

রাজবাড়ী সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মাহবুবা আক্তার বলেন, লাল ভবন ভাঙা বা না ভাঙা নিয়ে তাঁর নিজস্ব কোনো মন্তব্য নেই। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক দেশের বাইরে আছেন। স্থানীয় সাংসদ ও প্রকৌশল বিভাগ যে সিদ্ধান্ত দেবে, তা তিনি মেনে নেবেন।

ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক আলমগীর হুছাইন বলেন, আবেগ যদি উপকারের চেয়ে অপকারী হয়ে থাকে তবে তা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। পাশাপাশি দুটি ভবন ভেঙে সেখানে ১০ তলাবিশিষ্ট ভবন তৈরি করা হবে।