পদ্মায় ডুবলে পুলিশের ছাড়পত্র পেতে হয়রানি

সাজিদ আহমেদ
সাজিদ আহমেদ

প্রতিবছরই রাজশাহীতে পদ্মায় গোসল করতে গিয়ে মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। আর এভাবে কেউ মারা গেলে তার লাশ পেতেই স্বজনদের চরম ভোগান্তির শিকার হতে হয়। হাসপাতাল থেকে লাশ ছাড়াতে এক থানা থেকে আরেক থানায় ঘুরতে ঘুরতে দীর্ঘ সময় পেরিয়ে যায়।

গত বৃহস্পতিবার পদ্মায় গোসল করতে গিয়ে এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়। তাঁর লাশ নিতে স্বজনদের পাঁচ ঘণ্টার বেশি সময় মর্গের সামনে বসে থাকতে হয়। এরপরও তাঁরা লাশ পাননি। তখনো তাঁদের পুলিশের কাছে দৌড়াদৌড়ি শেষ হয়নি।

এই শিক্ষার্থীর নাম সাজিদ আহমেদ। তার বাড়ি রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার ধোপাপাড়া গ্রামে। তার বাবার নাম আবদুল কাইয়ুম। সাজিদ আহমেদ এবার এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছে। এইচএসসিতে আরও ভালো করার আশায় তার বাবা তাকে রাজশাহী শহরে পড়াশোনার জন্য পাঠিয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার সকালে সাজিদ বাড়ি থেকে এসেছিল। বেলা ১১টার দিকে সাজিদ তার তিন বন্ধুর সঙ্গে পদ্মা নদীতে গোসল করতে যায়।

সাজিদের মামাতো ভাই ফিরোজুর রহমান বলেন, নগরের দরগাপাড়া এলাকায় পদ্মা নদীতে এখন অল্প পানি দেখে তারা গোসল করতে নেমেছিল। সাজিদ সাঁতার জানত না। হঠাৎ সে বেশি পানিতে নেমে গিয়ে ডুবে যায়। তার বন্ধুরা চেষ্টা করেও তার খোঁজ পায়নি। তারা ফায়ার সার্ভিসে ফোন করে। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা গিয়ে সাজিদকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। খবর পেয়ে সাজিদের চাচা আহসান উল্লাহ ও ফুফা মুনসুর রহমান ও অন্যান্য আত্মীয়স্বজন রাজশাহীতে চলে আসেন। ততক্ষণে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়।

ফিরোজুর রহমান জানান, তাঁদের কোনো অভিযোগ ছিল না। তাঁরা ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ নিতে চেয়েছিলেন। তাঁরা হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টারের কার্যালয় থেকে ছাড়পত্র নিতে গেলে তাঁদের নগরের বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) কাছে পাঠানো হয়। ওই থানার ওসির কাছে গেলে তিনি সাজিদের স্বজনদের বলেন, পদ্মা নদীর ওই জায়গাটি তাঁর থানাধীন নয়, এটি কাঁটাখালী বা মতিহার থানার অন্তর্গত। তিনি ওই ছাত্রের স্বজনদের সেখানে যোগাযোগ করতে বলেন। এরপর সাজিদের স্বজনেরা কাঁটাখালী থানায় যোগাযোগ করেন। ওই থানা পুনরায় তাঁদের মতিহার থানায় পাঠানো হয়। থানায় ঘুরতে ঘুরতে বিকেল চারটা বেজে যায়। মতিহার থানার পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন ছাড়া ছাড়পত্র দিতে রাজি হয়নি। বাধ্য হয়ে ফিরোজুর রহমান বিকেল চারটার দিকে মতিহার থানার একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান। সেখান থেকে তাঁরা আবার মর্গে আসেন, তখন বিকেল পাঁচটা বেজে গেছে।

বোয়ালিয়া থানা থেকে ছাড়পত্র না দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ওই থানার ওসি আমান উল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, পদ্মা নদী তার থানাধীন এলাকায় নয়। নদীর পাড় থেকে নিচে কোনো ঘটনা ঘটলেই তা চলে যাবে কাঁটাখালী অথবা মতিহার থানার অধীনে। এ জন্য তাঁদের কিছু করার থাকে না।

রাজশাহী মহানগর পুলিশের নতুন কমিশনার হুমায়ুন কবির যোগদান করার পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভার আয়োজন করেছিলেন। সেখানে একজন সাংবাদিক পদ্মা নদীর লাশ নিয়ে থানা-পুলিশের ঠেলাঠেলির বিষয়টি তুলেছিলেন। সেদিন তিনি বলেছিলেন এখন থেকে আর এ রকম কেউ যাতে হয়রানির শিকার না হয়, সে বিষয়টি তিনি দেখবেন।