সয়াবিন ফলনে খুশি, দামে হতাশ

লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ গ্রামের কৃষক মহরম আলী এবার দেড় একর জমিতে সয়াবিন আবাদ করেছেন। ফলনও ভালো পেয়েছেন। তবে ভালো ফলন হাসি ফোটাতে পারেনি মহরমের মুখে। তিনি বলেন, ‘বাম্পার ফলন হলেও বাজারে সয়াবিনের মূল্য কম। দেড় একর জমিতে প্রায় ২৫ হাজার টাকা খরচ করে সয়াবিন আবাদ করেছি। কিন্তু সয়াবিনের যে দাম, লাভ ঘরে তোলা যাবে না।’

মহরম আলীর মতো আরও অনেক কৃষক আছেন, যাঁরা সয়াবিন আবাদ করে বিপাকে পড়েছেন। লাভ তো দূরে থাক, আসলও ঘরে তুলতে পারছেন না। লক্ষ্মীপুর সদর ও রায়পুর উপজেলার ১১ জন কৃষকের সঙ্গে কথা বলে এমন হতাশার কথা শোনা গেল।

রায়পুর উপজেলার চর ঘাসিয়া গ্রামের আজিজ সর্দার এবার এক একরে সয়াবিন আবাদ করেছেন। তিনি বলেন, ‘জমি চাষ, সার, সয়াবিন বীজ, কীটনাশক, শ্রমিক, মাড়াইসহ অন্যান্য খরচ মিলিয়ে প্রতি মণ সয়াবিন ফলাতে খরচ হয়েছে ১ হাজার টাকা। কিন্তু বাজারে প্রতি মণ সয়াবিনের দাম পাচ্ছি ১ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ১ হাজার ১০০ টাকা। অথচ গত বছর এ সময়ে প্রতি মণ সয়াবিন বিক্রি হয়েছে বাজারে ১ হাজার ৪০০ টাকায়।’

লক্ষ্মীপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, লক্ষ্মীপুর সদর, রায়পুর, রামগঞ্জ, রামগতি ও কমলনগর উপজেলায় এবার ৪৮ হাজার ৫৪৫ হেক্টর জমিতে সয়াবিনের আবাদ হয়। জেলায় ৯৪ হাজার ৬০০ মেট্রিকটন সয়াবিন উৎপাদন হয়েছে। সারা বছর এ অঞ্চলের মানুষ এ ফসলের ওপরই নির্ভরশীল থাকে। দেশের খ্যাতনামা সয়াবিন তেল ও পোলট্রি খাদ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো এখান থেকে সয়াবিন সংগ্রহ করে। বিগত বছরগুলোতে জেলায় ৩৫০ কোটি টাকা লেনদেন হয়। এ জন্য এটিকে কৃষকেরা ‘ভাগ্য বদলের ফসল’ বলে থাকেন।

সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ ইউনিয়নের চরভূতা গ্রামের আনোয়ার হোসেন এ বছর প্রায় ৩ একর জমিতে সয়াবিন চাষ করেন। তিনি হিসাব করে জানান, ফসল ঘরে আনা পর্যন্ত তাঁর মোট খরচ হবে ৪৭ হাজার টাকা। খেতে মোট ৪৫ মণ সয়াবিন উৎপাদন হয়। বর্তমান বাজারে ওই ৪৫ মণ সয়াবিনের দাম পাওয়া যাবে ৪৫ থেকে ৪৬ হাজার টাকা।

রায়পুর উপজেলার উত্তর চরবংশী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল হোসেন বলেন, প্রতিবছর এ সময়ে দেশের খ্যাতনামা সয়াবিন তেল ও পোলট্রি খাদ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সয়াবিন সংগ্রহ শুরু করে। কিন্তু এবার বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলো এখনো কেনা শুরু করেনি। এ কারণে গত বছরের চেয়ে এবার প্রতি মণ সয়াবিনের দাম প্রায় ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা কম। তবে বড় প্রতিষ্ঠানগুলো কেনা শুরু করলে মণে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা বেড়ে যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

জানতে চাইলে লক্ষ্মীপুর কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক বেলাল হোসেন খান মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় লক্ষ্মীপুরে সয়াবিনের বাম্পার ফলন হয়েছে। এতে কৃষকদের প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে। এখন কৃষকের সয়াবিনের ন্যায্যমূল্য পাওয়া উচিত। সেটা নিশ্চিত করতে কৃষি বিভাগ কাজ করছে।