বিএনপির পুনর্গঠন শুরু হচ্ছে সিলেট থেকেই

আগামীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিএনপির পুনর্গঠন সিলেট থেকে শুরু করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান এ জেড এম জাহিদ হোসেন। গতকাল সোমবার সিলেট নগরে জেলা বিএনপির কার্যনির্বাহী কমিটির বিশেষ জরুরি সভায় তিনি এ কথা বলেন।

সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে কেন্দ্রীয় নেতা জাহিদ হোসেন বলেন, বিএনপি হচ্ছে গণমানুষের দল। তাই বিএনপির একমাত্র লক্ষ্যই হচ্ছে মানুষ, সমাজ ও দেশের কল্যাণে কাজ করা। গণতন্ত্র, ভোটাধিকার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্যই বিএনপি শক্তিশালী ও জনপ্রিয় দলে পরিণত হয়েছে। জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে এবং আদর্শিক মোকাবিলায় ব্যর্থ হয়ে তৃণমূল বিএনপির ওপর সীমাহীন নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে সরকার। জুলুম-নিপীড়ন উপেক্ষা করে বিএনপি ঘুরে দাঁড়িয়েছে। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে আগামীর সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য দেশব্যাপী বিএনপির পুনর্গঠনের কাজ সিলেট থেকেই সূচনা হলো। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনার আলোকে দল পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

নগরের সোবহানীঘাট এলাকার একটি কমিউনিটি সেন্টারে এই সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা বিএনপির সভাপতি আবুল কাহের চৌধুরী। সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদের সঞ্চালনায় সভায় জেলা বিএনপির কার্যনির্বাহী পরিষদের দুই-তৃতীয়াংশ সদস্য, জেলার অন্তর্গত বিভিন্ন উপজেলা ও পৌর কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং জেলার আওতাধীন সব অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক উপস্থিত ছিলেন।

সিলেট জেলার আহ্বায়ক কমিটি ঘোষিত না হওয়া পর্যন্ত বর্তমান কমিটিই সাংগঠনিক সব দায়িত্ব পালন করবে জানিয়ে কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান জাহিদ বলেন, কাউন্সিলের মাধ্যমে ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, উপজেলা এবং পর্যায়ক্রমে জেলা বিএনপির পুনর্গঠন করা হবে। পাশাপাশি জেলা বিএনপির পরামর্শক্রমে সব অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কমিটি গঠন করা হবে। একইভাবে স্বল্প সময়ের ভেতরে কেন্দ্রীয় বিএনপিকেও পুনর্গঠন করা হবে।

সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক (সিলেট বিভাগ) সাখাওয়াত হাসান, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সিলেট সিটির মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, কেন্দ্রীয় সহ-ক্ষুদ্রঋণ সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রাজ্জাক, কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক (সিলেট বিভাগ) কলিমউদ্দিন, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরী, জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক নুরুল হক, জেলা কমিটির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আবুল কাহির চৌধুরী।

দলীয় সূত্র জানায়, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সিলেট জেলা বিএনপির কার্যকরী কমিটি ১৫১ সদস্যবিশিষ্ট হওয়ার কথা। কিন্তু সেখানে ২৮৫ জন আছেন। বিশাল এই কমিটি ভবিষ্যতে পরিবর্তন করে গঠনতন্ত্র অনুসরণ করে ১৫১ জন রাখতে পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। গত ৮ এপ্রিল বিএনপির সিলেটের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে স্কাইপে বৈঠক করেন। বৈঠকে তারেক রহমান দলের সাংগঠনিক অবস্থার খোঁজখবরের পাশাপাশি জেলার অধীন ১৭টি উপজেলা ও পৌর ইউনিটের নতুন কমিটি গঠনের ব্যাপারে মতামত দেন। ১৫ মের মধ্যে জেলা কার্যকরী কমিটির সভা ডেকে ইউনিটভুক্ত কমিটিগুলো পুনর্গঠনের প্রক্রিয়া সম্পর্কে কেন্দ্রে প্রতিবেদন পাঠানোরও তিনি নির্দেশনা দেন। সে অনুযায়ীই ৫ মে জেলার কার্যকরী কমিটির সভা হয়। সেখানে সব কমিটি পুনর্গঠনে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হয়। এরপর গতকাল এই জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হলো।

২০১৬ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে জেলা ও নগর বিএনপির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। জেলার ১৭টি ও নগরের ২৭টি সাংগঠনিক কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকেরা এতে ভোট দেন। এবার জেলা কমিটি ভেঙে নতুন কমিটি গঠনে আবারও ভোটের মাধ্যমে নেতা নির্বাচন করার পক্ষে মত দিয়েছেন দলের তৃণমূল পর্যায়ের নেতারা।

গতকালের বিশেষ জরুরি সভায় বিষয়টি উল্লেখ করে বিএনপির নেতা সাখাওয়াত হাসান বলেন, সিলেট জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি থেকে শুরু করে কাউন্সিলের মাধ্যমে জেলার কমিটি এবং সব উপজেলা-পৌর ও ইউনিয়ন এমনকি ওয়ার্ড পর্যায়ে সংগঠনকে শক্তিশালী করতে বর্তমান নেতৃত্ব সব ক্ষেত্রে সফল। ভবিষ্যতেও সিলেটের সব ক্ষেত্রে দলীয় কার্যক্রমকে সুসংগঠিত করা হবে।

সভাপতির বক্তব্যে আবুল কাহির চৌধুরী বলেন, ‘নেতৃত্ব পরিবর্তনশীল কিন্তু আদর্শের সংগ্রাম কখনো পরিবর্তিত হয় না। দলের যে পর্যায়ে আমরা থাকব, সেখানে থেকেই দায়িত্ব পালন করে যাব। তারেক রহমানের নির্দেশনার আলোকে দলকে শক্তিশালী করতে সব পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’