যশোরে চাল সংগ্রহ বন্ধ রেখে ধান সংগ্রহ শুরু হচ্ছে

চাল সংগ্রহ অভিযান আপাতত বন্ধ রেখে যশোরে ধান সংগ্রহ অভিযান শুরু করতে যাচ্ছে জেলা খাদ্য বিভাগ। গত বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হবে ধান সংগ্রহ অভিযান। এর আগে গত ২৫ এপ্রিল বোরো ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়। যশোরের আট উপজেলা থেকে ইতিমধ্যে ১ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহ করা হয়েছে।

যশোরের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, জেলায় এবার বোরো ধানের চাষ হয়েছে ১ লাখ ৬৩ হাজার ১৪০ হেক্টর জমিতে। প্রতি হেক্টরে গড়ে চার মেট্রিক টন করে ধানের উৎপাদন হয়েছে। সে অনুয়ায়ী জেলায় এবার ৬ লাখ ৫২ হাজার ৫৬০ মেট্রিক টন ধান উৎপাদিত হয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোরের উপপরিচালক মো. এমদাদ হোসেন শেখ বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় যশোরে এবার বোরো ধানের খুব ভালো ফলন হয়েছে। হেক্টরপ্রতি গড়ে চার টন করে ধানের ফলন হয়েছে।

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের দপ্তর সূত্র জানায়, চলতি বোরো সংগ্রহ মৌসুমে যশোর জেলায় ৪ হাজার ৭৬৭ মেট্রিক টন ধান এবং ২১ হাজার ৪৫৩ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত ২৫ এপ্রিল থেকে সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়েছে এবং তা আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত চলবে। চাল সরবরাহের জন্য ৩৩৮ জন চালকল মালিক চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন।

সূত্রমতে, গতকাল সোমবার (২০ মে) পর্যন্ত ১ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহ করা হয়েছে। তবে ধান সংগ্রহ শুরু করা হয়নি। চাল ৩৬ টাকা এবং ধান ২৬ টাকা কেজি দরে কেনা হচ্ছে।

কৃষকেরা জানান, বোরো ধান কাটা ও মাড়াই প্রায় শেষ। জমি চাষ, সেচ, সার ও কীটনাশক দেওয়া এবং ধান কাটার খরচ মেটাতে তাঁরা রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন। এই অবস্থায় বাধ্য হয়ে তাঁরা ধান বিক্রি করছেন। কিন্তু ধানের দাম কম থাকায় তাঁরা বিপাকে পড়েছেন। সরকারি দাম ভালো থাকলেও সংগ্রহ শুরু না হওয়ায় তাঁরা ধান দিতে পারছেন না। ব্যয় মেটাতে কম দামে তাঁরা বাজারে ধান বিক্রি করছেন। এতে তাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তাঁরা জানান, চালের আগে ধান সংগ্রহ অভিযান শুরু করা হলে তাঁরা কিছুটা হলেও ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারতেন।

বাঘারপাড়া উপজেলার পাইকপাড়া গ্রামের কৃষক মো. আক্তারুজ্জামান বলেন, ‘এবার ২০ বিঘা জমিতে বোরো ধানের চাষ করে ৬৫০ মণ ধান পেয়েছি। জনপ্রতি ৯০০ টাকা করে মজুরি দিয়ে শুধু ধান কাটতে আমার ব্যয় হয়েছে ১ লাখ ৫৬ হাজার টাকা। আমি জিরা মিনিকেট ধান বিক্রি করেছি প্রতিমণ ৭৫০ টাকায়। এ পর্যন্ত ২০০ মণ ধান বিক্রি করে ধান কাটার দাম দিয়েছি। এখনো চাষ, সেচ, সার ও কীটনাশকের দাম বাকি। সরকার বেশি দামে ধান কিনছে। কিন্তু সেটা কাগজে–কলমে। আমরা সেখানে ধান দিতে পারছি না।’

অভয়নগর উপজেলার ডুমুরতলা গ্রামের কৃষক সমীর কান্তি বিশ্বাস বলেন, ‘চার বিঘা জমিতে হাইব্রিড জাতের বোরো ধান চাষ করে ৮০ মণ ধান পেয়েছি। ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ শেষ। ধানের খরচ বাবদ অনেক টাকার দেনা হয়েছে। বাজারে মোটা ধানের দাম ৫৪০ টাকা মণ। এই দামে ধান বিক্রি করলে খুব ক্ষতি হবে। আবার না বিক্রি করেও পারছি না। শুনেছি, সরকারি দাম ভালো। কিন্তু গুদামে ধান কিনছে না। বিপদে আছি।’

জাতীয় কৃষক সমিতি যশোর জেলার সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান বলেন, ধান চাষের দায়দেনা মেটাতে কৃষক বাজারে কম দামে ধান বিক্রি করছেন। সরকারিভাবে এখনো কৃষকদের কাছ থেকে ধান কেনা শুরু করা হয়নি। তবে কেনা হচ্ছে চাল। মধ্যস্বত্বভোগী, আড়তদার, চাতাল, মিলের মালিকেরা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সরকারি গুদামে চাল বিক্রি করে চলেছেন। তাঁরা গুদামের পুরোনো চাল এবং বাজার থেকে ২২ টাকা দরে চাল কিনে কোনো ধরনের বাধা ছাড়াই গুদামে ৩৬ টাকা দরে চাল বিক্রি করছে।

মিজানুর রহমান আরও বলেন, কোনো অজুহাত ছাড়া অবিলম্বে সরকার–নির্ধারিত মূল্যে প্রতি ইউনিয়নে কৃষকদের কাছ থেকে ধান কিনতে হবে। এ দাবিতে আগামী বৃহস্পতিবার জাতীয় কৃষক সমিতি যশোর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত এক ঘণ্টা ধরনা কর্মসূচি পালন করবে।

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) মো. লিয়াকত আলী বলেন, আগে চাল কেনা হচ্ছিল। এ জন্য জেলার ৩৩৮ জন চালকল মালিকের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। তাঁরা চাল সরবরাহ শুরু করেছিলেন। তাঁরা এ পর্যন্ত ১ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন চাল সরবরাহ করেছেন। এখন পর্যন্ত ধান কেনা শুরু করা হয়নি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা পাওয়ার পর চাল সংগ্রহ অভিযান আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে। ধান কেনার প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। আগামী দু-এক দিনের মধ্যে ধান কেনা শুরু করা হবে। ধান কেনার পর চাল সংগ্রহ শুরু করা হবে।