ভাশুরের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ, বিচার চাওয়ায় ঘরছাড়া

ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার এক গৃহবধূ তাঁর ভাশুরের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ করেছেন। তিনি অভিযোগ করেন, স্বামী প্রবাসে থাকার সুযোগে ভাশুর তাঁকে ধর্ষণ করেছেন। শ্বশুরবাড়িতে এ ঘটনার বিচার চাইলে তাঁকে খারাপ চরিত্রের অপবাদ দিয়ে বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিছুদিন আগে তালাকনামা পেয়েছেন তিনি।

ওই গৃহবধূ (২৪) জানান, শ্বশুরবাড়িতে বিচার না পেয়ে তিনি বাদী হয়ে হয়ে গতকাল সোমবার রাতে নান্দাইল মডেল থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা করেছেন। এ ঘটনা নিয়ে শ্বশুরবাড়ির অনেকেই তাঁর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছে। মামলায় তিনি কেবল ভাশুর মো. আফতাব উদ্দিনের (৪০) বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) মো. নুরুল হুদা আজ মঙ্গলবার দুপুরে তাঁর কার্যালয়ে জানান, মামলা রেকর্ড হওয়ার পর স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য গৃহবধূকে সকালে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগে পাঠানো হয়েছে।

মামলার এজাহার ও গৃহবধূর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাঁর বাবার বাড়ি কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলায়। পাঁচ বছর আগে ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার আফাজ উদ্দিন তাঁকে পছন্দ করে বিয়ে করেন। বিয়েটি পারিবারিকভাবে হয়েছিল। বিয়ের কিছুদিন পর স্বামী সৌদি আরব চলে যান। তিনি শ্বশুরবাড়িতে বাস করতে থাকেন। স্বামী চলে যাওয়ার কিছুদিন পর থেকে ভাশুর আফতাব উদ্দিন তাঁর প্রতি কুদৃষ্টি দেওয়ার পাশাপাশি শরীরে হাত দেওয়ার চেষ্টা করতেন। বিষয়টি বুঝতে পেরে কৌশলে তিনি ভাশুরকে পাশ কাটিয়ে চলতেন।

গত ১০ এপ্রিল রাতে খাওয়াদাওয়া শেষ করে তিনি প্রতিদিনের মতো নিজের শয়নকক্ষে ঘুমিয়ে পড়েন। গভীর রাতে দরজা খুলে ভাশুর আফতাব উদ্দিন তাঁর (গৃহবধূ) শয়নকক্ষে ঢোকেন। একপর্যায়ে তাঁর মুখে কাপড়চাপা দিয়ে ধর্ষণ করেন। এ ঘটনার পর তিনি জোরে কান্নাকাটি করতে শুরু করেন। কান্নার শব্দ শুনে শাশুড়িসহ বাড়ির অন্যরা তাঁর কক্ষে এলে তিনি পুরো ঘটনা জানিয়ে ভাশুরের বিচার দাবি করেন। ঘটনার পরদিন শাশুড়ি ও ভাশুর মিলে সলাপরামর্শ করে তাঁকে তাঁর বাবার বাড়ি কিশোরগঞ্জে পাঠিয়ে দেন।

গৃহবধূ জানান, গত বৃহস্পতিবার তাঁর বাবার বাড়ির ঠিকানায় ডাকযোগে তালাকের নোটিশ পান। তাঁর মতে, তাঁর ভাশুর এই জালিয়াতি করেছেন।

আজ মঙ্গলবার ভাশুর আফতাব উদ্দিনের বাড়িতে গিয়ে তাঁকে পাওয়া যায়নি।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, পুলিশের ভয়ে আফতাব পালিয়েছেন। তাঁদের ভাষ্য, ধর্ষণের অভিযোগ থেকে আফতাব উদ্দিনকে বাঁচাতে পরিবারের সদস্যরা মিলে গৃহবধূকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছেন।

গৃহবধূর শাশুড়ির কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাঁর বড় ছেলের বিরুদ্ধে পুত্রবধূ মিথ্যা অপবাদ দিয়েছেন। ধর্ষণের ঘটনা ঘটেনি। তিনি অভিযোগ করেন, তাঁর পুত্রবধূ ‘নষ্টা’ চরিত্রের। বিয়ের এত বছর পর পুত্রবধূর চরিত্র নিয়ে অভিযোগ করার ব্যাপারে জানতে চাইলে শাশুড়ি বলেন, তাঁর পুত্রবধূ অন্য পুরুষের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলতেন। এ নিয়ে কিছু জানতে চাইলে পরিবারের সবার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করতেন।