ঈদে আকাশপথে টিকিটের দাম আকাশছোঁয়া

বাস, ট্রেন কিংবা লঞ্চের মতো হাঁকডাক করে টিকিট বিক্রি হয় না। দিনক্ষণ নিয়ে আগে থেকে ঘোষণাও থাকে না। কাউন্টারের সামনে থাকে না টিকিটপ্রত্যাশীদের প্রচণ্ড ভিড়। ঈদের সময় আকাশপথে উড়োজাহাজের টিকিট বেশ নীরবেই বিক্রি হয়। তবে নীরবে বিক্রি হলেও আকাশপথে ঈদের টিকিটের জন্য তোড়জোড় বেশ আগেভাগেই শুরু হয়। তাই এবারের ঈদুল ফিতরের সময়ের প্রায় ৮০ শতাংশ টিকিট এরই মধ্যে বিক্রি হয়ে গেছে। বাকি যেসব টিকিট এখনো অবিক্রীত আছে, সেগুলোর নাগাল পেতে ঈদে মূল্য দিতে হবে তিন গুণ।

শুধু ঈদুল ফিতর নয়, তিন মাস পর আগস্ট মাসে কোরবানির ঈদের সময়ের টিকিটের দামও এরই মধ্যে দ্বিগুণ হয়ে গেছে। আদিবা সুলতানা ১৬ আগস্ট কোরবানির ঈদ শেষে আকাশপথে যশোর থেকে ঢাকায় ফেরার পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু আজ মঙ্গলবার টিকিট বুকিং দিতে গিয়ে তিনি দেখেন, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ২৭০০ টাকার একটি টিকিটের দাম ৫ হাজার টাকা হয়ে গেছে।

সড়কপথে যানজট, রেলপথে বিলম্বিত যাত্রা, নৌপথে ঝুঁকিসহ নানা দুর্ভোগ এড়িয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে ভ্রমণের জন্য আকাশপথকে বেছে নিচ্ছেন ঈদে ঘরমুখী মানুষেরা। তা ছাড়া আকাশপথে সময়ও বাঁচানো যায়। এ সময় প্রবাসীরাও দেশে ফিরে আপনজনের সঙ্গে ঈদ আনন্দ উপভোগ করে থাকেন। তাই ঈদের টিকিট কেনার কাজটি আগেভাগেই শুরু হয়। অনলাইনে ঝটপট বুকিং, তারপর সুবিধামতো ব্যাংকের ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে সহজেই আকাশপথের টিকিট মিলে যায়।

এবারের ঈদের সময় পড়েছে টানা ছুটি। ৩১ মে ও ১ জুন শুক্র-শনিবারের সাপ্তাহিক ছুটি। ২ জুন রোববার শবে কদরের ছুটি। ৩ জুন সোমবার অনেকেই ঐচ্ছিক ছুটি নিতে পারেন। ৪ জুন মঙ্গলবার (২৯ রমজান) থেকে ৬ জুন বৃহস্পতিবার ঈদুল ফিতরের তিন দিনের ছুটি পড়ছে। এর পর আবারও ৭ ও ৮ জুন শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি। সে কারণে ৩০ মে ও ৩ জুনের টিকিটের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। তাই টানা নয় দিনের ছুটি কাজে লাগাতে ঘরমুখী মানুষেরা অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটের টিকিট কেটে ফেলেছেন।

দেশের বিমান সংস্থাগুলো ঈদসহ বিভিন্ন ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসবগুলোকে সামনে রেখে প্রায় এক বছর আগে থেকে টিকিট বিক্রির কর্মপরিকল্পনা তৈরি করে। তাদের মতে, ঈদের সময়টা সবারই জানা থাকে। এক দিন এদিক-ওদিক হতে পারে। তাই টিকিট বিক্রিও শুরু হয়ে যায় আগেভাগেই। যাত্রীরা সুবিধাজনক সময়ে বিমান সংস্থাগুলোর বিক্রয়কেন্দ্র ও বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্সি থেকে টিকিট কিনে থাকেন। অনলাইনে ক্রেডিট কার্ড ছাড়াও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টিকিট কিনে থাকেন অনেক যাত্রী। তাই এবারের ঈদের আগে ৩০ মে থেকে ৪ জুনের নিয়মিত ফ্লাইটগুলোর বেশির ভাগ টিকিট কয়েক মাস আগেই বিক্রি হয়ে গেছে।

জানা গেছে, ঢাকা থেকে অভ্যন্তরীণ সাতটি রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস, ইউএস বাংলা, নভোএয়ার ও রিজেন্ট এয়ারওয়েজ। এর মধ্যে রিজেন্টের উড়োজাহাজ কেবল চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে চলাচল করে। ঈদুল ফিতর উপলক্ষে চারটি বিমান সংস্থার ৩০ মে থেকে ৪ জুনের টিকিটের দাম তিন গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই আজ মঙ্গলবার কেউ সৈয়দপুর বা যশোর রুটের একটি টিকিট কিনতে চাইলে তাঁকে সাত থেকে আট হাজার টাকা গুনতে হবে। যাত্রী চাহিদা থাকায় তাই এখন অতিরিক্ত ফ্লাইট পরিচালনা করবে দেশের বিমান সংস্থাগুলো।

বেসরকারি বিমান সংস্থা ইউএস বাংলা এয়ারলাইনস ৩০ মে থেকে ৪ জুন পর্যন্ত ছয় দিনে নিয়মিত ফ্লাইটের পাশাপাশি অতিরিক্ত অর্ধশত ফ্লাইটের ব্যবস্থা করেছে। ইউএস বাংলা এয়ারলাইনস লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক (মার্কেটিং সাপোর্ট অ্যান্ড পিআর) কামরুল ইসলাম বলেন, চাহিদা বেশি থাকায় কম দামে বা লো অফারে কখনোই টিকিট মিলবে না। আসলে ঈদের সময় ঢাকা থেকে যাত্রী পূর্ণ করে ছাড়ছে। কিন্তু ফ্লাইটগুলো ফিরবে একেবারে ফাঁকা। হিসেবের সময় তাই ফিরতি ফ্লাইটের হিসাবটাও থাকে।

নভোএয়ার ঈদের আগে ছয় দিনে অতিরিক্ত ৩০ টি ফ্লাইট পরিচালনা করতে যাচ্ছে। নভো এয়ারের জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক (মার্কেটিং) এ কে এম মাহফুজুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা প্রতিদিন ঈদের সময় ২১শ যাত্রী বহন করতে পারব। তবে ঈদ শেষে ফিরতি টিকিটের চাহিদাও রয়েছে। ফিরতি টিকিটের চাহিদা একটু বেশি। কারণে ঈদ শেষে সবাই একসঙ্গে ঢাকায় ফিরতে চান।’

রিজেন্ট এয়ারওয়েজ সুপরিসর উড়োজাহাজ দিয়ে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট পরিচালনা করে থাকে। তাই তারা আপাতত কোনো অতিরিক্ত ফ্লাইট দিচ্ছে না। রিজেন্ট এয়ারওয়েজের প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা আখতার ইউ আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঈদ উপলক্ষে ৩০ মে থেকে টিকিটের চাহিদা বেশি। এ সময়ের বেশির ভাগ টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার রুটে অতিরিক্ত ফ্লাইট থাকছে না। তবে এ সময় এই রুটগুলোতে আমাদের বড় এয়ারক্রাফট চলবে।’

ঈদের সময় ঢাকা ও রাজশাহী রুটে অতিরিক্ত ফ্লাইট দিতে যাচ্ছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস। এ ছাড়া প্রবাসীরা দেশে ফিরবেন বলে ২ জুন কুয়ালালামপুর, ৩ জুন জেদ্দা ও দাম্মাম এবং ৪ জুন কুয়ালালামপুরে অতিরিক্ত একটি করে ফ্লাইট পরিচালনা করবে বলে জানান বিমানের মহাব্যবস্থাপক শাকিল মেরাজ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বিমান এবারের গ্রীষ্মকালীন সময়সূচিতে ফ্লাইটের সংখ্যা বৃদ্ধি করেছে। ঢাকা-সৈয়দপুরে প্রতি সপ্তাহে সাতটির পরিবর্তে ১৪টি, যশোরে ৭টির পরিবর্তে ১০টি ফ্লাইট পরিচালনা করছে বিমান। এ ছাড়া ঢাকা-রাজশাহী ও ঢাকা-বরিশাল রুটে ঈদ উপলক্ষে বিমানের অতিরিক্ত ফ্লাইট পরিচালনার পরিকল্পনা রয়েছে।

হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অভ্যন্তরীণ রুটে প্রতিদিন ৪টি বিমান সংস্থার প্রায় ১০০টি ফ্লাইটে ছয় হাজার যাত্রী আসা-যাওয়া করেন। ঈদ উপলক্ষে অতিরিক্ত ফ্লাইট থাকায় এ সময় যাত্রী চলাচল বেড়ে যাবে। বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে, আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে প্রায় ৪০ হাজার যাত্রী আকাশপথে ঢাকা ছাড়বেন।