রাজমিস্ত্রি সেজে অপরাধী ধরলেন এসআই

মামলার আসামি ও অপরাধীদের গ্রেপ্তারে রাজমিস্ত্রির সাজ নেন উপপরিদর্শক (এসআই) মো. লালবুর রহমান। ছবি: ডিএমপি নিউজ
মামলার আসামি ও অপরাধীদের গ্রেপ্তারে রাজমিস্ত্রির সাজ নেন উপপরিদর্শক (এসআই) মো. লালবুর রহমান। ছবি: ডিএমপি নিউজ

মামলার আসামি ও অপরাধীদের গ্রেপ্তারে নানাভাবে অভিযান চালান মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তারা। কখনো ছদ্মবেশ ধরে পুলিশ। তেমনি হত্যা মামলার এক আসামি ধরতে রাজমিস্ত্রির সাজ নেন এক উপপরিদর্শক (এসআই)। গত রোববার রাজধানীর কদমতলী থানা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

ডিএমপি নিউজের এ খবরের শুরুতে বলা হয়েছে, পরনে লুঙ্গি-গেঞ্জি, পায়ে ছেঁড়া স্যান্ডেল। কাঁধে রাজমিস্ত্রির কাজে ব্যবহৃত বেলচা। দেখে মনে হতে পারে রাজধানীর বিভিন্ন মহল্লায় রাজমিস্ত্রির কাজ খুঁজে বেড়ান ‘তিনি’। কিন্তু না, আসলে তিনি রাজমিস্ত্রি নন। এটি একটি হত্যা মামলার আসামি ধরার জন্যই তিনি এ বেশ নিয়েছেন। 


ডিএমপি নিউজে আরও বলা হয়েছে, গত ১৪ মার্চ রাজধানীর কদমতলী থানার দনিয়ায় ভাড়া বাসায় পারিবারিক কলহের জেরে শারমিন আক্তারকে গলা টিপে হত্যা করে পালিয়ে যান স্বামী মাসুদ হাওলাদার। এর পরদিন শারমিন আক্তারের ভাই বাদী হয়ে কদমতলী থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলাটির তদন্তভার দেওয়া হয় কদমতলী থানার এসআই মো. লালবুর রহমানের ওপর। দায়িত্ব পাওয়ার পর তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) এসআই লালবুর রহমান মামলাটি তদন্ত শুরু করেন। মামলাটি তদন্তকালে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় আসামির অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হন তিনি। এরপরই রাজমিস্ত্রির বেশ নিয়ে আসামিকে ধরেন তিনি।

মো. লালবুর রহমান তদন্তকালে জানতে পারেন শারমিনের স্বামী মাসুদ পুরোনো প্যান্ট-শার্টের ব্যবসা করতেন। এ ব্যবসার জন্য তিনি শনির আখড়ায় দোকানের পজিশনও নিয়েছিলেন। ব্যবসা শুরুর আগেই স্ত্রীকে হত্যা করায় পজিশনের টাকা ফেরত নিতে দোকানের মালিকের পক্ষের লোকের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। দোকানের অগ্রিম টাকা ফেরত নিতে ডেমরা থানার মিন্টু চত্বর এলাকায় আসেন মাসুদ। এর আগেই এসআই লালবুর তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় দোকান মালিকপক্ষের লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করে হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে তাঁদের জানিয়ে পুলিশকে সহায়তা করতে বলেন। যেই কথা সেই কাজ, গত রোববার বেলা দুইটার দিকে মাসুদ হাওলাদার তাঁর দোকানের অগ্রিম দেওয়া টাকা নিতে মিন্টু চত্বরে আসতে চাইলে মালিকপক্ষ এসআই লালবুরকে খবর দেন। সংবাদ পাওয়ামাত্রই মামলার আইও এসআই লালবুর ও এএসআই মো. জসিম ঘটনাস্থলে দ্রুত ছুটে যান। এর আগে দোকানের মালিকপক্ষের লোকজন এসআই লালবুরকে জানান মাসুদ অনেক চতুর। সে তাঁর আশপাশে কোনো ভালো পোশাক ও চালচলনের কাউকে দেখলে দ্রুত সটকে পড়েন। কথাটি মাথায় রেখে এসআই লালবুর ছদ্মবেশ ধারণের সিদ্ধান্ত নেন। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রাজমিস্ত্রির পোশাকে মিন্টু চত্বর এলাকায় অবস্থান করেন। দোকান মালিকপক্ষের লোকের ওপর নজর রাখেন এসআই লালবুর ও এএসআই জসিম। একপর্যায়ে এসআই লালবুর দেখেন দূর থেকে একটি লোক মুখে মাস্ক পরা অবস্থায় দোকান মালিকপক্ষের লোককে সালাম দিচ্ছেন। ঘটনাক্রমে অভিযুক্ত মাসুদ হাওলাদার এসআই লালবুর ও এএসআই জসিমের পাশেই অবস্থান করছিলেন। কোনো কালক্ষেপণ না করে মাসুদকে পেছন থেকে ঝাপটে ধরেন এসআই লালবুর। হঠাৎ জনসমক্ষে এমন ঝাপটে ধরার কারণ স্থানীয় লোকজন জানতে চাইলে নিজের পরিচয় দিয়ে এসআই লালবুর বলেন, যাঁকে ধরা হয়েছে তিনি হত্যা মামলার আসামি। তখন পুলিশের এমন কাজের জন্য স্থানীয়দের প্রশংসায় প্রশংসিত হন কদমতলী থানা-পুলিশের এই চৌকস অফিসার।

হত্যার সময়ের চেহারা সঙ্গে গ্রেপ্তার ব্যক্তির চেহারার তারতম্য থাকার কারণ জানতে মাসুদকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি জানান, তাঁর চেহারা ছিল অনেক ফরসা এবং দাড়ি-গোফহীন। নিজেকে গোপন রাখতে তিনি তাঁর চেহারায় পরিবর্তন এনেছেন। চেহারা পরিবর্তন করতে তিনি দিনের বেশির ভাগ সময় রোদে থাকতেন যাতে করে ফরসা রং কালোতে পরিণত হয়। সেই সঙ্গে মুখে রেখেছিলেন বড় দাড়ি-গোফ, যাতে করে পুলিশ বা অন্য কেউ তাঁকে চিনতে না পারে।

গ্রেপ্তার মাসুদ হাওলাদার গতকাল সোমবার আদালতে অপরাধ স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।