মির্জাপুরে চাল সংগ্রহে অনিয়ম

চালের ছবিটি প্রতীকী।
চালের ছবিটি প্রতীকী।

টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে সরকারিভাবে চাল সংগ্রহে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্থানীয়ভাবে চাতালকলের মালিকদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ থাকলেও খাদ্যগুদামের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা চাল ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে উত্তরাঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে চাল সংগ্রহ করছেন। এ জন্য গুদামের কর্মকর্তাদের কেজিপ্রতি ৩ থেকে ৫ টাকা হারে ঘুষ দিচ্ছেন চাতালকলের মালিকেরা।

উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রমতে, এ বছর মির্জাপুরে সরকারিভাবে ১ হাজার ৪৮২ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহ করার কথা। ৬ মে উপজেলার সাতজন চাতালকলের মালিক জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। চুক্তি অনুযায়ী কাল বৃহস্পতিবারের মধ্যে প্রথম পর্যায়ে ৬৩১ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহের কথা রয়েছে। সরকার মির্জাপুর থেকে কেজিপ্রতি ৩৬ টাকা দাম বেঁধে দিয়েছে।

সূত্রটি জানায়, ১৩ মে থেকে মির্জাপুরে চাল সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু হয়। ইউএনও মো. আবদুল মালেক এর উদ্বোধন করেন। নিয়ম অনুযায়ী চাতালকলের মালিকেরা স্থানীয়ভাবে নতুন চাল সংগ্রহ করে তা সরকারকে দেবেন। কিন্তু খাদ্যগুদামের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা তাঁদের পছন্দের ব্যবসায়ীদের দিয়ে জামালপুর, শেরপুর, রংপুরসহ উত্তরাঞ্চল থেকে ট্রাকযোগে রাতের আঁধারে চাল গুদামে ঢোকাচ্ছেন। আর কাগজে-কলমে চুক্তিবদ্ধ মিলারদের নামে চাল সরবরাহ হচ্ছে বলে উল্লেখ করছেন। গুদামে তড়িঘড়ি করে চাল ঢোকানোর কাজে কর্মরত শ্রমিকদের দায়িত্বে আছেন হারুন অর রশিদ।

গত রোববার রাত পৌনে ১০টার দিকে কথা হয় রংপুরের পীরগঞ্জ থানার মিঠাপুকুর এলাকার ট্রাকচালক রুহুলের সঙ্গে। তিনি বলেন, তিনি টিটু মুন্সী নামের এক ব্যক্তির মাধ্যমে ১৬ টন চাল নিয়ে এসেছেন। এই চাল মির্জাপুরের খাদ্যগুদামে যাবে। তাঁর সঙ্গে কথা বলার সময় খাদ্যগুদামের এক কর্মচারী ট্রাকটি গুদামে ঢুকিয়ে নেন।

এ ব্যাপারে খাদ্য পরিদর্শক মোহাম্মদ তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘মিলারের সঙ্গে আমার ডিসি ফুডের (জেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রক) চুক্তি হয়েছে।আমি ওদের নামে বিল দিচ্ছি। বাইরে কে কী করছে, তা আমার দেখার কিছু নেই। চাল কোন জায়গায় থেকে আসবে, তার তদারকি করেন সাব-ইন্সপেক্টর কায়েস। উনি মিলে গিয়ে চাল দেখবেন। তারপর চাল এখানে (গুদামে) পাঠাবেন। চাল গুদামে মজুত করার কাজ হারুন
অর রশিদ নামের একজন লেবার হ্যান্ডেলিং করেন।’ তিনি আরও বলেন, ২৩ মের মধ্যে ৬৩১ টন চাল সংগ্রহ করার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। এ জন্য চাতালের মালিকেরা আগের ধান থাকলেও সেই ধান চাতালে শুকিয়ে চাল দিচ্ছেন। গতকাল পর্যন্ত ৫৭৭.২০০ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহ করা হয়েছে বলে জানান খাদ্য পরিদর্শক।

হারুন অর রশিদের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার সঙ্গে কোনো কথা নেই। আপনি মিলারদের সঙ্গে কথা বলেন।’

কাজী রাইস মিল নামক চাতালকলের মালিক কাজী ওবাইদুর রহমান বলেন, ‘আমারে প্রথমে ৯০ টন টার্গেট দিছিল। আমার চাল দেয়া হইছে। আমার মিলে থিক্যা দিলে সময় কোলাবো না। চাল ভাঙা বেরোবে। এ জন্য আমি জামালপুর থেকে চাল আনছি। আর যে যেনে থিক্যা পারছে আনছে। কেউ কালিহাতী, কেউ বগুড়া। আর গুদামে চাল ঢুকাতে দুই-তিন টাকা কইর্যা দিওন লাগছে।’

চাতালকল থ্রি ব্রাদার্স রাইস মিলের মালিক মো. আলী আজম মিয়ার মুঠোফোনে কল করলে অপর প্রান্ত থেকে কথা বলেন আবদুল মালেক নামের এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, চাতালকলটি তিনি ভাড়ায় চালান। সরকারের সঙ্গে হওয়া চুক্তির সব তিনি দেখাশোনা করেন। তিনি বলেন, ‘আমি ৮০-৯০ টন চাল দিছি। চাল আনছি ওপার (উত্তরাঞ্চল) থেকে।’

চাতালকলের মালিকদের দেওয়া তথ্যমতে, গতকাল পর্যন্ত গুদামে সংগৃহীত ৫৭৭.২০০ মেট্রিক টন চাল কেজিপ্রতি ৩ টাকা বাবদ ১৭ লাখ ৩১ হাজার ৬০০ টাকা ঘুষ দিতে হয়েছে। তবে অন্য একটি সূত্রমতে কেজিপ্রতি ৫ টাকা হারে ২৮ লাখ ৮৬ হাজার টাকা ঘুষ দিতে হয়েছে।

ফোন না ধরায় এ ব্যাপারে সহকারী খাদ্য পরিদর্শক কায়েসের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. কামাল হোসেন বলেন, সম্পূর্ণ চাল স্থানীয়ভাবে সংগ্রহ করতে হবে। চাল না পেলে আবেদন দিলে কেনার সময় বাড়ানো হবে। তা ছাড়া চাল সংগ্রহে কোনো অনিয়ম হলে তার জন্য কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।