দুশ্চিন্তা কাটছে দুই আয়েশার

দুই আয়েশা ও তাদের বাবাদের হাতে গৃহনির্মাণের লক্ষ্যে বরাদ্দপত্র তুলে দেন রংপুরের জেলা প্রশাসক এনামুল হাবীব। পেছনে তারাগঞ্জের ইউএনও আমিনুল ইসলাম (ডানে) ও হাড়িয়ারকুঠি ইউপির চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদ। রংপুর, ২২ মে। ছবি: প্রথম আলো
দুই আয়েশা ও তাদের বাবাদের হাতে গৃহনির্মাণের লক্ষ্যে বরাদ্দপত্র তুলে দেন রংপুরের জেলা প্রশাসক এনামুল হাবীব। পেছনে তারাগঞ্জের ইউএনও আমিনুল ইসলাম (ডানে) ও হাড়িয়ারকুঠি ইউপির চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদ। রংপুর, ২২ মে। ছবি: প্রথম আলো

রংপুরের তারাগঞ্জের দুই আয়েশার পড়াশোনা নিয়ে দুশ্চিন্তা কাটছে। তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে জেলা প্রশাসন। এ ছাড়া অনেকে সহানুভূতির হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন।

বুধবার বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত দুই আয়েশা ৫ লাখ ৫৬ হাজার ১৪২ টাকা সহায়তা পেয়েছে। পাশাপাশি প্রতি মাসে তাদের পড়ার খরচ কয়েকজন পাঠক দিতে চেয়েছেন।

বুধবার রংপুরের জেলা প্রশাসক এনামুল হাবীব দুই আয়েশার হাতে গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টিআর) কর্মসূচির আওতায় গৃহহীনদের জন্য দুর্যোগ–সহনীয় বাসগৃহ নির্মাণের লক্ষ্যে ৫ লাখ ১৬ হাজার ৪৬২ টাকার বরাদ্দপত্র ও একটি করে সেলাই মেশিন তুলে দেন। অর্থাৎ প্রত্যেক আয়েশা ঘর নির্মাণের জন্য পেল ২ লাখ ৮ হাজার ২৩১ টাকা করে।

আয়েশা সিদ্দিকা ও আয়েশা সিদ্দিকা আক্তার জানিয়েছে, জেলা প্রশাসকের এই সহায়তার বাইরে তারা দেশ-বিদেশের কয়েকজন ব্যক্তির কাছ থেকে বিকাশে পেয়েছে ৩৯ হাজার ৬৮০ টাকা। তারা আরও জানিয়েছে, যেসব লোক তাদের সহায়তা দিয়েছেন, সাধারণত তাঁরা সমান হারে দুজনের জন্য বিকাশ করেছেন। এ হিসাবে বিকাশে প্রত্যেক আয়েশা পেয়েছে ১৯ হাজার ৮৪০ টাকা করে।

তারাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আমিনুল ইসলাম বলেন, প্রথম আলোর প্রতিবেদনটি রংপুর জেলা প্রশাসক এনামুল হাবীবের নজরে আসে। তাঁর নির্দেশে তিনি ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আবদুল মমিন গত রোববার সরেজমিনে আয়েশাদের অর্থনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে খোঁজখবর নেন। এরপর বুধবার দুই আয়েশা ও তাদের বাবাদের গাড়িযোগে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে নিয়ে আসেন। জেলা প্রশাসকও দুই আয়েশার কাছে তাদের জীবনসংগ্রামের কথা শোনেন। এরপর বেলা দুইটার দিকে জেলা প্রশাসক দুই আয়েশার হাতে টিআর কর্মসূচির আওতায় গৃহহীনদের জন্য দুর্যোগ সহনীয় বাসগৃহ নির্মাণের লক্ষ্যে ৫ লাখ ১৬ হাজার ৪৬২ টাকার বরাদ্দপত্র ও একটি করে সেলাই মেশিন তুলে দেন।

আয়েশাদের হাতে বরাদ্দপত্র তুলে দেওয়ার সময় উপস্থিত ছিলেন তারাগঞ্জের ইউএনও আমিনুল ইসলাম, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আবদুল মমিন ও হাড়িয়ারকুঠি ইউপির চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদ।

সহায়তাকারীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে দুই আয়েশা বলে, লেখাপড়া শেষ করে তারা নিজেদের পায়ে দাঁড়াবে। দেশ ও মানুষের কল্যাণে কাজ করবে। তাদের মতো শিক্ষার্থীদের সহায়তা করবে।

আয়েশা সিদ্দিকার বাবা আবদুস সালাম বলেন, ‘মেয়েটার পড়ার খরচ নিয়ে খুব চিন্তায় আছনু। আইজ আর কোনো চিন্তা নাই। প্রথম আলোত খবর প্রকাশের পর দেশের মেলা মানুষ মোর মেয়েটার পাশোত দাঁড়াইছে।’

আয়েশা সিদ্দিকা আক্তারের বাবা জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘মেট্রিক (এসএসসি) পরীক্ষা দিবার আগোত মুই মোর মেয়েটাক বিয়াও দিবার চাছনু। কিন্তু হামার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিয়া দিবার দেয় নাই। ওয় বাড়িত আসি কইছে, কষ্ট করি হইলেও মেয়েটাক পড়াও। তোমার মেয়েটা দ্যাশের সম্পদ। সবার মুখ উজ্জ্বল করবে। আজ বুজবার পাওছুন ওর বুদ্দিকোনা শুনি মুই ভালো করছুন।’

দুই আয়েশার বাড়ি রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার হাড়িয়ারকুঠি ইউনিয়নের দুটি গ্রামে। তারা চলতি বছরে স্থানীয় ডাংগীরহাট স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়। তারা দুজনই বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ অর্জন করে। দুই আয়েশার বাবাই বয়স ও রোগের কারণে প্রায় অকর্মক্ষম। এ কারণে দারিদ্র্য তাদের পড়াশোনায় বাধা হয়ে দাঁড়ায়, যা নিয়ে ১৬ মে প্রথম আলোর অনলাইনে ‘জিপিএ-৫ পাওয়া দুই আয়েশা পড়াশোনা চালিয়ে নেওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায়’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।