প্রতীক্ষার উড়ালসড়কে যান চলাচল শুরু হচ্ছে আজ

ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে গাজীপুরের কোনাবাড়ী উড়ালসড়ক। গতকাল তোলা ছবি।   প্রথম আলো
ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে গাজীপুরের কোনাবাড়ী উড়ালসড়ক। গতকাল তোলা ছবি। প্রথম আলো

দীর্ঘ প্রতীক্ষা শেষে চালু হচ্ছে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের গাজীপুরের কোনাবাড়ী ও কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকার উড়ালসড়ক (ফ্লাইওভার)। আজ শনিবার উড়ালসড়ক দুটি যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সাসেক প্রকল্প কর্মকর্তারা জানান, আজ ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উড়ালসড়ক দুটির উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উড়ালসড়ক দুটি চালু হলে ঈদে ঘরমুখী মানুষ যানজট থেকে অনেকটা মুক্তি পাবে। কিন্তু এখনো উড়ালসড়ক দুটির অনেক কাজ বাকি। এর মধ্যে কোনাবাড়ী উড়ালসড়কের দুই পাশের সংযোগ–সড়ক নির্মাণ করা হলেও গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত সংযোগ সড়কে কার্পেটিং করা হয়নি। সড়কবাতি লাগানো হয়নি। রোড মার্কিং ও সাইন স্থাপন (নির্দেশক চিহ্ন) না করায় রাতে গাড়ির চালকদের সমস্যায় পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, উত্তরবঙ্গের ২৩টি জেলার ১১৭টি রুটের পরিবহন চলাচল করে গাজীপুর জেলার ওপর দিয়ে। এ কারণে প্রতিবছর ঈদযাত্রায় লাখ লাখ মানুষের দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায় গাজীপুরের যানজট। বিশেষ করে কোনাবাড়ী, কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা ত্রিমোড় ও বাইপাস এলাকায় যানজট নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়।

সাসেক সড়ক সংযোগ প্রকল্প-১–এর কর্মকর্তারা জানান, প্রকল্পের আওতায় জয়দেবপুর-এলেঙ্গা মহাসড়কের গাজীপুরের ভোগড়া বাইপাস মোড় থেকে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা পর্যন্ত ৭০ কিলোমিটার সড়ক চার লেনে উন্নীতকরণের কাজ চলছে। পাশাপাশি সড়কের দুই পাশে ধীরগতির যান চলাচলের জন্য পৃথক সার্ভিস লেন তৈরির কাজ চলছে। প্রকল্পের অধীন ১১টি উড়ালসড়ক, ১৩টি আন্ডারপাস, ২৬টি সেতু ও ৭৪টি কালভার্ট নির্মাণ করা হচ্ছে। এসব প্রকল্পের ৬০ ভাগ কাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে।

চার লেনবিশিষ্ট ৪০টি স্প্যানের কোনাবাড়ী উড়ালসড়কের দৈর্ঘ্য ১ হাজার ৬৪৫ মিটার, প্রস্থ ১৮ দশমিক ২০ মিটার। এর নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ২১০ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। অন্যদিকে কালিয়াকৈরের চন্দ্রায় নির্মিত সাতটি স্প্যানের উড়ালসড়কের দৈর্ঘ্য ২৮৮ মিটার, প্রস্থ ১৮ দশমিক ২০ মিটার। মহাসড়কের গাজীপুরের কড্ডায় দুই লেনের সেতুর পাশে নির্মিত সেতুটির দৈর্ঘ্য ৭০ মিটার, প্রস্থ ১৪ দশমিক ৭১৫ মিটার। এটি দুই স্প্যানের।

>কোনাবাড়ী ও চন্দ্রা
সংযোগ সড়কে কার্পেটিং নেই
সড়কবাতি, রোড মার্কিং ও সাইন স্থাপন করা হয়নি

এ ছাড়া মহাসড়কের গাজীপুরের বাইপাস এলাকায় বিদ্যমান দুই লেন সড়কে পাশে নির্মিত সেতুটির দৈর্ঘ্য ১২১ মিটার, প্রস্থ ১৪ দশমিক ৭১৫ মিটার। এটি ৫টি স্প্যানের। অন্যদিকে কালিয়াকৈর বাইপাস এলাকায় সংযোগ সড়কসহ আন্ডারপাসটির দৈর্ঘ্য ৪২০ মিটার। এ ছাড়া মির্জাপুর থানার দেওহাটা বাজার ও নতুন বাসস্ট্যান্ড এলাকা এবং টাঙ্গাইল সদর উপজেলার টাঙ্গাইল বাইপাস এলাকায় আন্ডারপাস যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।

গতকাল কোনাবাড়ী ও চন্দ্রা এলাকা ঘুরে জানা গেছে, কোনাবাড়ী উড়ালসড়কটির কাজ শেষ হলেও দুই পাশের সংযোগ–সড়কে কার্পেটিং বা আরসিসি ঢালাই করা হয়নি। ইট–সুরকি ও বালু ফেলে সমান করার কাজ চলছে। সড়কবাতি লাগানো হয়নি। সড়কে সাদা সাইন মার্কিং দেওয়া হয়নি। তবে উদ্বোধনের জন্য সড়কের পাশ দিয়ে লাল–সবুজ পতাকা লাগানো হচ্ছে। কেউ কেউ সেতুর ওপর ময়লা–আবর্জনা ফেলছে। আর চন্দ্রা এলাকার উড়ালসড়কের পশ্চিম পাশের সংযোগ–সড়কের নির্মাণকাজ শেষ হয়নি।

চন্দ্রা এলাকায় কাজের তদারকি করছেন প্রকল্প ব্যবস্থাপক মো. সাখাওয়াত হোসেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের নির্দেশনা দেওয়া ছিল, যাতে ঈদের আগে যানবাহন চলাচল করতে পারে, কিন্তু উদ্বোধনের কথা বলা হয়নি। তাই এখন তড়িঘড়ি করে চালু করার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’

সাসেক সড়ক সংযোগ প্রকল্প-১–এর উপপরিচালক প্রকৌশলী এ বি এম সেরতাজুর রহমান গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, উড়ালসড়ক দুটির কাজের কিছু বাকি আছে। সন্ধ্যার মধ্যে এসব কাজ শেষ করা হবে।

গাজীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. গোলাম সবুর প্রথম আলোকে বলেন, ‘সেতু দুটি খুলে দেওয়া হলে কোনাবাড়ী, চন্দ্রাসহ আশপাশের এলাকায় আর যানজট হবে না বলে আশা করছি। এ ছাড়া সড়কের বিভিন্ন স্থানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।’