রাজশাহী মেডিকেলের ফুটপাত আবার দখলে

ফুটপাত দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে হোটেল। বটগাছের গোড়ায় জ্বলছে হোটেলের চুলা। গতকাল রাজশাহী নগরের সাগরপাড়া বটতলায়।  প্রথম আলো
ফুটপাত দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে হোটেল। বটগাছের গোড়ায় জ্বলছে হোটেলের চুলা। গতকাল রাজশাহী নগরের সাগরপাড়া বটতলায়। প্রথম আলো

রাজশাহী বাস টার্মিনাল অথবা রেলস্টেশনে নেমে রিকশায় উঠে ‘সাগরপাড়া বটতলা’ বললে তাঁকে আর কিছু বলতে হতো না। রিকশাওয়ালা যথারীতি নামিয়ে দিতেন। যে গাছের নামে জায়গাটির নাম হয়েছিল, সেই গাছটি আর নেই। রাস্তা সম্প্রসারণের প্রয়োজনে তিন বছর আগে গাছটি কেটে ফেলা হয়। তখনই একজন দোকানি রাস্তার পাশে বটগাছের ডাল পুঁতে দিয়েছিলেন। সেই ডালটি এখন বটগাছ হিসেবে মাথা তুলছে।

ফুটপাতে সেই গাছের গোড়ায় চুলা জ্বেলে হোটেল চালাচ্ছেন এক ব্যক্তি। রাজশাহী নগরের ফুটপাত থেকে অবৈধ ব্যবসায়ীদের উচ্ছেদ করার পরেও ব্যবসায়ীদের অনেকেই বহাল তবিয়তে রয়ে গেছেন।

রাজশাহী শহরে গত এপ্রিল মাসজুড়ে ফুটপাত থেকে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদে অভিযান চালানো হয়। ফুটপাত থেকে সব ধরনের ব্যবসায়ীদের উচ্ছেদ করা হয়। সিটি করপোরেশন থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়, ফুটপাতে নয়, রাস্তার পাশে ভ্যান নিয়ে ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীরা বিকেল ৪টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ব্যবসা করতে পারবেন।

বটগাছটি কাটার সময় রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল হক বলেছিলেন, তাঁরা পরিকল্পনা করেছেন, রাস্তার দুই পাশে দুটি বটগাছ রোপণ করবেন। রাস্তার নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার পরে দুটি গাছের চারা রোপণ করা হয়েছে। এখনো তা ডালপালা মেলতে পারেনি।

ফুটপাত থেকে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ অভিযান শেষ হওয়ার পর থেকেই ফুটপাতগুলো ফের দখল হওয়া শুরু হয়েছে। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনের রাস্তার দুই পাশে আগের মতো ফুটপাত দখল করে ব্যবসায়ীরা বসে পড়েছেন। সারা রাত সেখানে ব্যবসা চলে। শহরের অন্যান্য এলাকার ফুটপাতও আবার দখল হতে শুরু করেছে।

গতকাল শুক্রবার দুপুরে নগরের সাগরপাড়া বটতলার মোড়ে গিয়ে দেখা গেছে, সেই শিশু বটগাছ ঘিরে ফুটপাতের ওপরে একজন হোটেল ব্যবসায়ী দোকান মেলেছেন। তিনি শুধু ফুটপাত দখল করেছেন তা–ই নয়, সেই গাছটির গোড়ায় চুলা জ্বেলে রীতিমতো হোটেলের সব রান্নাবান্না সেরে নিচ্ছেন। গাছের গোড়ায় কেন চুলা জ্বেলেছেন, জানতে চাইলে হোটেলের মালিক বলেন, ‘গাছটা আমরাই দেখেশুনে রাখি। যত্ন করি।’ চুলার আগুনে গাছের ক্ষতি হচ্ছে কি না, জানতে চাইলে তিনি অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে বলেন, চুলা তিনি সরিয়ে নেবেন।

২০১৬ সালের ২১ এপ্রিল সাগরপাড়া বটতলার বটগাছটি কাটার সময় সাগরপাড়া এলাকার বাসিন্দা সাদেকুল আনোয়ার (৫৫) প্রথম আলোকে বলেছিলেন, যে গাছটি রাস্তা সম্প্রসারণের জন্য কাটা হলো, এটি তখন থেকে প্রায় ১৫ বছর আগে এলাকার বাসিন্দা আবদুল মতিন লাগিয়েছিলেন। আবদুল মতিন তখন থেকে আট-দশ বছর আগে মারা যান। স্থানীয় ব্যবসায়ী আবুল কাশেম বলেছিলেন, এখন মুখে মুখে সাগরপাড়া বটতলার নাম থাকলেও এখানে এসে কেউ কোনো বটগাছ দেখতে পাবেন না। তবে সে সময় কে যেন রাস্তার পাশে বটগাছের একটি ডাল পুঁতে দেন।

ফুটপাত পুনরায় দখল হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ম্যাজিস্ট্রেট সমর কুমার পাল বলেন, ঈদের জন্য অভিযান স্থগিত করা হয়েছে। ঈদের পরে আবার অভিযান চালানো হবে। ফুটপাতে কেউ ব্যবসা করতে পারবেন না।