অবেদনবিদের অভাবে ব্যাহত প্রসূতি বিভাগের জরুরি সেবা

ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার বনুড়া গ্রামের সোলায়মান মিয়ার স্ত্রীর প্রথম সন্তান হবে। তিনি স্ত্রীকে নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রসূতি বিভাগে আসেন। কর্তব্যরত নার্স চেষ্টা করে সন্তান প্রসব করাতে ব্যর্থ হন। তিনি জেলা পর্যায়ের কোনো হাসপাতালে নিয়ে যেতে পরামর্শ দেন। প্রসব ব্যথায় কাতর স্ত্রীকে নিয়ে উদ্বিগ্ন সোলায়মান স্ত্রীকে নিয়ে ছুটে যান জেলা সদরের দিকে।

১৬ মে দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। সোলায়মানের মতো ঘটনা এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রসূতি বিভাগে প্রায় প্রতিদিনই ঘটছে। অবেদনবিদের (অ্যানেসথেসিস্ট) পদ শূন্য থাকায় ৫০ শয্যার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি প্রসূতিসেবা বিভাগের (ইমার্জেন্সি অবস্টেট্রিক কেয়ার–ইওসি) অস্ত্রোপচার কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। ফলে প্রসূতিরা এ বিভাগের কোনা সেবা পাচ্ছেন না। মোটা অঙ্কের টাকা খরচ করে তাঁদের জেলা পর্যায়ের হাসপাতালে ছুটতে হচ্ছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০০৩ সালে ৪ আগস্ট একটি বিদেশি দাতা সংস্থার অর্থায়নে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জরুরি প্রসূতিসেবা কার্যক্রম (ইওসি) চালু করা হয়। কমপ্লেক্সের দুজন চিকিৎসককে শল্য (সার্জিক্যাল) ও অবেদন (অ্যানেসথেসিয়া) বিষয়ে বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এই কার্যক্রমের উদ্দেশ্য ছিল গ্রামাঞ্চলে শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার কমিয়ে আনা। ২০০৮ সাল পর্যন্ত দাতা সংস্থার অর্থায়নে ইওসি কার্যক্রমটি চালু থাকে। পরে সেটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রসূতি বিভাগের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়।

নথিপত্র ঘেঁটে জানা যায়, ইওসিতে প্রথম শল্যবিদ ছিলেন তাজুল ইসলাম খান। তিনি এখন নেত্রকোনার সিভিল সার্জন। অবেদনবিদ আবদুল মোতালেব ২০১৪ সালের শেষ দিকে অবসর গ্রহণ করেন। ফলে ২০১৫ সালে প্রসূতি বিভাগের অস্ত্রোপচার কার্যক্রম বন্ধ হয়ে পড়ে। ২০১৬ সালে গাইনি বিভাগে পরামর্শক (কনসালট্যান্ট) হিসেবে যোগ দেন দেলোয়ারা পারভীন। এরপর স্থানীয় সাংসদ আনোয়ারুল আবেদিন খান প্রসূতি বিভাগের অস্ত্রোপচার কার্যক্রম চালু করার উদ্যোগ নেন। অবসরকালীন ছুটিতে থাকা আবদুল মোতালেবকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়। কোনো প্রসূতির অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন দেখা দিলে তাঁকে ডেকে আনা হতো। শল্যচিকিৎসার কাজ করতেন দেলোয়ারা পারভীন। এরপর ২০১৬ সালের মাঝামাঝিতে অবেদনবিদ পদে জেরিন আবদুল্লাহ যোগ দিলে আবদুল মোতালেব চলে যান। কিন্তু যোগদানের এক মাসের মধ্যে জেরিন আবদুল্লাহ উচ্চতর প্রশিক্ষণ নিতে চলে যান। প্রশিক্ষণ শেষে ফেরার পর জেরিন আবদুল্লাহ গত বছরের ২৮ জানুয়ারি বদলি হয়ে অন্যত্র চলে যান। জেরিন আবদুল্লাহ চলে যাওয়ার পর থেকে প্রসূতি বিভাগে অস্ত্রোপচার কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র বলছে, অস্ত্রোপচার কার্যক্রম বন্ধ থাকায় প্রসূতি বিভাগে সার্বক্ষণিক চিকিৎসক থাকেন না। ফলে সন্তান প্রসবের জন্য প্রসূতিরা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসে প্রতিনিয়ত দালালদের খপ্পড়ে পড়ছেন। একটি দালাল চক্র সন্তান প্রসবের কথা বলে প্রসূতিদের টানাটানি করে বিভিন্ন মানহীন ক্লিনিকে নিয়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে সন্তান প্রসব করাচ্ছেন। এ ধরনের ঘটনায় কোনো কোনো সময় প্রসূতির মৃত্যু পর্যন্ত ঘটছে।

জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা এনামুল কবীর প্রথম আলোকে বলেন, অ্যানেসথেসিস্ট না থাকায় অস্ত্রোপচার কার্যক্রম বন্ধ আছে। বিষয়টি তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন।