উৎপাদন ১ লাখ কেনা হবে ৬৩৪ মেট্রিক টন

মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার খাদ্যগুদামের সামনে ধান শুকাতে ব্যস্ত দুই শ্রমিক।  প্রথম আলো
মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার খাদ্যগুদামের সামনে ধান শুকাতে ব্যস্ত দুই শ্রমিক। প্রথম আলো

এক কেজি ধান উৎপাদনে কৃষকের খরচ ১৭ টাকার মতো। কষ্টার্জিত সেই ধান বেচে লাভ দূরের কথা, উল্টো তিন–চার টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে। সরকার যে দাম ধরেছে, সেই দামে ধান সরবরাহ করতে পারলে লাভ হতো। তবে জেলায় সরকারিভাবে ধান কেনা হবে সামান্য পরিমাণে। মাত্র ৬৩৪ মেট্রিক টন। সেই ধানও কৃষকের কাছ থেকে নেওয়া হবে কি না, আছে সংশয়। এ অবস্থায় চরম হতাশ মেহেরপুরের কৃষকেরা।

জানতে চাইলে মেহেরপুর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আবদুল হামিদ প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ধান কিনবেন। এর স্বার্থে ধান কেনার সময় খাদ্যগুদামে উপস্থিত থাকবেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাঠকর্মীরা। সব মিলিয়ে প্রকৃত কৃষকেরা যাতে ন্যায্যমূল্যে সরকারের কাছে ধান বিক্রি করতে পারেন, সেটা নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর খাদ্য বিভাগ।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি বোরো মৌসুমে মেহেরপুরে এবার ২১ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। জেলায় মোট ধান উৎপাদন হয়েছে ১ লাখ ১২ হাজার মেট্রিক টন। জেলার গাংনী উপজেলার ধানখোলা এলাকার কৃষক জাকির শেখ। এবার তিনি সাত বিঘা জমিতে ধানের আবাদ করেছিলেন। জমির বর্গা নিতে খরচ হয়েছে। এরপর চষা, চারা রোপণ, সার ও কীটনাশক প্রয়োগ করে তিলে তিলে ধানগাছ বড় করেছেন। আগাছা পরিষ্কার ও সব শেষে ধান কাটা-মাড়াইয়ে শ্রমিক লেগেছে। সব মিলিয়ে তাঁর এক বিঘা জমিতে খরচ হয়েছে ১৩ হাজার ৬০০ টাকা। জাকির শেখ বিঘাপ্রতি গড়ে পেয়েছেন ৮০০ কেজি। সে হিসাবে প্রতি কেজি ধান উৎপাদনে তাঁর খরচ হয়েছে ১৭ টাকার মতো। আর বাজারে এখন ধান বিক্রি হচ্ছে প্রতি মণ ৫২০ থেকে ৫৫০ টাকায়। অর্থাৎ এক কেজি ধানের দাম ১৪ টাকাও নয়। সে হিসাবে প্রতি কেজি ধানে কৃষকের গচ্চা যাচ্ছে তিন থেকে চার টাকা।

গাংনী উপজেলার রাধাগোবিন্দপুর গ্রামের কৃষক কদম আলী বলেন, পাঁচ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছিলেন তিনি। ফলও এবার যথেষ্ট ভালো হয়েছে। তারপরও তাঁর অনেক টাকার লোকসান গুনতে হয়েছে। এর চেয়ে ওই জমি অন্যের কাছে বর্গা দিলেও কিছুটা টাকা পেতেন তিনি। কদম আলী বলেন, সরকার ২৬ টাকা কেজি দরে ধান কেনা শুরু করেছে। কিন্তু সেখানে তাঁদের মতো প্রকৃত কৃষকের ধান সরবরাহ করার সুযোগ নেই। আবার সরকারিভাবে ধান কেনাও হয় যৎসামান্য। তাই ওই উদ্যোগ কৃষকের কাজে আসবে না।

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এবার মেহেরপুরে ৬৩৪ মেট্রিক টন বোরো ধান কেনার অনুমতি পেয়েছে তারা। সে হিসাবে জেলায় উৎপাদিত মোট ধানের মাত্র ১ শতাংশ ধান কিনতে পারবে তারা। সরকারিভাবে ধানের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ২৬ টাকা কেজি। গত মঙ্গলবার সদর উপজেলার মল্লিকপাড়ার সরকারি খাদ্যগুদামে জেলা প্রশাসক আতাউল গণি উপস্থিত থেকে বোরো ধান সংগ্রহ কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। এ সময় ভারপ্রাপ্ত জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আবদুল হামিদ, সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোশারফ হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

সদর উপজেলার দারিয়াপুর গ্রামে কৃষক হারেজ মিয়া বলেন, কৃষকের ধানের ন্যায্যমূল্য দেওয়ার লক্ষ্যেই সরকারের ধান সংগ্রহ কর্মসূচি। কিন্তু এত কম ধান কিনলে কী করে হবে? জেলা ধানের বেশির ভাগই যদি সরকার কিনে নিত, তাহলে কৃষকেরা লোকসানের মুখে পড়তেন না। আবার সরকারি গুদামে প্রকৃত কৃষকেরা ধান দিতে পারেন না। মধ্যস্বত্বভোগীরা সিন্ডিকেট করে সেখানে ধান সরবরাহ করেন। তিনি প্রকৃত কৃষকদের তালিকা করে তাঁদের কাছ থেকে ধান কেনার মাধ্যমে কৃষি ও কৃষক বাঁচাতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মেহেরপুর কার্যালয়ের উপপরিচালক আখতারুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, এবার জেলায় বোরো ধানের ফলন ভালো হয়েছে। তবে এবার বোরো মৌসুমে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হয়নি। তাই পাম্পের মাধ্যমে সেচ দিতে হওয়ায় কৃষকের বাড়তি খরচ বেশি হয়েছে। আবার এখন বাজারে ধানের দামও কম। সরকারিভাবে ধান কেনার পরিমাণ বাড়াতে পারলে কৃষক উপকৃত হবেন। মাঠপর্যায়ে গিয়ে জেলার প্রকৃত কৃষকদের তালিকা প্রণয়ন করা হয়েছে বলে জানান তিনি।