দুস্থ নারীদের ভিজিডি কার্ড পাইয়ে দিতে টাকা আদায়

ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার ডাকাতিয়া ইউনিয়নে দুস্থ ও অসহায় নারীদের ভিজিডি (ভালনারেবল গ্রুপ ডেভেলপমেন্ট) কার্ড বিতরণে টাকা আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। আবার অনেক নারী আবার টাকা দিয়েও কার্ড পাননি। অভিযোগ পেয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে উপজেলা প্রশাসন।

প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের আওতায় দুস্থ ও অসহায় নারীদের মধ্যে ভিজিডি কার্ডের মাধ্যমে প্রতি মাসে ৩০ কেজি করে চাল দেওয়া হয়। দুস্থ নারীদের তালিকা করে দুই বছর মেয়াদি এই কার্ড বিতরণ করা হয়েছে। কার্ড পাইয়ে দিতে ইউনিয়নের বিভিন্ন ওয়ার্ডে দুস্থ নারীদের মাথাপিছু দুই হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয়েছে।

কথা বলে জানা গেছে, ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড ডালুয়া বানিয়াপাড়ায় আবদুর রহিম চেয়ারম্যানকে দেওয়ার কথা বলে নয়জন দুস্থ নারীর কাছ থেকে তিন হাজার টাকা করে মোট ২৭ হাজার টাকা নিয়েছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ওই নারীরা কার্ড বা চাল কোনোটিই পাননি। কার্ডবঞ্চিত আছমা আক্তার (৪৫) জানান, আট মাস আগে রহিম ভিজিডি দেওয়ার কথা বলে তিন হাজার টাকা করে নেন। কিন্তু কার্ড বা চাল কোনোটাই তাঁরা পাননি।

টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করে আবদুর রহিম বলেন, কার্ড অনুমোদনের চেষ্টা করে তা সম্ভব হয়নি। তাঁদের টাকা ফেরত দেওয়া হবে।

স্থানীয় লোকজন জানান, ইন্তারঘাট এলাকায় শুকুর আলীর স্ত্রী নাছিমার কাছ থেকে তিন হাজার টাকা ও হায়েত আলীর স্ত্রী সাফিয়ার কাছ থেকে দুই হাজার টাকা নিয়েছেন ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আসাদুজ্জামান দুদু। কিন্তু কার্ড বা চাল কোনোটিই পাননি তাঁরা। এরপর গত রোববার নাছিমাসহ তিন নারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন।

৮ নম্বর ওয়ার্ডের হারুন মেম্বার পাঁচগাঁও গ্রামের শফিক মিয়ার স্ত্রী আমেনা বেগম ও রফিক মিয়ার স্ত্রী শিল্পী আক্তারের কাছ থেকে তিন হাজার টাকা করে নিলেও তাঁদের কার্ড দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন। পাঁচগাঁও গ্রামের শিরিনা আক্তার (৩৫) বলেন, তাঁর স্বামী মোর্শেদ আলম অসুস্থ। কাজকর্ম করতে পারেন না। কার্ডের জন্য হারুন মেম্বারকে দুই হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে কিন্তু তাঁকে কার্ড দেওয়া হয়নি।

টাকা দিয়েও কার্ডবঞ্চিত ইন্তারঘাট ও পাঁচগাঁও এলাকার একাধিক নারী বলেন, হারুন মেম্বার শতাধিক গরিব নারীর কাছ থেকে দুই হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা করে হাতিয়ে নিয়েছেন। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর হারুন বাড়ি বাড়ি গিয়ে বাড়াবাড়ি না করতে হুমকি দিচ্ছেন।

তবে হারুন অর রশিদ বলেন, ‘সব অভিযোগ মিথ্যা। সাইফুল চেয়ারম্যান পরিষদে বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম করে যাচ্ছেন। এর প্রতিবাদ করায় তিনিই লোক দিয়ে আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছেন।’

চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলামের সরকারি ও ব্যক্তিগত মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও সংযোগ পাওয়া যায়নি।

উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা জাহিদা ফেরদৌসী বলেন, কয়েকজন নারী ইউএনও বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

ইউএনও মাসুদ কামাল বলেন, অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) নেতৃত্বে গঠিত কমিটিকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।