বস্তা খুলে দেখেন ১৬ কেজি চাল গায়েব!

চাল। ফাইল ছবি
চাল। ফাইল ছবি

সরকারি সহায়তা হিসেবে দুই বস্তা চাল পেয়েছিলেন জেলে মাহবুব খান। বলা হয়েছিল, দুই বস্তায় ৬০ কেজি চাল রয়েছে। তবে বাড়ি গিয়ে মেপে দেখেন চাল মাত্র ৪৪ কেজি। ১৬ কেজি গায়েব! তিনি একা নন, অন্য জেলেদের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছে। তবে ঘটনা শুধু এখানেই থেমে থাকেনি। চাল কম দেওয়া হয়েছে কেন, তা জানতে গেলে তিন জেলেকে পিটিয়ে আহত করা হয়েছে। এর মধ্যে একজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

ঘটনাটি ঘটেছে গতকাল শুক্রবার বরগুনা সদর উপজেলার ১০ নম্বর নলটোনা ইউনিয়নে।

১ নভেম্বর থেকে আট মাসের জন্য ছোট (সাড়ে ৪ সেন্টিমিটার) ফাঁসজাল দিয়ে উপকূলের নদ-নদীতে মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে সরকার। নিষেধাজ্ঞার সময়ে এসব জেলেকে চার মাসে ৪০ কেজি করে ১৬০ কেজি চাল দেওয়ার কথা হয়েছে। তবে ১০ নম্বর নলটোনা ইউনিয়নে ৩০ থেকে ৬০ কেজি চাল বিতরণ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ইচ্ছেমতো পরিমাপ করে বস্তা ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে জেলেদের। চাল বিতরণে অনিয়মের প্রতিবাদ করায় তিন জেলেকে ইউপি ভবনের একটি কক্ষে আটকে রেখে চেয়ারম্যান হুমায়ূন কবির লাঠি দিয়ে পিটিয়ে আহত করেন বলে অভিযোগ করেন কয়েক জেলে।

মারধরে আহত জেলেরা হলেন আবদুল মন্নান মুসল্লি (৪৫), দেলোয়ার হোসেন সিকদার (৫০) ও জহিরুল মুসল্লি (৩০)। এর মধ্যে গুরুতর আহত দেলোয়ার হোসেন সিকদারকে গতকাল রাতে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

আজগরকাঠি গ্রামের জেলে কবির মৃধা, ফারুক খান, রিপন, আলম খান; নলটোনা গ্রামের নাসির খন্দকার, দেলোয়ার খন্দকার; নিশানবাড়িয়া গ্রামের নাসির শিকদার, আলী হোসেন, শহীদ খানসহ ২০ জন জেলে জানান, তাঁরা প্রত্যেক ৩০ থেকে ৬০ কেজি চাল পেয়েছেন।

আজগরকাঠি গ্রামের জেলে মাহবুব খান বলেন, ‘আমাকে দুই বস্তা চাল দেওয়া হয়। বস্তায় ৬০ কেজি চাল আছে বলে জানানো হয়। বাড়ি নিয়ে মেপে দেখি দুই বস্তায় ৪৪ কেজি চাল। চাল কম দেওয়ার কারণ জানতে চাওয়ায় চেয়ারম্যান তিন জেলেকে পিটিয়ে আহত করেন।’

মারধরের শিকার জেলে দেলোয়ার হোসেন সিকদার বলেন, ‘চাল কম দেওয়ার প্রতিবাদ করায় চেয়ারম্যান ইউপি ভবনের একটি রুমে আটকিয়ে আমাকে মেঝেতে ফেলে লাথি মারতে থাকেন।’

সাবেক ইউপি সদস্য সুলতান আহম্মদ সানু বলেন, চেয়ারম্যানের মামাতো ভাই খলিলুর রহমান ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালান। অথচ জেলে তালিকায় তাঁর নাম আছে। কয়েকজন জেলে চাল কম দেওয়ার প্রতিবাদ করলে চেয়ারম্যান ক্ষিপ্ত হয়ে তাঁদের মারধর করে আহত করেন।

ইউপি সচিব সামসুল হক প্রথম আলোকে বলেন, চেয়ারম্যানের মামাতো ভাই দুই বস্তা চাল চুরি করেছেন বলে জেলেরা তাঁকে জানান। এ সময় জেলেদের সঙ্গে খলিলের হট্টগোল বাধে। পরে চেয়ারম্যান জেলেদের রুমে ডেকে নিয়ে লাঠি দিয়ে পেটাতে থাকেন। তিনি বলেন, ‘আমি রাতে একজনকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে দিয়ে আসি।’

বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসা কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, মারধরে জেলে দেলোয়ারের পুরুষাঙ্গ ফুলে গেছে। এতে তাঁর প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া হচ্ছে। আল্ট্রাসনোগ্রাম করার পর জানান যাবে তাঁর কিডনিতে কোনো সমস্যা হয়েছে কি না।

এদিকে চেয়ারম্যান হুমায়ূন কবির জেলেদের মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করেন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘আমি কোনো জেলেকে মারধর করেনি। উপস্থিত জেলেদের মধ্যে মারামারি হয়েছে। পরে আমি তাঁদের মিলিয়ে দিয়েছি। প্রতিপক্ষরা আমার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ করেছেন। এসব অভিযোগ মিথ্যা।’

এ ব্যাপারে বরগুনা জেলে প্রশাসক কবীর মাহমুদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, চাল বিতরণে অনিয়ম ও জেলেদের মারধরের বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছেন।