ছাত্রলীগের বাধায় নুরুলের ইফতার রাস্তায়

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একটি ইফতার অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন ডাকসুর ভিপি নুরুল হক। ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ২৫ মে। ছবি: প্রথম আলো
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একটি ইফতার অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন ডাকসুর ভিপি নুরুল হক। ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ২৫ মে। ছবি: প্রথম আলো

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ইফতার অনুষ্ঠানে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সহসভাপতি (ভিপি) নুরুল হক।

শনিবার জেলা শহরের মসজিদ সড়কের গ্র্যান্ড এ মালেক চায়নিজ রেস্টুরেন্টে এই ঘটনা ঘটে। ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের বাধায় ইফতার অনুষ্ঠান পণ্ড হওয়ায় নুরুল হকসহ পরিষদের শিক্ষার্থীরা রাস্তায় ইফতার করেন। তবে ছাত্রলীগের ভাষ্য, ওই রেস্টুরেন্টে জামায়াত-শিবিরের বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। তাই সেখানে বাধা দেওয়া হয়েছে।

আয়োজকদের সূত্রে জানা গেছে, শনিবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের মসজিদ সড়কের গ্র্যান্ড এ মালেক চায়নিজ রেস্টুরেন্টে ইফতার মাহফিলের আয়োজন করেন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ব্রাহ্মণবাড়িয়া শাখার শিক্ষার্থীরা। এ জন্য তাঁরা রেস্টুরেন্ট কর্তৃপক্ষকে বিলও পরিশোধ করেন। তবে শনিবার বিকেলে জেলা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ইফতার অনুষ্ঠান বন্ধ, ভিপি নুরুল হক ও তাঁর সহযোগীদের প্রতিহত করার ঘোষণা দেয়। অন্যদিকে, ইফতার অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ভিপি নুরুল হক দুপুরে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী চট্টলা এক্সপ্রেস ট্রেনে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উদ্দেশে রওনা হন। কিন্তু অনুষ্ঠান ঘিরে উত্তেজনা দেখা দেওয়ায় সংশ্লিষ্ট ট্রেনটি আশুগঞ্জ উপজেলার তালশহর রেলওয়ে স্টেশনে বেলা সাড়ে তিনটা থেকে বিকেল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত আটকে রাখে পুলিশ। পুলিশ বলছে, উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলা করতেই তারা ট্রেনটি কিছুক্ষণ বিলম্ব করিয়েছিল।

আয়োজক সূত্র আরও জানায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যদের সহায়তায় সন্ধ্যা পৌনে ছয়টার দিকে ভিপি নুরুল হক গ্র্যান্ড এ মালেক রেস্টুরেন্টের সামনে যান। তবে সে সময় রেস্টুরেন্ট তালাবদ্ধ থাকায় আয়োজকদের নিয়ে তিনি রেস্টুরেন্টের সামনে রাস্তায় অবস্থান নেন। এ সময় ভিপি নুরুল হকের সঙ্গে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শাখার ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।

ডাকসুর ভিপি নুরুল হক সাংবাদিকদের বলেন, ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের ‘এমন উগ্র আচরণের’ বিষয়টি তিনি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, তাঁদের সঙ্গে যদি জামায়াত-শিবিরের সংশ্লিষ্টতা থাকত তাহলে প্রধানমন্ত্রী দাওয়াত দিয়ে গণভবনে নিতেন না। এ সময় নুরুল হক নিজের নিরাপত্তা নিয়েও শঙ্কা প্রকাশ করেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রবিউল হোসেন রুবেল বলেন, ওই রেস্টুরেন্টে জামায়াত–শিবিরের নেতা-কর্মীরা জড়ো হবে শুনে সেখানে বাধা দেওয়া হয়েছে। তবে ভিপি নুরুল হককে কোনো বাধা দেওয়া হয়নি। যদি বাধা দেওয়া হতো তাহলে তিনি সেখানে অবস্থান করতে পারতেন না।

সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ব্রাহ্মণবাড়িয়া শাখার আহ্বায়ক ও এই ইফতার অনুষ্ঠানের সমন্বয়ক আশরাফুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা ওই রেস্টুরেন্টে বুকিং দিয়েছিলেন। কিন্তু জেলা ছাত্রলীগের নেতৃত্বে তাঁদের হোটেল থেকে বের করে দেয়। ব্যানার-ফুল ছিঁড়ে ফেলে দেওয়া হয়। এরপর ছাত্রলীগ হোটেলে তালা দিয়ে রেলস্টেশনে গিয়ে নুরুলকে স্বাগত জানাতে অপেক্ষমাণ শিক্ষার্থীদের কয়েকজনকে মারধর করে। তিনি বলেন, ছাত্রলীগের অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা-ভিত্তিহীন। এই শিক্ষার্থীরা শুরু থেকেই কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে কোটাবিরোধী আন্দোলনে যুক্ত রয়েছেন।

গ্র্যান্ড এ মালেক চায়নিজ রেস্টুরেন্টের মালিক আবদুল মালেক বলেন, ছাত্রলীগ পরিচয়ে কয়েকজন ছেলে এসে ইফতার আয়োজকদের বের করে দিয়ে রেস্টুরেন্টে তালা লাগিয়ে দেয়।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেন, ডাকসুর ভিপি নুরুল হক ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আসেন। তাঁর সঙ্গে স্থানীয় কোনো ছেলে ছিল না। হবিগঞ্জ, সিলেটসহ বিভিন্ন জেলার ছেলেরা ছিল। পরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা তাঁকে তালশহর থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া নিয়ে আসেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। কোনো বিশৃঙ্খলা হয়নি।