চাষাঢ়ায় বসতে দেওয়া হচ্ছে না বিআরটিসির কাউন্টার

শহরের নবাব সলিমুল্লাহ সড়কে পরীক্ষামূলকভাবে বসানো বিআরটিসির কাউন্টারের সামনে অন্যান্য পরিবহনের বাস রেখে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া কাউন্টারটিও তালাবদ্ধ। নারায়ণগঞ্জ, ২৫ মে। ছবি: দিনার মাহমুদ
শহরের নবাব সলিমুল্লাহ সড়কে পরীক্ষামূলকভাবে বসানো বিআরটিসির কাউন্টারের সামনে অন্যান্য পরিবহনের বাস রেখে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া কাউন্টারটিও তালাবদ্ধ। নারায়ণগঞ্জ, ২৫ মে। ছবি: দিনার মাহমুদ

দুই বছর বন্ধ থাকার পর পুনরায় চালু হয়েছে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে বিআরটিসি এসি বাস। তবে অভিযোগ উঠেছে, নারায়ণগঞ্জ শহরের প্রাণকেন্দ্র চাষাঢ়ায় বসতে দেওয়া হচ্ছে না বিআরটিসি বাসের কাউন্টার। এ ঘটনায় বেসরকারি পরিবহন সিন্ডিকেটকে দায়ী করা হয়েছে।

স্থানীয় লোকজন সূত্রে জানা গেছে, গত শুক্র ও শনিবার চাষাঢ়ায় বিআরটিসি বাসের কোনো কাউন্টার বসাতে দেননি বেসরকারি পরিবহনমালিকেরা। ফলে বিআরটিসি বাসে চাষাঢ়া থেকে কোনো যাত্রী উঠতে পারছে না।

অন্যদিকে বিআরটিসির স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, চাষাঢ়া কাউন্টার বসাতে না পারলে রাজস্ব হারিয়ে লোকসানে পড়বে বিআরটিসি। এতে বাধ্য হয়েই ফের এই রুটে বিআরটিসি বাসসেবা বন্ধ করে দিতে হবে। তবে বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করে এখনো কোনো সুরাহা হয়নি বলে জানান তাঁরা।

গত শুক্রবার সন্ধ্যায় এবং শনিবার (২৫ মে) দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, নগরের চাষাঢ়া এলাকায় বিআরটিসি বাসের কোনো কাউন্টার নেই। শীতল পরিবহন ও হিমাচল পরিবহনের মাঝামাঝি বিআরটিসির কাউন্টারের জন্য ভাড়া করা জায়গাটিতে তিনজন যুবক বসে আছেন। ওই কাউন্টারের খোঁজ জানতে চাইলে তাঁরা বলেন, ‘চাষাঢ়ায় বিআরটিসির কোনো কাউন্টার নেই। ঢাকা যাইতে চাইলে ভালো এসি বাস আছে।’

তবে পরিচয় গোপনের শর্তে হিমাচল পরিবহনের একজন কর্মচারী বলেন, শুক্রবার দুপুরে কয়েকজন লোক এসে বিআরটিসির অস্থায়ী কাউন্টারটি ভেঙে দিয়েছে। এ ছাড়া নগরের খানপুর মেট্রো হলের মোড়ের বিআরটিসি বাস কাউন্টারের সামনে বিভিন্ন বেসরকারি পরিবহনের বাস রেখে কাউন্টার দখল করে রাখা হয়েছে।

শুক্রবার বিআরটিসির চাষাঢ়া কাউন্টারের দায়িত্বে ছিলেন প্রতিষ্ঠানটির নারায়ণগঞ্জ বাস ডিপোর কন্ট্রাক্টর মো. জোবায়ের। প্রথম অলোকে তিনি বলেন, দুপুর ১২টায় পরিবহন নেতা দিদারুল ইসলাম ও পরিবহন শ্রমিকনেতা জিলানী মাতবরের নেতৃত্বে ১৫ থেকে ২০ জন লোক এসে কাউন্টার বন্ধ করতে বলেন। তিনি কাউন্টার বন্ধে রাজি না হওয়ায় তাঁরা নিজেরাই কাউন্টারের ছাতা ও টেবিল ছুড়ে ফেলে দিয়ে সেখানে অবস্থান নেন। এরপর থেকে চাষাঢ়ায় বিআরটিসির কোনো বাস থামতে দেওয়া হয়নি।

বিআরটিসির কাউন্টার বন্ধ করে দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ মিনিবাস মালিক ঐক্যজোটের নেতা দিদারুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘শীতল, উৎসব ও বন্ধন পরিবহনের পরিচালক এবং পরিবহন শ্রমিকনেতারা মিলেই বিআরটিসির নতুন কাউন্টারটি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমরা মনে করি, এখানে কাউন্টার থাকলে সড়কে যানজটের সৃষ্টি হবে।’ তবে কাউন্টারের টেবিল ও ছাতা ছুড়ে ফেলার অভিযোগটি মিথ্যা বলে দাবি করেন তিনি।

এ প্রসঙ্গে বিআরটিসির নারায়ণগঞ্জ বাস ডিপোর ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী কামরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, বেসরকারি পরিবহনমালিকেরা জোর করে চাষাঢ়ায় বিআরটিসির বাস কাউন্টার বন্ধ করে দিয়েছেন। তাঁরা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। কিন্তু এখনো কোনো সুরাহা হয়নি। তিনি বলেন, এই রুটে বেশি যাত্রী চাষাঢ়া থেকে ওঠে। কিন্তু চাষাঢ়ায় যদি কাউন্টার বসাতে না দেয়, তাহলে রাজস্ব হারিয়ে লোকসানের পড়বে বিআরটিসি। এতে আবারও এ রুটে বিআরটিসি বাসসেবা বন্ধ করে দিতে হবে।

এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান বলেন, ‘একজন সাংসদ নিজেই গাড়ির মালিক। উনি চান না এখানে বিআরটিসি চলুক। তাঁর নির্দেশেই পরিবহন সিন্ডিকেট বিআরটিসির কাউন্টার বন্ধ করেছে। কাউন্টার বন্ধ করে দেওয়াটা হলো নারায়ণগঞ্জে বিআরটিসি বাস পুনরায় বন্ধ করে দেওয়ার প্রাথমিক ধাপ।’

এদিকে এ ঘটনায় যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ ফোরাম উদ্বেগ প্রকাশ করে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, তিন দিন আগে বিআরটিসি এসি বাস পুনরায় চালু করলেও পরিবহন সিন্ডিকেটের আক্রমণের শিকার হচ্ছে। নারায়ণগঞ্জের জনগণকে জিম্মি করে একটি গোষ্ঠী বিআরটিসি বাস চলাচলে বাধা তৈরি করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। তারা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানান।

জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিআরটিসি বাসের কাউন্টার অবশ্যই বসবে। আমরা কাউন্টার বসাতে উদ্যোগ নেব।’


২০১১ সালে যাত্রীদের আন্দোলনের মুখে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে বিআরটিসি এসি-নন এসি বাস চালু করা হয়। দুই বছর আগে আওয়ামী লীগের সাংসদ শামীম ওসমানের মালিকানাধীন জেড এন করপোরেশনের ‘শীতল এসি বাস সার্ভিস’ চালুর এক সপ্তাহের মধ্যে এ রুট থেকে এসি বাস তুলে নেয় বিআরটিসি। গত দুই বছর বন্ধ থাকার পর ২২ মে ঢাকার গুলিস্তান স্টেডিয়াম মার্কেট এলাকায় ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে বিআরটিসি এসি বাস উদ্বোধন করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। ঘোষণা অনুযায়ী, এই বাস নগরের মণ্ডলপাড়া, চাষাঢ়া হয়ে রাজধানীতে যাতায়াত করবে।