ট্রেনের টিকিট কাটার 'সেবা' অ্যাপের বেহাল দশা

ঈদুল ফিতরের ছুটিতে বাড়ি ফেরার অগ্রিম টিকিট পেতে গতকাল কমলাপুর রেলস্টেশনে ছিল মানুষের উপচে পড়া ভিড়।  ছবি: সাজিদ হোসেন
ঈদুল ফিতরের ছুটিতে বাড়ি ফেরার অগ্রিম টিকিট পেতে গতকাল কমলাপুর রেলস্টেশনে ছিল মানুষের উপচে পড়া ভিড়। ছবি: সাজিদ হোসেন

অনলাইন ও অ্যাপে টিকিট পাওয়া যাচ্ছে না, একজন গ্রাহকের এমন অভিযোগের মুখে রেলের অনলাইন পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান সিএনএস লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক নিজেই চেষ্টা করলেন টিকিট কাটার। গ্রাহকের সামনেই অ্যাপে লগ ইন করলেন। গন্তব্য নির্ধারণের পর আর আগাতে পারলেন না। পর্দায় ভেসে ওঠে ‘সার্ভার নট ফাউন্ড’। এই হলো রেলের টিকেট কাটার মোবাইল অ্যাপ ‘সেবা’র হাল।

১০ মিনিটের চেষ্টার পর বিব্রত নির্বাহী পরিচালক জিয়াউল আহসান নিজেই বললেন, ‘আমার মতো আরও দুই লাখ লোক ট্রাই করছেন। আমি অনেকটাই এগিয়ে গেছি, পেমেন্ট অপশনের জন্য অপেক্ষা করছি।’

গতকাল শনিবার এ ঘটনা ঘটল কমলাপুর স্টেশনের অগ্রিম টিকিট বিক্রির কাউন্টারের সামনে। টিকিটপ্রত্যাশীদের অনলাইনে টিকিট না পাওয়ার অভিযোগের ভিত্তিতে নিজেদের অবস্থান জানাতে সেখানে এলইডি পর্দার ব্যবস্থা করেছে সিএনএস। তাতে দেখানো হচ্ছিল, অনলাইন ও অ্যাপ ব্যবহার করে কতজন কোন কোন ট্রেনের টিকিট কিনেছেন। এর সামনে দাঁড়িয়েই অ্যাপে টিকিট কেনার চেষ্টা করছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী আনোয়ার হোসেন। অ্যাপে লগ ইন করতে গিয়ে কাজ না হওয়ায় আনোয়ার গেলেন পাশেই দাঁড়ানো সিএনএসের নির্বাহী পরিচালক জিয়াউল আহসানের কাছে। এ সময় অ্যাপে টিকিট না পাওয়ার অভিযোগ করতে গেলেই ওই ঘটনা ঘটে।

আনোয়ার বলেন, ‘অনলাইনে টিকিট বিক্রি শুরু হয় সকাল নয়টা থেকে। কাউন্টারের সামনে লাইনে দাঁড়িয়েও দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত চেষ্টা করেছি। অ্যাপে সব ঠিক থাকলে সাড়ে তিন ঘণ্টা ধরে চেষ্টা করে একবারও সফল হব না, এটা তো অবিশ্বাস্য।’

ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রির চতুর্থ দিনে গতকাল শনিবার বিক্রি হয়েছে ৩ জুনের টিকিট। ৫ জুন ঈদ ধরে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ঈদের ছুটি শুরু হবে এক দিন আগে থেকে। এই দিনের টিকিট পেতে গতকাল তাই কমলাপুরে ছিল জনস্রোত। সঙ্গে ভোগান্তিও ছিল অন্য দিনের চেয়ে বেশি। ভোর রাতের বৃষ্টিতে পানি জমে কাউন্টারের সামনে। টিকিটও বিক্রি হয়েছে ধীরগতিতে। নারীদের লাইনে পরিচিতদের সামনে দাঁড় করিয়ে দেওয়ারও অভিযোগ ওঠে দায়িত্বরত রেলওয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে।

ইরিনা রহমান নামের এক টিকিটপ্রত্যাশী বলেন, ‘ভোর থেকে কষ্ট করে দাঁড়িয়ে আছি। আর পুলিশের লোকজন তাঁদের আত্মীয়দের লাইনের সামনে এনে দাঁড় করাচ্ছেন। পুলিশও যদি এমন করে তাইলে কই যাব।’

৩ জুনের লালমনি ঈদ স্পেশাল ট্রেনের টিকিট কিনতে শুক্রবার রাত সাতটায় কমলাপুরে এসেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়শিক্ষার্থী শাহিন মিয়া। বেলা একটায় তাঁর সামনে ছিলেন আরও ১০ জন। শাহিন বলেন, ‘রাতভর লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার পর সকাল নয়টায় যখন টিকিট বিক্রি শুরু হয়, তখন আমার সামনে ছিলেন ১৪৬ জন। ঘণ্টাখানেক পরই শুনি স্পেশাল ট্রেনের টিকিট শেষ। বিষয়টা সন্দেহজনক। কারণ, এত বড় ট্রেনে ১৪৬ জনেরও কি জায়গা হবে না!’

>চতুর্থ দিনেও অনলাইনে টিকিট না পাওয়ার অভিযোগ। অনলাইনে অবিক্রীত টিকিট পাওয়া যাবে ঈদ যাত্রার সময় পর্যন্ত।

গৃহিণী শাহনাজ পারভীন যাবেন রাজশাহী। তিনি বলছিলেন, ‘ঢাকা থেকে বাসায় যেতে সময় লাগবে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা। আর একটা টিকিট পেতে সকাল ছয়টা থেকে দাঁড়িয়ে আছি। বৃষ্টিতে ছাদ চুইয়ে পড়া পানিতে ভিজলাম। এত কষ্টের পরও প্রত্যাশিত টিকিট পাব কি না জানি না।’

টিকিটপ্রত্যাশীদের অভিযোগের বিষয়ে জানতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে বাংলাদেশ রেলওয়ের স্টেশন ব্যবস্থাপক আমিনুল হক ফোন ধরেননি।

চারটি বিশেষ ট্রেনসহ ঢাকার পাঁচটি জায়গায় গতকাল বিক্রি হয়েছে ২৮ হাজার ২২৪ টিকিট। প্রথম তিন দিন ফুলবাড়িয়ায় (পুরোনো রেল ভবন) কাউন্টার ফাঁকা থাকলেও গতকাল ভিড় ছিল সকালের দিকে। আজ রোববার বিক্রি হবে ৪ জুনের টিকিট। ফিরতি টিকিট বিক্রি শুরু হবে ২৯ মে থেকে।

এদিকে সিএনএস দাবি করেছে, গতকাল পর্যন্ত অনলাইন ও অ্যাপে বিক্রি হয়েছে ৩৪ হাজার ৬৯৫টি টিকিট। অবিক্রীত আছে ৯ হাজার ৩০৫টি। আর প্রথম তিন দিনে কমলাপুর কাউন্টারে ৩১ হাজার ৪৩২ টিকিট বিক্রি হয়েছে। প্রতিদিন এই কাউন্টারে বিক্রি হয় ১৪ হাজার ৯৫টি টিকিট। কাউন্টারের ১০ হাজার ৮৫৩ ও অনলাইনের অবিক্রীত টিকিট প্রসঙ্গে সন্ধ্যায় সিএনএস লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক জিয়াউল আহসান বলেন, অনলাইনে ঈদযাত্রার দিন পর্যন্ত টিকিট পাওয়া যাবে। আর কাউন্টারে টিকিট পাওয়া যাবে ২৭ মে থেকে।