গাইবান্ধায় শসা চাষে বাজিমাত চাষির

গাইবান্ধার সাদুল্যাপুর উপজেলার উত্তর হাটবামুনি গ্রামের কৃষক আমিনুল ইসলাম শসা চাষ করে তিন গুণ লাভ পেয়েছেন। পরিকল্পিতভাবে চাষ ও খেতের পরিচর্যা করলে ধানের চেয়ে শসার বেশি ফলন পাওয়া যায়। শুধু আমিনুল নন, শসা চাষ করে সহস্রাধিক কৃষক লাভবান হয়েছেন।

কৃষক আমিনুল ইসলাম বললেন, ‘পৈতৃকসূত্রে ১৮ শতক জমি পেয়েছি। এই পরিমাণ জমিতে প্রতিবছর বোরো ধানের চাষ করতাম। এই জমিতে বোরো চাষে উৎপাদন খরচ পড়ে পাঁচ হাজার টাকা। ধান উৎপন্ন হতো ১২ মণ। প্রতি মণ ৬০০ টাকা হিসাবে ধানের মূল্য দাঁড়ায় ৭ হাজার ২০০ টাকা। উৎপাদন খরচ বাদে আয় হতো ২ হাজার ২০০ টাকা। পক্ষান্তরে ওই ১৮ শতক জমিতে শসা চাষ করি কৃষি কর্মকর্তা শাহজাহান মিয়ার পরামর্শে। গত দুই মাসে ৯৫ হাজার টাকার শসা বিক্রি করেছি। আরও ২৫ হাজার টাকার শসা বিক্রি করতে পারব বলে আশা করছি। শসা উৎপাদনে খরচ হয়েছে প্রায় ২০ হাজার টাকা। অর্থাৎ উৎপাদন খরচ বাদে আড়াই মাসে আয় হয় এক লাখ টাকা। অথচ একই জমিতে বোরো চাষে চার মাসে আয় হয় ২ হাজার ২০০ টাকা।’ তিনি আরও বলেন, ধানের চেয়ে শসা চাষে লাভ বেশি। দুই থেকে আড়াই মাসে ফলন পাওয়া যায়। পাশাপাশি শসার সঙ্গে সাথি ফসল হিসেবে করলার চাষ করা হয়েছে। শসার পর করলা থেকেও আয় হবে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্র জানায়, গাইবান্ধার ৭টি উপজেলায় ১ হাজার ৭৬৩ বিঘা জমিতে শসা চাষ হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৭৫ বিঘা, সাদুল্যাপুরে ৩৭৫ বিঘা, পলাশবাড়ীতে ১৮৮ বিঘা, গোবিন্দগঞ্জে ৫২৫ বিঘা, সুন্দরগঞ্জে ৩৭৫ বিঘা, সাঘাটায় ১৫০ বিঘা এবং ফুলছড়িতে ৭৫ বিঘায় এই ফসল চাষ হয়।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ সূত্রে জানা গেছে, বোরো ধান রোপণের উপযুক্ত সময় ১৫ ডিসেম্বর থেকে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত। চার মাস পর খেত থেকে পাকা ধান কাটা যায়। ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত শসা লাগানোর উপযুক্ত সময় । আড়াই মাসে শসা তোলা যায়।

কৃষক আমিনের মতো শসা চাষ করে লাভবান হয়েছেন উত্তর হাটবামুনি গ্রামের আরেক কৃষক মোমিনুল ইসলাম (৪২)। তিনি এক বিঘা জমিতে শসা চাষ করেছেন। উৎপাদন খরচ হয়েছে ৪২ হাজার টাকা। আড়াই মাসে শসা বিক্রি করেছেন ১ লাখ ২৫ হাজার টাকার। মোমিনুল ইসলাম বলেন, ‘শসা চাষ করে অল্প সময়ে বেশি লাভ করা যায়। তাই আগামী বছর দুই বিঘা জমিতে শসা চাষ করব।’

কামারপাড়া ইউনিয়নের মধ্য হাটবামুনি গ্রামের কৃষক মো. আঙ্গুর মিয়া (৪৫) বলেন, ‘এ বছর ৩০ শতক জমিতে শসা চাষ করেছি। উৎপাদন খরচ হয়েছে ৪০ হাজার টাকা। আড়াই মাসে শসা বিক্রি করেছি ১ লাখ ২০ হাজার টাকার। আরও ১০ হাজার টাকার শসা বিক্রি করতে পারব।’

এসব কৃষককে শসা চাষে উদ্বুদ্ধ করেন সাদুল্যাপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা শাহজাহান মিয়া। তিনি বলেন, প্রথমে কৃষকেরা শসা চাষে আগ্রহী ছিলেন না। এক কৃষকের সাফল্য দেখে অনেক কৃষক শসা চাষে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন।

শুধু সাদুল্যাপুরেই নয়, শসা চাষে লাভবান হয়েছেন সুন্দরগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ ধোপাডাঙ্গা গ্রামের বকুল মিয়া। তিনি বলেন, ‘গত বছর ১২ শতক জমিতে শসা চাষ করেছিলাম। লাভ করেছি ৪০ হাজার টাকা। তাই এ বছর ৩২ শতক জমিতে শসা চাষ করেছি। বর্তমান বাজারে শসা কেজি ২৫ টাকায় বেচাকেনা হচ্ছে। এ বছর ১ লাখ ৮০ হাজার টাকার শসা বিক্রি করেছি।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক এস এম ফেরদৌস বলেন, শসা চাষ বেশ লাভজনক ফসল। কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদের নানাভাবে সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। বিশেষত শসা এমন একটা ফসল, যা সরাসরি জমি থেকে তুলে খাওয়া যায়। তাই শসা চাষের সময় কৃষকেরা যাতে জমিতে কীটনাশক ব্যবহার না করেন, সে জন্য তাঁদের পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।