নাটক সাজিয়ে লাউয়াছড়া উদ্যানের গাছ চুরি করা হয়!

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার লাউয়াছড়া উদ্যানে গাছ চুরির ঘটনাটি পরিকল্পিত ছিল বলে অভিযোগ উঠেছে। বনকর্মী ও কমিউনিটি পেট্রলিং গ্রুপের (সিপিজি) সদস্যদের যোগসাজশে বনকর্মীদের আটক রাখার নাটক সাজিয়ে গাছ চুরি করা হয় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

গত এপ্রিল মাসে ১০ দিনের ব্যবধানে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান থেকে দুটি আগরগাছ কেটে চুরি করা হয়। এরপর সম্প্রতি বনকর্মীদের আটকে রেখে আগরগাছ চুরির মতো ঘটনা ঘটেছিল। এ ঘটনার পর বনকর্মী ও সিপিজির সদস্যদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদে ও মারধরের ঘটনায় পরিকল্পিতভাবে আগরগাছ চুরির তথ্য ফাঁস হয়ে গেছে। এ ঘটনায় সিপিজির চার সদস্যকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেছে বন বিভাগ।


কমলগঞ্জের বাঘমারা বন ক্যাম্পের বনকর্মীদের ঘরে আটকে গত বৃহস্পতিবার (১৬ মে) একটি আগরগাছ কেটে খণ্ডাংশ করে নিয়ে গিয়েছিল চোর চক্র। পরদিন শুক্রবার প্রথম আলোয় ‘এবার বনকর্মীদের আটকে রেখে আগর গাছ চুরি’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশ হয়েছিল।

প্রথম আলোয় সংবাদ প্রকাশের পর মৌলভীবাজারের বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ আগরগাছ চুরির তথ্য উদ্‌ঘাটনে জোর তৎপরতা শুরু করে। এ সময় ঘটনার রাতে বাঘমারা বন ক্যাম্পে আটক থাকা কর্মী মোক্তার মিয়ার সঙ্গে সিপিজির সদস্য মহসিন মিয়া ও সুফি মিয়ার বিরোধ সৃষ্টি হয়। এ বিরোধের একপর্যায়ে সুফি মিয়া বনকর্মী মোক্তার মিয়াকে মারধর করেন। এ ঘটনার পর বেরিয়ে আসে আগরগাছ চুরির মূল তথ্য।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বনকর্মী জানান, সিপিজির সদস্য সুফি মিয়ার ভাই আলাল মিয়া এ আগরগাছ চুরির সঙ্গে যুক্ত। বনকর্মী মোক্তার মিয়া ও সিপিজির সদস্য মহসিন মিয়ার সঙ্গে আগরগাছচোরদের মুঠোফোনে একাধিকবার কথা হয়েছে। এ কথোপকথনের অডিও রেকর্ড পাওয়া গেছে।

ফাঁস হওয়া তথ্যে জানা যায়, এর আগে ১০ দিনে লাউয়াছড়া বন বিশ্রামাগারের সামনে এবং রেলপথের পাশ থেকে যে দুটি আগরগাছ চুরি হয়েছিল, তার সঙ্গে অসাধু বনকর্মী ও সিপিজির সদস্যদের একটি অংশ জড়িত ছিল। গত বুধবার লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান সহব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় এসব তথ্য প্রকাশ পায়। এ সভায় মুঠোফোনের অডিও রেকর্ড জব্দ করা হয়েছে। বনকর্মী মোক্তার মিয়াকে মারধর করার ঘটনায় সিপিজির চার সদস্য মহসিন মিয়া, সুফি মিয়া, সেলিম মিয়া ও জহির মিয়াকে ব্যবস্থাপনা কমিটি সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেছে।

বরখাস্ত হওয়া সিপিজির সদস্য মহসিন মিয়া বলেন, জাতীয় উদ্যানের বেত নিয়ে বনকর্মী মোক্তার মিয়ার সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডার একপর্যায়ে সুফি মিয়া মোক্তার মিয়াকে প্রহার করেছিলেন। এ ঘটনায় তাঁদের চারজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সিপিজি সদস্য বলেন, এ বনের গাছচোরদের সঙ্গে অনেক বনকর্মীর সখ্য রয়েছে।

মৌলভীবাজারের বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক মো. আনিসুর রহমান বলেন, বাঘমারা বন ক্যাম্প এলাকা থেকে সম্প্রতি চুরি হওয়া আগরগাছ নিয়ে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বের হয়েছে। এ মুহূর্তে তা প্রকাশ করা যাচ্ছে না। তবে আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে সহব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এতে বনকর্মী বা সিপিজির সদস্য জড়িত থাকলে তাঁদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।