নান্দাইলে কলেজছাত্র খুন

হত্যা
হত্যা

ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলায় এক কলেজছাত্রের ক্ষতবিক্ষত লাশ বালিপাড়া সেতুর নিচ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। পরিবারের অভিযোগ, মুঠোফোন চুরি ও বালুমহাল নিয়ে দ্বন্দ্বের জের ধরে হত্যার এ ঘটনা ঘটেছে।


গতকাল শনিবার মধ্যরাতে নান্দাইল ও ত্রিশাল উপজেলাকে সংযুক্ত করা বালিপাড়া সেতুর নিচ থেকে কলেজছাত্রের লাশ উদ্ধার করা হয়।

নিহত ছাত্রের নাম মো. তারিফ হাসান (১৮)। তিনি উপজেলার চরবেতাগৈর ইউনিয়নের চরভেলামারী গ্রামের মৃত মজিবুর রহমানের ছেলে। তারিফ স্থানীয় খুররম খান চৌধুরী কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র ছিলেন।

নিহত তারিফের পরিবারের সদস্যরা বলছেন, পরিচিত কেউ তারিফকে সেতুর নিচে ডেকে নিয়ে গিয়েছিল। তা না হলে রাতের বেলা সেখানে তাঁর যাওয়ার কথা নয়।

পুলিশ আজ রোববার সকালে তারিফের মরদেহ ২৫০ শয্যার কিশোরগঞ্জ আধুনিক সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে। এ ঘটনায় তারিফের বড় ভাই মো. মাজহারুল ইসলাম ওরফে পারভেজ বাদী হয়ে নান্দাইল মডেল থানায় হত্যা মামলা করেছেন।

আজ বেলা সাড়ে ১১টায় থানা ভবনে গিয়ে দেখা যায়, একটি কক্ষে বসে মামলার এজাহার লেখক কনস্টেবল মো. কমর উদ্দিনের কাছে ঘটনার বিবরণ দিচ্ছিলেন বড় ভাই মাজহারুল ইসলাম। এ সময় সেখানে তাঁর সঙ্গে অন্য স্বজনরাও উপস্থিত ছিলেন।

মাজহারুল প্রথম আলোকে বলেন, ব্রহ্মপুত্র নদের বালুমহালের ইজারা ডাক নিয়ে তাঁর সঙ্গে একই এলাকার বাচ্চু মেম্বারের বিরোধ দেখা দেয়। গত বছর বালুমহালের ইজারা ডাক ছিল ১৭ লাখ টাকার মতো। চলতি বছরে তিনি অংশ নিলে ইজারা ডাক ৩০ লাখ টাকা ছাড়িয়ে যায়। ফলে, বাচ্চু মেম্বারকে বেশি টাকা দিয়ে মহাল ইজারা নিতে হয়। এ কারণে বাচ্চু মেম্বার ও তাঁর সহযোগীরা তাঁর ওপর চরম ক্ষুব্ধ ছিলেন। এ ছাড়া তাঁর ছোট ভাই তারিফ হাসানের একটি স্মার্টফোন বাড়ি থেকে চুরি হয়। চুরির চার মাস পর এক মেয়ে তারিফকে ময়মনসিংহে ডেকে নিয়ে ফোনটি ফেরত দেন। তারিফ ওই মেয়ের কাছ থেকে জানতে পারেন, ফোনটি তাঁকে (মেয়েকে) দিয়েছিলেন মো. ইলিয়াছ (১৯)। ইলিয়াছ হচ্ছেন তাঁদের প্রতিবেশী চাচাতো ভাই। তিনি চাপে পড়ে ফোন চুরির কথা স্বীকার করতে বাধ্য হন। চুরির ঘটনায় তারিফের পরিবারকে ১১ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ছিল ইলিয়াছের। ফোন চুরির ঘটনা নিয়ে দুই পরিবারের মধ্যে চরম দ্বন্দ্ব দেখা দেয়।

মাজহারুল ইসলাম তাঁর ছোট ভাই খুন হওয়ার পেছনে এই দুটি ঘটনাকে কারণ বলে মনে করছেন।

এদিকে হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ আজ বাচ্চু মেম্বারের ভাতিজা বাবুল মিয়াকে (২৫) গ্রেপ্তার করেছে। বাবুল মিয়া বোরকা পরে গ্রাম থেকে পালানোর চেষ্টা করছিলেন। এ ছাড়া শাহীন (২২) নামের আরেকজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শাহীনের বাড়ি সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলায়। শাহীন ইলিয়াছের পরিচিত। নিহত ছাত্রের পরিবারের সদস্যরা ধারণা করছেন, তারিফ হাসানকে খুন করার জন্য শাহীনকে ভাড়া করে চরভেলামারী গ্রামে আনা হয়েছে।

নান্দাইল মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.কামরুল ইসলাম মিয়া জানান, হত্যার ঘটনাটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। সন্দেহভাজন খুনিদের ধরার জন্য পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে।